ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২ জুন ২০১৭

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের ১ম দশকের আজ ৬ষ্ঠ দিবস। রমজানের প্রতিটি দিবস প্রতিটি মুহূর্ত বরকতের এবং শিক্ষার। রমজান মাস সংযমের মাস। বরকতের মাস। প্রবৃত্তিকে দমন করার মাস। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন: যখন রমজানের আগমন ঘটে, তখন বেহেস্তের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, দোযখের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায়, এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। এ একটি মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথে সীমাহীন অগ্রগতি লাভ করেন, অপশক্তির হামলা থেকে আত্মার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। রোজার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে লোভ-লালসা থেকে দূরে থেকে ইমানকে সজীব রাখা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ কারনেই মুসলমানদের জন্য রোজার মাসের রোজা ফরজ করেছেন। কিন্তু রমজান এলেই দেখা যায়, দিবা ভাগে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করা থেকে যে বিরতি পালন করা হয়, ইফতার এবং ইফতারের পর রাতে তা যেন সুদে আসলে উসুল করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সারাদিন উপবাসের পর ইফতার এবং রাতে খেতে হবে এবং সূর্যাস্তের পর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কোন বাধাও নেই। কিন্তু সবকিছু যেমন সীমার ভেতর থেকে করতে হয়, তেমনি রোজা ভঙ্গ করার পরে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও কিছুটা সংযম পালন করলে দেশ ও জাতি উপকৃত হয়। এটি ইসলামের শিক্ষা এবং মাহে রমজানের সিয়াম সাধনারও মর্ম। কেননা সবার জানা আছে যে, মাছ এবং তরিতরকারী ছাড়া চাল, ডাল, মাংস, দুধ, ফলমূল ইত্যাদি খাদ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার খাদ্য সামগ্রী আমদানি করতে হয়। নিজস্ব সম্পদ থেকে যে আমদানির কাজটা সমাধা হয় না, এ কথাও বলা বাহুল্য। অনেক প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক কাজ কাটছাঁট করে খাদ্য সামগ্রী আমদানির জন্যে অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। এ অবস্থায় বেহিসেবী খাদ্য গ্রহণ করার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। তবুও দেখা যায়, রমজান মাসে অন্যান্য মাসে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে এক শ্রেণীর লোক বেহিসেবী হয়ে ওঠেন। এই বেহিসেবিপনার প্রক্রিয়া দেখা যায় বাজারে, সব কিছুর দাম অসহনীয় উর্ধগতি, সক্রিয় হয় ভেজালকারী ও কালোবাজারী মজুতদাররা। রমজান এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যেন কোন বাঁধনই মানতে চায় না। এক লাফে আকাশে চাড়ে বসার মওকা ছাড়তে চায় না কোন খাদ্য বস্তুই। পাশাপাশি জামা কাপড়সহ অন্যান্য পণ্যও তাল মিলিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম চড়াতে থাকে। মাহে রমজানে কেন এ সামাজিক দুরবস্থা! অথচ রমজানে এমন হওয়া কাম্য ছিল না। রমজান এসেছে শুদ্ধির জন্য, পরম সাম্য সুন্দর ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই রোজাদারকে সে ট্রেনিংয়ে অবতীর্ণ হতে হবে। আর যারা এ মৌসুমে খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টি করে ইবাদত ও ইবাদতকারীর শান্তি বিঘিœত করে তারা কখনো দুনিয়া আখিরাতে লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি পাবে না। যদিও তারা মনে করছে তারা খুবই চালাক এবং লাভবান। হুজুর আকরাম (স.) বলেই ফেলেছেন: মান গাস্সা ফালাইছা মিন্না- যে বা যারা প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত হতে পারে না।
×