ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তামিমময় বাংলাদেশের লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২ জুন ২০১৭

তামিমময় বাংলাদেশের লড়াই

ইংল্যান্ডে বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবালের সুখস্মৃতি রয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে লর্ডসে সেঞ্চুরি করেছেন। তাতে ‘অনার্স বোর্ডে’ও নিজের নাম লিখিয়েছিলেন ২০১০ সালে। ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম সেঞ্চুরি ছিল সেটি। সেটি টেস্টে ছিল। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নেমেও সেঞ্চুরি করে দেখালেন তামিম। এটি ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আবার প্রথম সেঞ্চুরি। ওভালেও যেন তামিম ঝড়ই দেখা গেল। ১৪২ বলে ১২ চার ও ৩ ছক্কায় ১২৮ রান করে আউট হন তামিম। এ সেঞ্চুরি তামিমকে অনন্য উচ্চতাতেও নিয়ে গেল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ও ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে দেখালেন তামিম। ৩৯তম ওভারের শেষ বল ছিল। তামিম ৯৯ রান করে ফেলেন। সেঞ্চুরি হতে আর এক রান দরকার। মঈন আলীর ছোড়া বলটি স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়েই এক রান নিলেন তামিম। সেঞ্চুরি হয়ে গেল। যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি তামিমেরই। তা আগেই ছিল। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওভালে সেঞ্চুরিটি করে নিজেকে আরও অনেক উঁচুতে নিয়ে গেলেন। যেন সেঞ্চুরির দিক দিয়ে তার ধারেকাছে কেউ না থাকে, সেই পথেই এগিয়ে চলেছেন। সাকিব আল হাসান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬টি ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেছেন। তামিম তারচেয়েও ৩টি সেঞ্চুরি বেশি নিজের ভা-ারে জমা করে ফেললেন। আর রানের দিক দিয়ে তো পাঁচ হাজার পাঁচ শ’ রানের (৫৫৭৮) বেশি করে ফেললেন। তার এ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশও বড় সংগ্রহই গড়ল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এর আগেও সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম। তবে সেটি ২০১০ সালে বাংলাদেশের মাটিতে ছিল। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করলেন তামিম। এবার ইংল্যান্ডের মাটিতে করলেন। ইংল্যান্ডকে কাঁপালেন। যখন তামিম সেঞ্চুরি করার মুহূর্তে রান নিচ্ছেন, তখন প্রায় ২৪ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে আগত দর্শকরা সবাই দাঁড়িয়ে হাততালি দেন। দুর্দান্ত একটি ইনিংস যে খেলেন। শুরুতে সৌম্য সরকারের সঙ্গে ৫৬ রানের ওপেনিং জুটি। এরপর ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ৩৯ রানের জুটি গড়েন। দুই জনই আউট হয়ে গেলেও তামিম ঠিকই উইকেট আঁকড়ে থাকেন। মুশফিকুর রহীমকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। এ দুইজনের জুটিটি এমনভাবেই টিকে যায়, ১৬৬ রানের জুটি হয়ে যায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি এখন এটিই। তামিম শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন। বুঝে খেলতে থাকেন। কোন তাড়াহুড়ো করেন না। প্রথম ১৭ বলেতো মাত্র ৩ রান করেন। এরপর ধীরে ধীরে একটু আধটু বাউন্ডারি হাঁকানো শুরু করতে থাকেন। প্রথম ওভারে তো তামিম মেডেন দেন! ৯ বলে কোন রান নেননি! ২১তম বলে গিয়ে প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান। তখনই সবাই বলাবলি করে, তামিম যেদিনই এ রকম খেলেন; কিছু একটা করে দেখান। তাই হলো। সেঞ্চুরি করে দেখালেন। নিজের ৭১তম বলে গিয়ে প্লানকেটকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি হাকিয়ে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তামিম। এর পরই যেন তামিম বিধ্বংসী রূপে ধরা দেন। একের পর এক ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। ১২৪ বলে গিয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করেন। দলের ২৬১ রানে গিয়ে তামিম আউট হয়ে যান। প্লানকেটের শট বলটি পুল করতে যান। বলটি ব্যাটে লেগে শূন্যে উড়ে যায়। স্কয়ার লেগের কাছে চলে যায়। জস বাটলার ক্যাচ ধরেন। তামিমের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। ওভালে এর আগে শুধু ইংল্যান্ডের মার্ক ট্রেসকোথিকই ৩টি সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন। এছাড়া সবাই এ ম্যাচটির আগে পর্যন্ত একটির বেশি সেঞ্চুরি করতে পারেননি। তামিমও সেই এক সেঞ্চুরি করাদের তালিকাতে যোগ হলেন। ওভালে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই সেঞ্চুরি করলেন। তবে একদিক দিয়ে আবার তামিম সবার উপরে। ওভালে এক ম্যাচ খেলে সেঞ্চুরি করাদের তালিকাতে সবচেয়ে বেশি রান তামিমই করেছেন। ওভাল মাতিয়েছেন তামিম। বাংলাদেশকে সমর্থন করতে আসা দেশী, প্রবাসী বাংলাদেশীদের মন ভরে দিয়েছেন। ওভালে তামিম ঝড় তুলেছেন।
×