ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১ জুন ২০১৭

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র মাহে রমজানের ৫ম দিবস অতিবাহিত হতে চলেছে। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.)-এর সুসংবাদবাহী রহমতের ১ম দশকের মাঝামাঝিতে আমরা অবস্থান করছি। মহান আল্লাহ পাক এ পবিত্র মাসে দিনের বেলায় আমাদের জন্য সিয়াম ফরজ করেছেন। আর তার মহান নবী হযরত রাসূলে কারীম (স.) রাতের ভাগে আমাদের জন্য তারাবিহর নামাজকে সুন্নত করেছেন। তারাবিহ নামাজের ফযিলত ও তাৎপর্য অনেক। এটি পবিত্র মাহে রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বিখ্যাত হাদিস সঙ্কলন নাসায়ী শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলে মাকবুল (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানী প্রেরণা ও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে এ মাসে রোজা রাখবে এবং নামাজ পড়বে সে ব্যক্তি গুনাহ হতে এরূপ মুক্ত হবে যেন আজই তার জননী তাকে প্রসব করেছে। আল্লাহতায়ালার এক বিশেষ কুদরত যে, তিনি মুসলমানদের হৃদয়ে সারা দিনের সিয়াম-সাধনার পর তারাবিহ সালাতকেও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার জন্য অফুরন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা দান করেছেন। তারাবিহ নামাজের প্রতি যুগে যুগে মুসলিম জাতি যে গভীর দরদ ও প্রেমের পরিচয় দিয়ে এসেছে তার তুলনা ধর্মের ইতিহাসে মেলা ভার। এটি হলো হুব্বে দ্বীন ও হুব্বে রাসূলের পরিচয়। বস্তুত, বহু প্রামাণ্য হাদীস গ্রন্থে রাসূলুল্লাহের (স.) ইমামতিতে সালাতে তারাবিহ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ আছে। তবে একাধারে তিনদিন জামাতের সঙ্গে তারাবিহ আদায়ের পর জামায়াত অনুষ্ঠান থেকে তিনি বিরত হন। কেননা তার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, হয়তো এটা ফরজ করে দেয়া হবে আর উম্মতের জন্য তা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আঁ হযরতের (স.) ওপর লাখো দরুদ ও সালাম, তিনি এ নামাজের গুরুত্ব ও উম্মতের সুবিধা আর কল্যাণ বিবেচনা করে একে সুন্নাত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। হযরত রাসূলে কারীমের (স.) ওফাতের মাধ্যমে যখন ওহীর যুগের সমাপ্তি ঘটলো তখন সাহাবাগণ সর্বসম্মতভাবে তারাবিহর জামাত শুরু করলেন। বলাবাহুল্য, সালাতে তারাবিহের ব্যাপারেও তারা তাদের স্বভাবসুলভ নিষ্ঠা ও একাগ্রতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই তো আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট। সাহাবা-পরবর্তী যুগের উম্মাতগণেও এ ফযিলতময় ইবাদতের হিফাজত ও সংরক্ষণের ব্যাপারে অত্যাধিক যতœবান ছিলেন। এমনকি এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তথা হকপন্থীদের বৈশিষ্ট্য ও প্রতীকরূপে স্বীকৃতি লাভ করল। আমরা যেহেতু সালফি সোয়ালিহীন তথা পূর্ববর্তী সৎকর্মশীলগণের উত্তরাধিকারের গর্বিত দাবিদার, তাই আমাদের উচিত মর্যাদা বৃদ্ধিকারক সালাতুত তারাবিহ ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে জারি ও কায়েম রাখা। তারাবিহ নামাজে কুরআন খতমের বিষয়টি এক বড় ধরনের নিয়ামক শক্তি। শীতের মৌসুমে যেমন অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে তেমনি রমজানের আগ মুহূর্তে খতমে তারাবিহ পাওয়ার মানসে নগরীতে সংগঠিত হতে থাকে কুরআনে হাফিজগণ। বর্তমানে মসজিদের সংখ্যার তুলনায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে হাফিজ সাহেবদের সংখ্যা। ফলে ক্রমান্বয়ে বেকারত্বের দিকে যাচ্ছে হাফিজ সাহেবগণ। মাহে রমজানে খতম তারাবিহ পড়ানোর সুযোগ না পেয়ে দেদার হাফিজ হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে যান। এ ব্যাধি এক সময় ধর্মীয় ও সামাজিক বিপর্যয় আনবে, কুরআন মুখস্থকরণে নিরুৎসাহিত হবেন। এ বছর আমরা বিষয়টির দিকে অনুসন্ধিৎসু মনে লক্ষ্য করলাম যে, বহু হাফিজ ঢাকা চট্টগ্রামে মসজিদে খতম তারাবিহ পড়ানোর সুযোগ না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমি প্রথমে হাফিজ সাহেবদের উদ্দেশে বলব, বর্তমান আধুনিক যুগ, বিজ্ঞানের যুগ, জনসংখ্যা বিস্ফোরণের যুগ। এ ক্ষেত্রে শুধু কুরআন মুখস্থ করে সারা বছর খতম তারাবিহের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। অন্যান্য হাতের কাজ আয়ত্ত্ব করুন, তাহলে সারা বছরের হতাশা কেটে বুকভরে আশার সূর্য উদিত হবে। মাদ্রাসা কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা নিন, ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগ দিন, অনুবাদ শিল্প, কম্পিউটার, টেলিফোন ফ্যাক্সহ টেকনিক্যাল বিষয়সমূহ আয়ত্ত্ব করুন। একই সঙ্গে মসজিদের সম্মানিত সভাপতি-সেক্রেটারি, ইমাম মুতাওয়াল্লীদের প্রতিও আমাদের একটি প্রস্তাব। এক সময় হাফিজদের সংখ্যা কম ছিল বলে মসজিদে একজন হাফিজ তারাবিহ পড়াতেন। এরও পূর্বে বেশিরভাগ মসজিদে কুরআনে হাফিজের দুষ্প্রাপ্যতায় ইমাম সাহেব নিজেই সূরা তারাবিহ পড়াতেন। এখন হাফিজের সংখ্যা বেড়েছে বলে প্রায় মসজিদে ২ জন হাফিজ নামাজে তারাবিহতে অংশ নেন। এ প্রসঙ্গে আমরা বলব, যেহেতু এখন হাতের কাছে বহু হাফিজ। তাই এক এক মসজিদে বড় বড় ২ জন হাফিজ রেখে তাদের সঙ্গে আরও ২-৪ জন হাফিজকে সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দেয়া যায় কি না বিবেচনা করুন। এতে প্রচুর পরিমাণ হাফিজ মসজিদে আশ্রয় পাবে এবং সামান্য অনুগ্রহ অনুকম্পায় ধীরে ধীরে হতাশা কেটে উঠে জীবনের একটি লক্ষ্য স্থির করার সুযোগ পাবে। এর মাধ্যমে কুরআনের মর্যাদা বাড়বে, মসজিদের সুনাম হবে এবং কুরআন সংরক্ষণে একটু উৎসাহ পাবে আমাদের সন্তানগণ। আমরা আশা করি, রমজান সংস্কৃতি উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে আমরা যেন সমাজ উন্নয়নে বেকারত্ব দূরীকরণে বিভিন্নভাবে অবদান রাখব।
×