ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চুরাশিতেও চিরতরুণ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২ জুন ২০১৭

চুরাশিতেও চিরতরুণ অর্থমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ ৮৪ বছরে পা দিয়েছেন। তবু চিরতরুণ! কর্মে নবীন ও তেজোদীপ্ত। বয়সের ভার শরীরে পড়লেও তাকে পাত্তাই দিতে চান না তিনি। আর বৃহস্পতিবার দিনটি যে ছিল তার জন্য সত্যিই এক অন্যরকম, রেকর্ড গড়ার দিন। দেশের ইতিহাসে একটানা ৯বার বাজেট পেশ করার রেকর্ডটা এখন যে তারই ঝুলিতে। তাই নিজের একাদশবারের মতো দীর্ঘ বাজেট উপস্থাপনকালে ক্লান্তি চেপে ধরলেও বাজেট উপস্থাপনকালে পুরোটা সময়ই তারুণ্য, উৎফুল্ল এবং হাস্যোজ্জ্বল আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থাপন করলেন দেশের ৪৬ তম বাজেট। দীর্ঘ সময় বাজেট বক্তৃতাকালে মাঝে মাঝেই হাস্যরসের মাধ্যমেও অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে রাখেন তিনি। সংসদ সদস্যরাও বার বার টেবিল চাপড়ে চিরতরুণ অর্থমন্ত্রীকে উৎসাহ দিয়েছেন। মাঝে মাত্র ১৫ মিনিটের বিরতি শেষে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী তিনবারে প্রায় ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে বাকি পুরোটা সময় নিজ আসনে বসেই বক্তৃতা শেষ করেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে ঘিয়ে কালারের পাঞ্জাবির ওপর মুজিব কোট পরিহিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কালো রঙের একটি ব্রিফকেস নিয়ে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। নিজের আসনে বসামাত্রই সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। বয়সের কথা বিবেচনা করে শুরুতেই স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অর্থমন্ত্রীকে প্রয়োজনে নিজ আসনে বসে বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপনের অনুমতি দেন। জবাবে স্পীকারকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলেননি অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে একটা ৩২ মিনিটে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অধিবেশনের শুরুতে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্পীকার বলেন, আপনি বাজেট উপস্থাপনের অনুমতি চাইতে পারেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী প্রথমেই একটি ভিডিওচিত্র দেখানোর অনুমতি প্রার্থনা করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেলা একটা ৩৫ মিনিট থেকে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে দীর্ঘ বাজেট বক্তৃতা শেষ করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতা শেষে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা তুমুল টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এরপর অর্থমন্ত্রী সংসদে অর্থবিল উপস্থাপন করেন। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম অর্থবিল উত্থাপনের বিরোধিতা করলেও তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে স্পীকার সংসদ অধিবেশন আগামী সোমবার সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত মুলতবি করেন। অধিবেশনে প্রথম ৫ মিনিট অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা দেন। বিরতির পর কিছু সময় দাঁড়িয়ে এর পর নিজ আসনে বসেই অসমাপ্ত ভাষণ সম্পন্ন করেন তিনি। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বসেই বক্তব্য শেষ করার অনুরোধ জানালেও শেষ দুই মিনিট অর্থমন্ত্রী দাঁড়িয়ে তার বক্তৃতা শেষ করেন। দীর্ঘ বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে অর্থমন্ত্রী তার সামনে ফ্লাক্সে থাকা গরম চা এবং পানি পান করেন। দীর্ঘ বক্তৃতাকালে কিছুটা ক্লান্তির ছাপ দেখা গেলেও তেজোদীপ্ত কণ্ঠ এতটুকুও কমতি ছিল না। পাশে থাকা সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও মাঝেমাঝেই টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে উৎসাহ দিতে দেখা গেছে। অর্থমন্ত্রীর পুরো বক্তৃতার কিছু অংশ স্পীকার পঠিত বলে গণ্য করেন। বাজেট পেশের দিন বৃহস্পতিবার পুরো সংসদেই ছিল রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ। বাইরে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। সরকারী দলের বেশিরভাগ সংসদ সদস্যই পরে এসেছিলেন ঐতিহ্যবাহী মুজিব কোট। বিরোধী দলের আসনগুলোও ছিল পরিপূর্ণ। বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদসহ বিরোধী দলের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ভিভিআইপি, ভিআইপি গ্যালারিগুলোও ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদও দীর্ঘক্ষণ সংসদ ভবনের নিজ কক্ষে বসে বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করেন। সবশেষ বিকেল চারটা ৫৫ মিনিটে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ বাজেট বক্তৃতা শেষ করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতা শেষে অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার ও বিরোধী দলের একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী-নেতাও অর্থমন্ত্রীর কাছে এসে তার সঙ্গে হ্যান্ডসেকের পাশাপাশি ধন্যবাদও জানান। বক্তৃতা শেষের সময় অত্যন্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠেই দেশবাসীকে আশার কথা শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, আমাদের যেতে হবে অনেকদূর। জনকল্যাণ আমাদের জাতীয় ব্রত। নিরবচ্ছিন্নভাবে পরবর্তী নয় বছরে পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও উন্নয়ন কৌশল আমাদের নিয়ে এসেছে বর্তমান অবস্থানে। দিন এসেছে দল, মত, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সকলকে মিলে সে পথ ধরে সামনে এগিয়ে চলার। আসুন আমরা প্রস্তুতি নেই ২০৪১ সালের সমৃদ্ধ, উন্নত, সুখী ও শান্তিময় বাংলাদেশের জন্য।
×