ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দশকব্যাপী পরিকল্পনা নিতে হবে সমুদ্র খাত উন্নয়নে

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২ জুন ২০১৭

দশকব্যাপী পরিকল্পনা নিতে হবে সমুদ্র খাত উন্নয়নে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ সমুদ্র খাত বিকাশে কাঠামোবদ্ধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জরুরী। বাংলাদেশের সমুদ্র খাত উন্নয়নে এক থেকে দেড় দশকব্যাপী উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশে এখনও কোন মেরিটাইম নীতি নেই। সমুদ্র খাত উন্নয়নে মেরিটাইম নীতিও প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশ সমুদ্র সম্মেলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে বক্তারা এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা কর্মসূচীর (এসডিজি) প্রধান সমন্বয় আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুর্খাজী। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইমস এ্যাফেয়ার্স ইউনিট বিভাগের সচিব রিয়ার এ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি কর্মসূচীর প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য যে সম্পদ প্রয়োজন, সেটা আগামীতে সমুদ্র থেকেই আসবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। তবে সমুদ্র সম্পদের কতটুকু আমরা ব্যবহার করতে পারছি, সেটা আমাদের দেখতে হবে। আগামী এক থেকে দেড় দশক সমুদ্র নিয়ে আমরা কি করতে চাই, তার একটি কাঠামোবদ্ধ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম আমাদের হাতে নিতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়ার পরে তথ্য-উপাত্ত আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সমুদ্রের ক্ষেত্রেও তেমন। এ বিষয়ে আমাদের হাতে অনেক তথ্য-উপাত্ত নেই। আমাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা যদি মধ্য আয়ের দেশ, আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে চাই তা হলে সঠিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে। আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী যথাযথভাবে কাজ করি, তাহলে কেউ আমাদের ঠেকাতে পারবে না। আল্লাহ আমাদের সহায় আছেন। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, বৈশ্বিক রাজনীতি ও উন্নয়নে সমুদ্র গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্র কখনও কখনও ভূরাজনৈতিক ইস্যুও হয়ে ওঠে। সামুদ্রিক কর্মকা-ের সঙ্গে বাংলাদেশের অতীতে ঘাটতি থাকলেও এখন বাংলাদেশের সামুদ্রিক কার্যক্রম অনেক। তবে এই কার্যক্রমও যথেষ্ট নয়। আমাদের এখনও মেরিটাইম নীতি নেই। এছাড়া সমুদ্র নিয়ে আমাদের একটি কাঠামোবদ্ধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জরুরী । এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এসডিজি কোন টেকনিক্যাল লক্ষ্যমাত্রা নয়, এটি একটি রাজনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমাদের কাজ করতে হবে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী বলেন, জলবায়ু পরির্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ইউএনডিপি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। উপকূলীয় এলাকার কম্যুনিটির লোকদের জন্য ৭ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একযোগে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া সাইক্লোন মোকাবেলায় আমরা কাজ করছি। সমুদ্রকেও আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে সমুদ্র সম্পদ উন্নয়নের বিষয়টি শুধু একটি মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়, এটা পুরো সরকারের বিষয়। সামগ্রিকভাবেই সমুদ্র সম্পদ উন্নয়নে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি আরও বড় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখতে হবে। এই বিশ্ব আমাদেরই এমন করেই ভারতে হবে। তবে আমি দেখেছি বিশ্বে একমাত্র উগান্ডার নাগরিকরা বিশ্বাস করে তারা এই গ্রহের নাগরিক। আমাদেরও ভাবতে হবে আমরা এই গ্রহের নাগরিক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইমস এ্যাফেয়ার্স ইউনিট বিভাগের সচিব রিয়ার এ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশ তো বটেই সারাবিশ্বের জন্যই সমুদ্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) সমুদ্রকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে সমুদ্র আমাদের নানাভাবে উপকার করলেও আমরা সমুদ্রকে দূষিত করছি। সমুদ্রে প্লাস্টিক ফেলছি। বর্জ্য ফেলছি। নানাভাবে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যকে নষ্ট করছি। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে গিয়ে সেখান থেকে প্রবাল আনছি। যেটা সেন্টমার্টিন দ্বীপের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তিনি বলেন, সমুদ্র ঘেঁষে আমাদের ম্যানগ্রোভ রয়েছে। এই ম্যানগ্রোভ রক্ষা করতে হবে। এসডিজি কর্মসূচীর লক্ষ্য অনুযায়ী সমুদ্র রক্ষা ও সমুদ্র সম্পদের বিকাশের জন্যই এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এই সম্মেলনের সুপারিশ নিয়ে আগামী দিনে কাজ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বেসরকারী সংস্থা ও বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে উপস্থিত কর্মকর্তাদের নিয়ে ছয়টি পৃথক কর্মশালা হয়। পরে কর্মশালার সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
×