ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ডের আতঙ্ক মাহমুদুল্লাহ!

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১ জুন ২০১৭

ইংল্যান্ডের আতঙ্ক মাহমুদুল্লাহ!

স্পোর্টস রিপোর্টার লন্ডন থেকে ॥ ইংল্যান্ড কী এবার বাংলাদেশ দলের একজনকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনায় নামবে? তাকে আউট করতেই যত ছক কষবে? নাকি কোন ছকেই আবারও কোন কাজই হবে না? যাকে নিয়ে ইংল্যান্ডের এমন বেহাল দশা, তিনি আর কেউ নন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যিনি প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড হলেই, গর্জে ওঠেন। বিশেষ করে বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে। ইংল্যান্ড মানেই আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠেন মাহমুদুল্লাহ। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে কিংবা ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে, ইংল্যান্ডকে যে বাংলাদেশ হারাল; সেটি তো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কল্যাণেই। ২০১৫ সালে যে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলল বাংলাদেশ, সেই ম্যাচে তো সেঞ্চুরিই করে দেখালেন মাহমুদুল্লাহ। সেই সেঞ্চুরিটি (১০৩ রান) মাহমুদুল্লাহর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি ছিল। এমনকি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও প্রথম সেঞ্চুরি ছিল। তার এ সেঞ্চুরিতে বড় সংগ্রহ গড়তে পারে বাংলাদেশ। জিতলেই প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ। এমন সমীকরণে খেলতে নেমে ম্যাচও জিতল। ২০১১ সালেও মাহমুদুল্লাহ ঝলক দেখান। ইংল্যান্ডের গড়া ২২৭ রান অতিক্রম করতে গিয়েই ১৬২ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে ১৬৯ রানেই ৮ উইকেটের পতন ঘটে যায়। এমন মুহূর্তে নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের সাহস দিতে প্রয়োজন ছিল একজন যোগ্য ব্যাটসম্যানের। মাহমুদুল্লাহ সেই কাজটি করে যান। যদিও অপরাজিত ২১ রান করেন। সেটি অনেক বড় নয়। কিন্তু ৪২ বল খেলে, শফিউল ইসলামকে নিয়ে যে এগিয়ে গিয়ে শেষপর্যন্ত জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ, সেটি তো মাহমুদুল্লাহর ধৈর্য ধরে উইকেটে থাকার কল্যাণেই। শুধু বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে কেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯টি ওয়ানডে খেলে চার ম্যাচে জিতে বাংলাদেশ। দুই বিশ্বকাপে জেতার সঙ্গে প্রথমবার ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে সিরিজের একটি ম্যাচ জিতে। আরেকবার গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশের মাটিতে হওয়া সিরিজে একটি ম্যাচ জিতে। এই ম্যাচগুলোতেও তো দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। ২০১০ সালে ব্রিসটলে হওয়া ম্যাচে শেষমুহূর্তে ৩৪ বলে অপরাজিত ২৪ রান করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। তাতে বাংলাদেশও মোটাতাজা সংগ্রহ পুঁজি করে। শেষ পর্যন্ত জিতেও। গত বছর অক্টোবরে মিরপুরে তো মাহমুদুল্লাহর ৭৫ রানের ইনিংসে ভর দিয়েই জিতল বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি সিরিজেও দুর্দান্ত খেলেছে মাহমুদুল্লাহ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে ম্যাচটি জিতল বাংলাদেশ, সেই ম্যাচে অপরাজিত ৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। তার এ ঝড়েই নিউজিল্যান্ডকে হারানোর আসল কাজটি হয়েছে। ম্যাচটিতে এমন ইনিংস খেলে বাংলাদেশের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে তিন হাজার রানের ক্লাবেও নাম লেখান মাহমুদুল্লাহ। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ আশরাফুলের পর মাহমুদুল্লাহ তিন হাজার রান করেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইমরুল কায়েস (৪২০ রান), মুশফিকুর রহীমের (৩৬২ রান) পরেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের (৩৬০ রান) অবস্থান। নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিউজিল্যান্ডের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভাল খেলেছেন মাহমুদুল্লাহ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ ম্যাচে ২৮.৫০ গড়ে ৩৯৯ রান করার বিপরীতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১ ম্যাচে ৪০.০০ গড়ে ৩৬০ রান করেছেন মাহমুদুল্লাহ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে দুর্বার মাহমুদুল্লাহ, তা বোঝাই যাচ্ছে। ইংল্যান্ডও মাহমুদুল্লাহকে ভাল করেই পরিকল্পনায় রেখেছে। মাহমুদুল্লাহ যে বরাবরই ইংল্যান্ডকে কাঁদান। তিনি যে ইংল্যান্ডের আতঙ্ক!
×