ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মলয় বিকাশ দেবনাথ

সাঁঝ বেলার বিলাপ’

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১ জুন ২০১৭

সাঁঝ বেলার বিলাপ’

ড. ইস্রাফিল শাহীনের নির্দেশনায় মঞ্চায়ন মানেই একটি নিরীক্ষা। প্রচলিত নাট্যরীতিকে ভেঙ্গে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রাচ্য, পুরনোর সঙ্গে আধুনিকতার যে মিথস্ক্রিয়া ঘটান সত্যিই প্রশংসনীয় এবং দক্ষতার পরিচায়ক। সমকালীন পরিস্থিতি নাটকে ফুটিয়ে তোলেন গভীরভাবে। গত ১৬-১৮ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটম-লে মঞ্চস্থ হয়েছে ফরাসী ধ্রুপদী নাট্যকার জ্যাঁ রাসিনের ফ্রেইড্রা নাটকের অনুবাদ ‘সাঁঝ বেলার বিলাপ’। নাটকটি অনুবাদ করেছেন অসিতকুমার এবং নাট্যকথন ও গীতরচনা করেন শাহমান মৈশান। সঙ্গীত পরিকল্পনা ও প্রয়োগে ছিলেন সাইদুর রহমান লিপন, কাজী তামান্না হক সিগমা। ফ্রেইডা নাটকটি ধ্রুপদী নাট্যরীতির একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ এবং জ্যাঁ রাসিন ধ্রুপদীবাদের সমস্ত রসদ এ নাটকে বজায় রেখেছিলেন। সেই নাটকের উপস্থাপনায় ও দেহ বিন্যাসে কিছু সংযোজন ও বিয়োজনের মধ্য দিয়ে নাটকটির উপর একটি নিরীক্ষা করা হয়েছে। নাট্য সাহিত্যের অনুকরণের পরিবর্তে ভিন্ন ভঙ্গিমায় সৃজনশীল শিল্প সম্ভাবনাকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপনার সফল চেষ্টা করা হয়েছে। তবে অভিনয়ের জায়গায় আরও পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। চরিত্রের মধ্যে ডুবে থাকার ব্যাপারে কিছুটা ছেদ ঘটেছে। মঞ্চ নাটক এখনও নানা সীমাবদ্ধতাকে জয় করতে পারেনি। তার মধ্যে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতাই সবচেয়ে বেশি। এ কারণে নাটকগুলোতে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সেভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয় না। যেমন পোশাক পরিকল্পনা বা মঞ্চ সজ্জায় চাহিদা মোতাবেক ব্যয় করা সম্ভব হয় না। কিন্তু সময়ের চাহিদা বলে একটি কথা আছে। সময়ের কিছু রং থাকে। নাটকের ডিজাইনের জায়গায় যদি সেই রংকে ব্যবহার না করা হয় তবে নতুন প্রজন্মের কাছে এটি গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। নতুন প্রজন্ম যদি গ্রহণ না করে তবে শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবে কে? তাই যারা এখন মঞ্চ নিয়ে কাজ করছেন বা মঞ্চ নাটককে নানাভাবে দর্শকের নিকট উপস্থাপন করায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা নিজ তাগিদে শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখার নিমিত্তে আপনাদের চিন্তা চেতনার জায়গায় এই বিষয়গুলোকে নিয়ে আসেন, মঞ্চ নাটকে নতুন মাত্রা যোগ করেন যেন একেবারে নতুন প্রজন্ম এই শিল্পকে গ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন নাট্যকলা বিষয় পড়ানো হচ্ছে। তরুণ শিক্ষকরা এ পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন, তাদেরই দায়িত্ব এই মঞ্চ নাটকে কিভাবে আধুনিকতার তথা নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করানো যায় শিল্পের মান অক্ষুণœ রেখে। এটি এখন যুগের চাহিদা। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা দিল্লীতে এশিয়ান প্যাসিফিক (এপিবি) নাট্যোৎসবে এ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। নাটকে রাজা থিসিয়াস যুদ্ধে যাওয়ার পর থেকে ৬ মাস ধরে নিখোঁজ। রাজার অনুপস্থিতিতে রাজ্যে নানা ধরনের গুঞ্জন ও অপরাজনীতির তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু রানী সে সব নিয়ে না ভেবে তিনি তার নিজ প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। একমুখী ভালবাসা রানীকে গ্রাস করেছে। রানী আকৃষ্ট হয়েছে তার সৎ ছেলে যুবরাজ হিপোলিটাসের প্রতি। রানীর ভেতর জন্ম নিয়েছে ভালবাসার উন্মত্ততা। তার দাসী ইনোন একমাত্র সাক্ষী। ইনোনের সঙ্গে তার সমস্ত কথোপকথন। এক পর্যায়ে তিনি তার প্রেম নিবেদন করেন হিফোলিটাসকে। কিন্তু হিপোলিটাস তা প্রত্যাখ্যান করেন যা রানীকে আরও বিচলিত করে। এর মধ্যে রাজা থিসিয়াসের ফিরে আসার সংবাদ যেন রানীর কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। রানী লজ্জায় আত্মহত্যায় উদ্ধত হলে ইনন দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয় এবং তারই প্ররোচনায় রাজার নিকট মিথ্যাচার করে উল্টো হিপোলিটাসকে একই দোষে দোষান্বিত করে। হিপোলিটাস থিসিয়াসের অভিশাপে মৃত্যুবরণ করে। এভাবে কাহিনীর সঙ্গে সমান্তরালে দর্শকের একাত্মতাই প্রমাণ করে নাটকের নিখুঁত নির্মাণ।
×