ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ সাড়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২ জুন ২০১৭

শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ সাড়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামগ্রিক শিক্ষা খাতে ৫০ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বরাদ্দ চলতি বাজেটের তুলনায় এক হাজার ৪২২ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে ৪৯ হাজার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এদিকে নতুন বাজেটে শিক্ষার সুষম সুযোগ বাড়ানোর জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেটে দীর্ঘদিন পর নতুন বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, যা ছিল জাতীয় সংসদ সদস্যসহ বেসরকারী শিক্ষকদের অন্যতম দাবি। নতুন বাজেটে মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাসহ উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং উৎকর্ষ সাধনে ৫ বছর মেয়াদী সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এ বাজেট পেশ করেন। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গুণগত উৎকর্ষ সাধনে ৫০৩টি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ইন্টারএ্যাকটিভ শ্রেণীকক্ষ তৈরির পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদ্যমান ও জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নে ১৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাসহ উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং উৎকর্ষ সাধনে চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ লক্ষ্যে ৫ বছর মেয়াদী সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে শিক্ষার মানোন্নয়ন সময় সাপেক্ষ বিষয়। মুহিত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পাঁচটি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে আমাদের কার্যক্রম আরও জোরদার করব। সাধারণত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে শিক্ষা খাতকে বিবেচনা করা হয়। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবারও বাজেটে শিক্ষা খাতের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কেও একীভূত করে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত করা হয়েছে। এ হিসাবে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতেই বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ। এ খাতে ৬৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ৫২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। যা ছিল মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫০ হাজার ২৯২ কোটি টাকা করা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনকূলে বরাদ্দ করা হয়েছে ২২ হাজার ২৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ২৩ হাজার ১৪১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের বরাদ্দ ৫ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ২৬ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ও প্রাথমিক স্তরের জন্য ২২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আইসিটি শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সারাদেশের ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক এবং ১৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’ স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ২০টি মন্ত্রণালয়-বিভাগ, ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং ৭টি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ইতোমধ্যে চালু হয়েছে ই-ফাইলিং পদ্ধতি। ১৮ হাজার ৫০০ সরকারী অফিস একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারীকরণ করেছি। এর ফলে, দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং ও রিসোর্স সেন্টার স্থাপন, সরকারী বিদ্যালয় নেই এমন ৩১৫টি উপজেলার ২৯৫টি বেসরকারী বিদ্যালয়কে মডেল বিদ্যালয়ে রূপান্তর, ৩ হাজার ৫৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব এবং ২৩ হাজার ৩৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। বিগত বছরসমূহের ধারাবাহিকতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ে প্রায় ৩৮ লাখ শিক্ষার্থীকে ৬৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা উপবৃত্তি ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষায় সরকারের অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন আমাদের লক্ষ্য। এর জন্য মানব সম্পদ উন্নয়নের বিকল্প নেই। তাই শিক্ষা খাতের বিনিয়োগকে আমরা সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’Ñএ সেøাগানকে সামনে রেখে আমরা সার্বিক শিক্ষা খাতের উন্নয়নে আমাদের কার্যক্রম গ্রহণ করছি। প্রতি জেলায় মৌলিক সাক্ষরতা ও সাক্ষরতা উত্তর জীবিকায়ন দক্ষতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে ডিপ্লোমা-ইন-এডুকেশন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আইসিটি রিসোর্স সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। এছাড়া ভর্তির হার বৃদ্ধি ও ঝরে পড়া রোধের লক্ষ্যে স্কুল ফিডিং, উপবৃত্তি, নতুন অবকাঠামো ও অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ নির্মাণসহ চলমান অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও আছে জরাজীর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বা পুনঃনির্মাণ কার্যক্রম। শিক্ষার মানোন্নয়নের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি আমরা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছি। আমরা প্রথমেই চেষ্টা করেছি শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে। পরবর্তী অগ্রাধিকার হচ্ছে প্রশিক্ষিত শিক্ষক গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা অনবরত উন্নীত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১২০টি বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ২৮৫টি বেসরকারী কলেজ সরকারীকরণের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। সার্বিক শিক্ষা খাতের মানোন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার, এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ চলমান কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখবো। পাশাপাশি, মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাসহ উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং উৎকর্ষতা সাধনে চলমান কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে।
×