ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাটলার না মুস্তাফিজ?

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১ জুন ২০১৭

বাটলার না মুস্তাফিজ?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বদলে যাওয়া ইংল্যান্ডে তারকার অভাব নেই। রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে অসাধারণ খেলছে ইয়ন মরগানের দল। যেমন ব্যাটিং লাইন-আপ, তেমন বোলিং। এর মধ্যে যার ওপর বিশেষ দৃষ্টি থাকবে তিনি জস বাটলার। বেন স্টোকস বা ক্রিস ওকসের মতো ক্রেজি নন, তবে ব্যাট হাতে নিজের দিনে যে কোন দলকে একাই নাস্তানাবুদ করে দিতে সক্ষম। অন্যদিকে ওয়ানডেতে দারুণ সময় কাটানো বাংলাদেশও এখন আর দু-একজনের ওপর নির্ভরশীল নয়। প্রতিষ্ঠিত তারকাদের পাশাপাশি নতুনরাও পার্থক্য গড়ে দিচ্ছেন। প্রায়শ সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের ছাপিয়ে যাচ্ছেন সৌম্য সরকার-মেহেদী মিরাজরা। পেস সহায়ক ইংলিশ-কন্ডিশনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে আজ দৃশ্যপট বদলে দিতে পারেন মুস্তাফিজুর রহমান। স্বাগতিকরা তাই টাইগার কাটার-মাস্টারকে নিয়ে নিশ্চিত করেই বাড়তি টেনশনে থাকবে। নিজের দিনে বাটলার কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন, মাশরাফি বিন মর্তুজাদের কাছে সেই স্মৃতিটা খুব বেশি দূরের নয়। অক্টোবরে মরগান বাংলাদেশ সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলে এই বাটলারই সামনে থেকে সফরকারীদের নেতৃত্ব দেন। ‘লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ বলতে যা বোঝায়। তিন ম্যাচের ওই সিরিজে বাটলারের ব্যাট থেকে আসে ৬৩, ৫৭ ও ২৫ রানের ঝলমলে ইনিংস। ২-১এ সিরিজ জয়ের পর মরগানকে সরিয়ে ভারত সফরেও তাকে অধিনায়ক রাখার দাবি ওঠে। সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। জেসন রয়, এ্যালেক্স হেলস, জো রুট, মরগান, স্টোকসের মতো তুখোড় সব তারকা ব্যর্থ হলেও বাটলার ঠিকই দাঁড়িয়ে যান। ব্যাটিংয়ে তার পজিশনটা ‘ভাইটাল’, নামেন ছয় নম্বরে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫৩ বলে খেলেন অপরাজিত ৬৫ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জেতে ইংলিশরা। উইকেটের পেছনেও (উইকটরক্ষক) দলের প্রধান ভরসা তিনি। ৯০ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে বাটলারের রান ২৩৬৬। নিশ্চয়ই আহমরি নয়। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছয় নম্বরে নেমে তার স্ট্রাইকরেট ১১৮.৪১। চাপের মধ্যে কিংবা রিল্যাক্সেÑ সমারসেটে জন্ম নেয়া ২৬ বছর বয়সী আসলে যে কোন পরিস্থিতিতে রান তুলতে সক্ষম। অন্যদিকে ২০১৫ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই ম্যাচের পর ম্যাচ বিস্ময় উপহার দিয়ে চলেছেন বাংলাদেশের কাটার-মাস্টার মুস্তাফিজ। বিশ্ব ক্রিকেট অবাক হয়ে দেখেছে বাঁ-হাতি পেসারের দুর্দান্ত সব ডেলিভারি। আলোচনা বা গবেষণা কোন কিছুই মুস্তাফিজের বোলিং রহস্যভেদ করতে পারেনি। তবে ২০১৬-তে ইনজুরিতে পড়ে কিছুটা ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন কিন্তু তাই বলে তাকে নিয়ে আলোচনা থেমে থাকেনি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যেসব তরুণ ক্রিকেটার ভাল করতে পারেন বলে অভিমত দিয়েছে, সেই তালিকায় মুস্তাফিজ আছেন ওপরের দিকে। ইনজুরির পর নিউজিল্যান্ড সফরটা ভাল না গেলেও শ্রীলঙ্কা হয়ে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে দারুণভাবে ফিরে এসেছেন মুস্তাফিজ। শ্রীলঙ্কায় শেষ টি২০ ম্যাচে মাত্র ২১ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়ে ঐতিহাসিক জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তার আগে টেস্ট সিরিজেও চমৎকার বল করেন তিনি। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ঠিক আগে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। ম্যাচটা বাংলাদেশ জেতে ৮ উইকেটে। সর্বশেষ আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন ধাপ এগিয়ে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছেন মুস্তাফিজ। ফিজ মানেই বোলিংয়ে কাটার-জাদু। যাতে হতভম্ব-বিভ্রান্ত ব্যাটসম্যান। গত দুই বছর গোটা বিশ্বই সেটা দেখে এসেছে। এবার ছোট ক্যারিয়ারের প্রথম বড় মঞ্চ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেরাটা দেয়ার পালা। সেটা যদি আজকের প্রথম ম্যাচ দিয়েই শুরু হয়, তবে কপাল পুড়বে ইংলিশদের! প্রতিপক্ষ অধিনায়ক, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ক্রিকেট বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সবাই বলছেন, পেস-সহায়ক এই কন্ডিশনে মুস্তাফিজ হয়ে উঠতে পারেন সত্যিকারের ‘ফ্যাক্টর’। ১৮ ওয়ানডের ছোট ক্যারিয়ারে তার শিকার সংখ্যা ৪৩। ৫ উইকেট তিন বার। সেরা ৬/৪৩।
×