ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুত জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ২১ হাজার ১১৮ কোটি

ভাড়ায় চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের দিন শেষ, বাড়বে গ্যাসের দাম

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২ জুন ২০১৭

ভাড়ায় চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের দিন শেষ, বাড়বে গ্যাসের দাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল সমালোচিত ভাড়ায় চালিত বা রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের সময় ফুরাচ্ছে আগামী বছর থেকে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বৃহস্পতিবার আসন্ন অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় ভাড়ায় চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে ২০১৮ সালের পর থেকে এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্রের অবসায়ন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বাজেটে আগামী বছর থেকে গ্যাসের দর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এবার বিদ্যুত এবং জ্বালানি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২১ হাজার ১১৭ কোটি টাকা; যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ২৮ ভাগ। পৃথকভাবে বিদ্যুতে বরাদ্দের পরিমাণ ১৮ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা; গতবার যা ছিল ১৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। জ্বালানিতে এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা; যা গত অর্থবারে ছিল এক হাজার ১১১ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় জ্বালানি এবং বিদ্যুত খাতের ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিশেষ করে আগামী বছর থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হলে আন্তর্জাতিক বাজারদরে গ্যাস ক্রয় করতে হবে বলে জানান। তিনি জানান, ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ এলএনজি আমদানি ও গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বন্ধ বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো চালানোর জন্য এলএনজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে গ্যাস আমদানি শুরু হলে গ্যাসের আন্তর্জাতিক দামে আমাদের তা খরিদ করতে হবে। এজন্য গ্যাসের ওপর ধার্য বর্তমান করাদি যৌক্তিকীকরণ করা হবে। এর ফলে, ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম যে বাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে বিদ্যুত ব্যবহারে ভর্তুকি প্রদানের অনুরূপ নীতি অনুসরণ করে গ্যাসের দামও সমন্বয় করা হবে। এতে গ্রাহকের কাছে গ্যাসের দর সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। দ্রুত বিদ্যুত সরবরাহের লক্ষ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরপত্রের মাধ্যমে রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন চূড়ান্ত করে। পরবর্তী সময়ে দেশে বিদ্যুত সঙ্কট আরও ঘনীভূত হলে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করতে রেন্টালে দরপত্র তুলে দেয়া হয়। যদিও তিন বছরের রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের মেয়াদ ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ছয় থেকে আট বছর করা হয়েছে। তবে দ্রুত বিদ্যুত সরবরাহের জন্য এর কোন বিকল্পও ছিল না বলে সরকার মনে করে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আমাদের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। ইতোমধ্যে তা ১৫ হাজার ৩৭৯ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে বিদ্যুতের বিতরণ লস ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। বাজেটে এলপিজি সিলিন্ডার নির্মাণের জন্য আমদানি করা লোহা বা স্টিল শিটের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা ২০১৯ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে এলপিজি বোতলের দাম বাড়বে না। দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দিতে আগামী বাজেটে তৈরিকৃত সোলার মডিউল বা প্যানেলের শুল্ক হার ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সোলার ফটোভোলটেক সেলের শুল্ক শূন্য থাকবে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন ফটোভোলটেক সেল ব্যবহার করে সোলার মডিউল বা প্যানেল দেশেই প্রস্তুত করা হচ্ছে। সে কারণে দেশীয় উৎপাদনকারীদের উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানির প্রধান উৎস প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কমে যাওয়ায় বিকল্প হিসেবে এলপিজির ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সরকার ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠানকে এলপিজি বটলিং প্ল্যান্ট স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্ল্যান্ট কার্যক্রম শুরু করেছে। এ সমন্ত কারখানা স্থাপনে প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও উপকরণে ১ শতাংশ এর অতিরিক্ত শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়াও দেশে এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির লক্ষ্যে কাঁচামালে শুল্ক বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে কমানো হয়েছে। এলপিজি ছাড়াও এলএনজিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে শুল্ক ও কর প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এলপিজি এবং এলএনজি চালিত বাস, ট্রাক, থ্রি হুইলার শুল্কায়ন কার্যক্রম নির্বিঘœ করার জন্য কাস্টমস ট্যারিফ সিডিউলে প্রয়োজনীয় বর্ণনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
×