ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভ্যাট ১৫ শতাংশই থাকছে, ৫৪৯ পণ্য আওতার বাইরে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২ জুন ২০১৭

ভ্যাট ১৫ শতাংশই থাকছে, ৫৪৯ পণ্য আওতার বাইরে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজেট প্রস্তাবে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন-২০১২ কার্যকর করা হবে। এতে পণ্য ও সেবা বিক্রির ওপর অভিন্ন ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। তবে সকল প্রকার কৃষিজ পণ্য, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু, পশুর মাংস, মাছ, ফলমূল, শাকসবজি, ভোজ্যতেল, চিনি, গুড়, লবণ, তুলা, পাট, রেশম সুতাসহ ৫৪৯টি পণ্য মূসকের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। ৯৩ ধরনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, গণপরিবহন সেবা, জনস্বাস্থ্য, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সব অস্থায়ী হোটেল ও রেস্তরাঁয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ যেসব হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করে, তাতেও ভ্যাট হবে না। এছাড়া বাণিজ্য সুরক্ষার জন্য আমদানি পর্যায়ে ১ হাজার ৬৬৬টি এইচএস লাইনের আওতায় বিদ্যমান সব পণ্যে সম্পূরক শুল্কারোপ করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি, গবাদিপশু ও মৎস্য চাষ খাত সংশ্লিষ্ট ৪০৪টি ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ভ্যাট আদায়ের মাধ্যমে ৯১ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা করছেন মুহিত, যা এনবিআরের মাধ্যমে তার ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ পরিকল্পনার ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত হয়েছে এবং তাতে ভোক্তারা ও ব্যবসায়ীরা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। আমি ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশেই বহাল রাখার প্রস্তাব করছি। মুহিত বলেন, মূল্য সংযোজন কর এক ও অভিন্ন হারে প্রয়োগ করা হবে এবং আগামী তিন বছর তা অপরিবর্তিত থাকবে। ২০১২ সালের ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ অনুযায়ী ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর করার কথা ছিল গত বছরের ১ জুলাই থেকে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা পিছিয়ে দেয় সরকার। তখন বিদ্যমান প্যাকেজ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেয়া হবে। ব্যবসায়ীরা তা আরও পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত আগের সিদ্ধান্তেই অটল থাকলেন মুহিত। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভ্যাট অব্যাহতির সীমা বছরে ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৬ লাখ টাকা করার প্রস্তাব রেখেছেন তিনি। অর্থাৎ মাসে গড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারধারী প্রতিষ্ঠানের কোন কর দিতে হবে না। সেই সঙ্গে, টার্নওভার করের সীমা বছরে ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠানের মাসিক টার্নওভার গড়ে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচে, তাদের ৪ শতাংশ হারে টার্নওভার কর দিতে হবে। এতদিন ৩০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভারের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল। মুহিত বলেন, এটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নেই। এছাড়া, ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রস্তাব অনুসারে নতুন ভ্যাট আইন ও বিধিমালার পদ্ধতিগত সহজীকরণ সংক্রান্ত কতিপয় অন্যান্য সংশোধন আনা হয়েছে। ভ্যাট আইনে যত পরিবর্তন টার্নওভার তালিকাভুক্তি সীমা ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেয়া হবে। মূসক নিবন্ধন সীমা ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখে উন্নীত করা হয়েছে। ৩৬ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি সম্পন্ন ব্যবসায়ীকে ৪ শতাংশ হারে টার্নওভার কর দিতে হবে। দেড় কোটি টাকার বেশি বিক্রি হলে শুধু ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হবে এবং ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। নতুন বিধান অনুযায়ী সরবরাহ গ্রহণ ও তার অনুকূলে মূসক চালান থাকলেই রেয়াত গ্রহণ করতে পারবেন। সহযোগীর সংজ্ঞা থেকে আত্মীয় বাদ দেয়া হয়েছে। দেশীয় শিল্প যে ধরনের সুরক্ষা ১৯৯১ সালের আইন অনুযায়ী পেত, নতুন আইনের অধীনেও ওই সুরক্ষা অব্যাহত রাখা হয়েছে। জীবন রক্ষাকারী প্রায় সব ওষুধে মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সমাজকল্যাণ কার্যক্রমকে মূসকের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ কার্যক্রমে ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি। কৃষিকাজে ব্যবহৃত উপকরণ, যেমন ঃ বীজ, সেচ সেবা, কীটনাশক, যন্ত্রপাতি মূসকের আওতার বাইরে। ডেইরি, ফাউড্রি, পাটশিল্পের কাজে ব্যবহৃত সব যন্ত্রপাতিতে মূসক অব্যাহতি সব ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকা- ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। ব্যাংকিং ও বিমা খাতের কমিশন ব্যতীত সব বিষয়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান জীবনবিমা সম্পূর্ণ অব্যাহতিপ্রাপ্ত। স্টক মার্কেট ও তার সব কাজে মূসক অব্যাহতি, কম্পিউটার ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশের নতুন করে মূসক অব্যাহতি। দেশীয় সব সফটওয়্যার উৎপাদন ও সরবরাহকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত ফ্রিজ, টিভি, এসি, মোটরসাইকেলে বিদ্যমান অব্যাহতি বহাল রাখা হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ জুন-২০১৯ পর্যন্ত করা হয়েছে। এছাড়া পামওয়েল ও সয়াবিন অয়েলের উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা ৩০ জুন ২০১৯ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। ভ্যাট আইনে বিড়ি ও সিগারেটের ওপর বাড়তি শুল্কারোপ করা হয়েছে। বিড়িকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এছাড়া ই-সিগারেটের ওপর শুল্কহার বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ও উড়োজাহাজ ভ্রমণে ভ্যাট আইন অনুযায়ী যে কোন সময় এ্যাকাউন্টে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ডেবিট কিংবা ক্রেডিট হয় এমন এ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয় না। এখন ১ লাখ টাকার এ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে। ১ লাখ টাকার উর্ধে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিদ্যমান ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ এবং ১০ লাখ টাকার উর্ধে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি টাকার উর্ধে হতে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০ টাকার পরির্বতে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার উর্ধে বিদ্যমান ১৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট এবং সার্কভুক্ত দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্স টিকেটের ওপর আবগারি শুল্কের বিদ্যমান পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখে আবগারি শুল্কারোপ করা হয়েছে। এতে সার্কভুক্ত দেশ ব্যতীত এশিয়ার অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৩ হাজার টাকা এবং বিমান যাত্রীদের যাতে অসুবিধা না সে জন্য এই শুল্ক এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ টিকেটের সঙ্গে যুক্ত করে আদায় করবে।
×