ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়তুল মোকাররমে ইফতার

সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রতিদিন ২ হাজার মানুষের অংশগ্রহণ

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১ জুন ২০১৭

সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রতিদিন ২ হাজার মানুষের অংশগ্রহণ

মোরসালিন মিজান ॥ রমজান মাসের সন্ধ্যেটা অন্যরকম। সারাদিন অভুক্ত থাকার পর এ সময় ইফতার সারেন রোজাদাররা। মুখরোচক খাবারের আয়োজন চলে ঘরে এবং বাইরে। কতশত আয়োজন! তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম মসজিদে প্রতিদিন এই ইফতারের আয়োজন করে। অনেকে জেনে অবাক হবেন, এখানে প্রতিসন্ধ্যায় একসঙ্গে বসে ইফতার করেন ২ থেকে আড়াই হাজার মানুষ। হ্যাঁ, দেশে ইফতারের এটি সবচেয়ে বড় আয়োজন বলেই ধারণা করা হয়। রোজাদারদের প্রত্যেককে অতিথি জ্ঞান করে ফাউন্ডেশন। বিনা খরচে তাদের জন্য ইফতারির ব্যবস্থা করে। তার চেয়েও উল্লেখয়োগ্য দিক হচ্ছে, এখানে ধনী-দরিদ্রের কোন পার্থক্য করা হয় না। আলাদা কোন ব্যবস্থা নেই কারও জন্য। বড় ব্যবসায়ী, উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে আশপাশের দোকানি ও পথচারী পাশাপাশি বসেন। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে একই খাবার খান। প্রতিবারের মতো এবারও রোজার প্রথম দিন থেকেই মসজিদের পূর্ব শাহানে চলছে ইফতারির আয়োজন। আসরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় ইফতারের প্রস্তুতি। বহু মানুষ ইফতারের আগে আগে এখানে চলে আসেন। মুসল্লিদের কেউ কেউ আবার আসরের নামাজের পর আর মসজিদ ছেড়ে যান না। বিভিন্ন বিষয়ে বয়ান হয়। বসে শুনেন তারা। সময় যত এগিয়ে যায় উপস্থিতি তত বাড়তে থাকে। বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আশপাশের দোকানদার, গুলিস্তান এলাকায় কেনাকাটা করতে আসা সাধারণ মানুষ, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, এতিম- মিসকিন; কেউ বাদ যান না। সবাই এসে পাশাপাশি বসেন। প্রায় ২০ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গাজুড়ে চলে ইফতার আয়োজন। বিরাট কর্মযজ্ঞ তদারকি করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট বিভাগ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতদিনের ইফতারে শুধু খেজুর থাকছে ৭০ কেজি। ছোলা, মুড়ি, বেগুনি না হলেই নয়। ৭০ কেজি মুড়ি, ১১০ কেজি ছোলা, ৯০ কেজি পিঁয়াজু, ৮০ কেজি বেগুনি থাকছে প্রতিদিন। নতুন যোগ হয়েছে শসা। কাঁঠালের পরিবর্তে প্রতিদিন ১০০ কেজি শসা রাখা হচ্ছে ইফতারে। একটু মিষ্টিও চাই। সে বিবেচনায় থাকছে ৯০ কেজি জিলাপি। প্রতিদিন চিনি ব্যবহার হচ্ছে ৪০ কেজি। ফলের মধ্যে থাকছে কলা। ১২০০ কলা অর্ধেক করে কেটে পরিবেশন করা হচ্ছে। তার আগে গলা ভেজানোর জন্য রাখা হচ্ছে ১৫ বোতল শরবত। এসব খাবার পরিবেশনের জন্য রয়েছে ৩০০টি বড় ডিশ। প্রতিটিতে ৬ থেকে ৭ জনের ইফতার করার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। রোজাদাররা ডিশের চারপাশে চমৎকার গোল হয়ে বসে ইফতার করছেন। তবে প্রতিবছর সিঙ্গেল ডিশ থাকলেও এবার এখন পর্যন্ত রাখা হয়নি। মসজিদে পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে। মসজিদের পূর্ব-দক্ষিণ প্রান্তে নামাজকক্ষে প্রতিদিন শতাধিক মহিলা ইফতার করছেন বলে জানা যায়। সব মিলিয়ে অন্যরকম একটি আয়োজন। বিশাল এই আয়োজন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে প্রতিদিন কাজ করছেন মসজিদের ২০ খাদেম ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ২০ কর্মকর্তা কর্মচারী। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ সাধারণ মুসল্লি। সব মিলিয়ে অন্যরকম বৈকি। আয়োজনটি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি মানুষ ইফতার করছেন। কেউ কারও পূর্ব পরিচিত নন। বিভিন্ন শ্রেণী -পেশার মানুষ। কিন্তু কোন বৈষম্য নেই। সবাই মিলেমিশে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ইফতার করছেন। বেশি মানুষ একসঙ্গে ইফতার করলে সোয়াব বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, এ কারণেও অনেকে এখানে ইফতার করতে আসেন। ইফতারের আয়োজন রোজার শেষদিন পর্যন্ত চালু থাকবে বলে জানান তিনি।
×