ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোরার নম্র ছোবল!

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ২ জুন ২০১৭

মোরার নম্র ছোবল!

প্রকৃতির লীলাখেলা সত্যিই বোঝা ভার! ১০ বছর আগে সংঘটিত ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ‘সিডর-আইলার’ তুলনায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছিল মোরা। থাইল্যান্ড তথা জম্বুদ্বীপের পরিভাষায় মোরা শব্দটির অর্থ সমুদ্রের নক্ষত্র। একেবারে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত সংবলিত এরকম একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের এমন স্নিগ্ধ নামকরণ করা হলো কেন সেটাও একটা রহস্য বটে। অবশ্য মোরার ধ্বংসযজ্ঞ এবং ক্ষয়ক্ষতি যদি তেমন ব্যাপক ও ভয়াবহ হতো তাহলে আমরা নিশ্চয়ই এই সামুদ্রিক নক্ষত্রটিকে তুলনা করতাম রাহুর সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি, এটুকুই যা সান্ত¡নার। বাস্তবে সিডর-আইলার তুলনায় যথেষ্ট দুর্বল ছিল মোরা। এর বাতাসের গতি, জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ও বিস্তৃতি, বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের পরিমাণ ছিল অনেক কম। এমনকি আট বছর আগে সাত নম্বর বিপদ সঙ্কেত নিয়ে আঘাত হানা আইলার তুলনায়ও মোরা ছিল কম শক্তিশালী। স্বস্তির কথা এই যে, মঙ্গলবার ভোরে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হেনে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মোরা চট্টগ্রাম উপকূল দিয়ে অতিক্রম করেছে বাংলাদেশের সীমানা। এটি অল্পবিস্তর বৃষ্টি ঝরিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে নিঃশেষিত হয়েছে ভারতের মণিপুর রাজ্যে। তবে মোরার আঘাতে অন্তত সাতজন মারা গেছেন। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ল-ভ- হয়েছে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনসহ উপকূলীয় অঞ্চল। বিশেষ করে কাঁচা ঘরবাড়ি এবং গাছপালার ব্যাপকভাবে উপড়ে যাওয়ার খবরও আছে। সমুদ্রে ভাটার কারণে জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা কম হলেও ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে কিংবা বাঁধ উপচে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে মাছের ঘের, লবণের ক্ষেতসহ কিছু সম্পদ স্বভাবতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রান্সফরমার ও সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক এলাকা হয়ে পড়েছে বিদ্যুতবিহীন। মোরার ক্ষয়ক্ষতি কম হোক, বেশি হোক তাতে তেমন কিছু আসে যায় না। তবে এ থেকে যা প্রতীয়মান হয়েছে তা হলো, আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও আবহাওয়া বিভাগের প্রস্তুতি যথেষ্ট ভাল। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের অতীতের বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলার অভিজ্ঞতা তারা ভুলে যাননি। বরং দুর্যোগ মোকাবেলাসহ দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর সর্বতোমুখী কৌশল তারা রপ্ত করেছেন। আবহাওয়া বিভাগের দক্ষতাও যে বেড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত ঘোষণা করেই তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। এর ভয়াবহ পরিণতি কী হতে পারে এবং মানুষের কী করণীয় সে সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে রেডিও-টিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কোস্টগার্ড, রেড ক্রিসেন্টসহ স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকাও অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। তারা বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছেন। যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্তরা পুনর্বাসিত হতে পারেন তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মান সার্বিকভাবে ভাল এবং দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার উপকূল ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনার কারণে একেবারে ল-ভ- হয়ে যায়। তখন সে দেশের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতা বিনিময়ের বিষয়টি উঠে এসেছিল আলোচনায়। তাই বলে আত্মপ্রসাদের অবকাশ নেই। বাংলাদেশের অবস্থান যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় এবং আমরাও রয়েছি জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ঝুঁকিতে, সেহেতু দক্ষতার সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবেলার অভিজ্ঞতা আমাদের অর্জন করতেই হবে।
×