ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-বাংলাদেশ ধ্বনিতে প্রকম্পিত ওভাল

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২ জুন ২০১৭

বাংলাদেশ-বাংলাদেশ ধ্বনিতে প্রকম্পিত ওভাল

স্পোর্টস রিপোর্টার লন্ডন থেকে ॥ ‘জয় বাংলা/ বাংলার জয়/হবে হবে হবে/হবে নিশ্চয়...।’ ওভাল আন্ডারগ্রাউন্ড রেলস্টেশন থেকে বের হতেই এই গান শোনা যাচ্ছে। ওভাল স্টেডিয়াম থেকে ওভাল আন্ডারগ্রাউন্ড রেলস্টেশনে পথ হাঁটাদূরত্ব। চার মিনিটের পথ। বাংলাদেশের গান শুনেই বোঝা গেছে, বাংলাদেশিদের ভিড় লেগেছে। স্টেডিয়ামের গেটের সামনে যেতে তো চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা হয়ে গেছে। শুধু গান নয়, গানের সঙ্গে চলছে দেশি নৃত্যও! একঝাক তরুণ-তরুণী সাউন্ডবক্স থেকে বের হওয়া গানের তালে তাল মিলিয়ে নাচছে। নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরছে। ওভালে যেন এক টুকরো বাংলাদেশেরই দেখা মিলে গেল। আর খেলা চলাকালেতো ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ ধ্বনিই শুধু শোনা গেছে। ওভাল স্টেডিয়ামে ঢুকতেই চোখে পড়ল এক গ্রুপ প্রবাসী বাঙালী ব্যান্ড দল। তাদের কাজ হচ্ছে খেলা শুরুর আগে স্টেডিয়ামের গেটের বাইরে ঢোল-বাদক নিয়ে সবাইকে বিনোদন দেয়া। সেটি আবার বাংলাদেশের গানগুলো বাজিয়ে। সঙ্গে সাউন্ড সিস্টেমে বেজে চলেছে বাংলাদেশের গান। ‘এসো বাংলাকে ভালবাসি’, ‘জ্বলে ওঠো বাংলাদেশ’, ‘শাবাশ বাংলাদেশ’, ‘আমার দেশের মতো এমন দেশ কি কোথাও আছে’, ‘হৃদয়ে আমার বাংলাদেশ’-এই সব গান বাজছে। এ ব্যান্ড দলটি হচ্ছে ফ্রিল্যান্স গ্রুপ। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, খেলাধুলায় চুক্তিভিত্তিক এ রকম বিনোদন দিয়ে থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কোন কিছু হলে তাদেরকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়। যেমন ওভালে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড খেলাতেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ব্যান্ড দলটি খেলা শুরুর আগ পর্যন্ত মাঠের বাইরে বাংলাদেশের গানগুলো বাজিয়েছে। তাদের সঙ্গে থাকা তরুণ-তরুণীরা নাচের মাধ্যমে দেশী সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। খেলা শুরু হওয়ার পর স্টেডিয়ামের ভেতরও তারা একই কাজ করেছে। এই ব্যান্ডের কো অর্ডিনেটরের নাম হচ্ছে সুমন। তিনি বললেন, ‘ভাই যখনই, ইংল্যান্ডের যেখানেই বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা থাকে, কোন খেলা, অনুষ্ঠান হয়; তখনই আমরা থাকি। আমাদের আমন্ত্রণ করা হয়। চুক্তিভিত্তিক আমরা বাংলাদেশের গানগুলো বাজাই। সংস্কৃতি নাচের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করি। যেন সবাই বাংলাদেশকে চেনে।’ উদ্যোগটা ভাল। এমন উদ্যোগের জন্যই তারা সুযোগও পান। সুযোগ পেয়ে নিজেদের সংস্কৃতি তুলেও ধরেন। শুধু তাই নয়, সুমন জানালেন, ‘এই যে এখানে খেলা হবে। আমরা এমন গানগুলো বাজাই যেন দর্শকরাও মাঠে ঢোকার আগে উদ্দীপনা নিয়ে ঢুকে। তারা যেন ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে পুরো ম্যাচ জুড়ে চিৎকার করার উত্তেজনা পায়, সেই চেষ্টাই করি।’ ১৫ বছর ধরে সুমন এখানে আছেন। এরকম অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি আছে, যারা এই ম্যাচ দেখতে আসেন। খেলা শুরু দুই ঘণ্টা আগে থেকেই তারা স্টেডিয়ামের গেটে এসে দাঁড়ান। খেলা দেখার আগে তাদের লক্ষ্য, ক্রিকেটারদের দেখা। ক্রিকেটাররা যেই বাস থেকে নেমেছেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা সেই কী চিৎকার করতে থাকেন। ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে আওয়াজ তুলতে থাকেন। তাদের এমন আওয়াজে, ধ্বনিতে যেন ওভাল স্টেডিয়ামও কেঁপে উঠতে চেয়েছে। এমনই অবস্থা হয়েছে, মাঠেও এর প্রভাব দেখা গেছে। যখনই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা রান নিয়েছেন, বাংলাদেশী দর্শকরা দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছেন। ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে চিৎকার করে গেছেন। সমর্থন দিয়ে গেছেন। ব্যাটসম্যানদের সাহস জুগিয়ে গেছেন। পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে দর্শক ছিল। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচ। আবার স্বাগতিক ইংল্যান্ড খেলছে। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। তবে ইংলিশদের যতটানা আলোড়ন দেখা গেছে, তারচেয়ে বেশি বাংলাদেশী সমর্থকদের আওয়াজ শোনা গেছে। সংখ্যাতেও যে বাংলাদেশী দর্শকই বেশি ছিল। অবশ্য বাংলাদেশেরই একজন এখন ইংল্যান্ডে বসবাস করেন, ড্রেসিংরুমের সামনের গ্যালারিতে বসে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ রব তুলে গেছেন। তিনি মাহবুবা নাজনিন জেবিন। দুইবছরের ছেলেসহ খেলা দেখতে এসেছেন। মা’র চিৎকার দেখে, ছেলেও ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলছে। তিনি জানালেন, ‘বাংলাদেশী দর্শকদের আওয়াজ বেশি শোনা যাচ্ছে। কারণ, ইংলিশরা আসলে এত বেশি চিৎকার করে না। তারা চুপচাপ খেলা দেখে। তবে এটা সত্য। এই ম্যাচটিতে বাংলাদেশি সমর্থক বেশি।’ বাংলাদেশ জিতুক। এটা শুধু বাংলাদেশ থেকে আসা দর্শক কিংবা প্রবাসী বাংলাদেশী দর্শকরাই নন, তা চান ইংলিশরাও। তা না হলে কী আর স্টেডিয়ামের গেটে ঢুকতে নিরাপত্তাকর্মী ব্যাগ তল্লাশি এবং শরীর স্ক্যান করার পর বলতেন, ‘মনে হচ্ছে বাংলাদেশই জিতবে।’ স্টেডিয়াম পুরো ভরা ছিল। যারা টিকেট না পাননি তারা স্টেডিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুরোটা সময়। তারা ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে পুরো ম্যাচজুড়ে চিৎকার করে গেছেন। স্টেডিয়ামের ভেতরে এবং বাইরের ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ চিৎকারে যেন ওভাল হয়ে উঠেছিল এক টুকরো বাংলাদেশ।
×