ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কোচ কুম্বলে ও অধিনায়ক কোহালির মতান্তর চরমে

প্রকাশিত: ২২:২৬, ৩১ মে ২০১৭

কোচ কুম্বলে ও অধিনায়ক কোহালির মতান্তর চরমে

অনলাইন ডেস্ক ॥ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের ভাগ্যে কী আছে, তা নিয়ে আগ্রহ ইংলিশ আবহাওয়ার মতোই ঝুপ করে পাল্টে গিয়েছে। আচম্বিতে এক নম্বরে উঠে এসেছে অন্য প্রশ্ন— ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে অনিল কুম্বলের ভবিষ্যৎ কী? এই প্রশ্ন নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট পরিমণ্ডলে চরম উত্তেজনা ছড়াতে শুরু করেছে। তার কারণ, গ্রেগ চ্যাপেল-সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই বিতর্কিত অধ্যায়ের মতো এ বারও বিবাদ বেধেছে কোচ কুম্বলে এবং ক্যাপ্টেন বিরাট কোহালির মধ্যে। একাধিক সূত্রে খবর, অধিনায়ক কোহালি আর ‘হেডমাস্টার’ কুম্বলেকে পছন্দ করছেন না। এই বিবাদের জেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরেই কুম্বলেকে সরে যেতে হলে মোটেও অবাক হওয়ার থাকবে না। ওভালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ার্ম-আপ ম্যাচের বিরতিতে কুম্বলেকে দেখা গেল বোলারদের নিয়ে প্র্যাকটিস করাচ্ছেন। সহকারী কোচেদের তাঁর সঙ্গে দেখা গেল না। পরে ম্যাচ শেষে দেখা গেল অশ্বিন ওয়ার্ম-আপ ম্যাচের পিচে এসে বল করছেন। তাঁর সঙ্গী দীনেশ কার্তিক। কোচ সেখানেও নেই। এর পর কোহালি, ধোনি-রা এলেন ব্যাটিং প্র্যাকটিস করতে। সেখানে দেখা গেল কুম্বলে বল ছুড়ে প্র্যাকটিস দিচ্ছেন। কিন্তু কোহালির নেটে নয়, ধোনির নেটে। আধ ঘণ্টা মতো নেটে ব্যাটিং সেরে বেরিয়ে গেলেন কোহালি। এক বারও কোচের সঙ্গে কথা বলতে দেখা দূরে থাক, কাছাকাছিও আসতে দেখা গেল না। সব মিলিয়ে একটা টেনশনের আবহ যে রয়েছে, তা বাংলাদেশকে দুরমুশ করে হারানোর দিনেও দেখা গেল। ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বোর্ড কর্তাদের কথা ঠিক হলে কুম্বলের পক্ষে কোচ হিসেবে থাকা কঠিন। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, কোহালি তাঁর মনের কথা জানিয়েই দিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় বোর্ড কর্তাদের কাছে। তিনি একা নন, দলের অন্যান্য ক্রিকেটারেরও অসন্তোষ রয়েছে। বোর্ডের মধ্যে যতই দু’টি সমান্তরাল প্রশাসনিক শাখা এই মুহূর্তে চলুক, কুম্বলেকে নিয়ে ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের মনোভাব সম্পর্কে দু’পক্ষই জানে কী ঘটছে। পদাধাকিরীদের তো বটেই, সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটির সঙ্গেও কথা হয়েছে কোহালিদের। সেখানে ভারতীয় দলের এককাট্টা সুর সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরেই ঠিক হয়, নতুন কোচের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। এমনিতেই বোর্ড কর্তাদের কেউ কেউ কুম্বলের ‘বৈপ্লবিক’ আচরণ নিয়ে প্রসন্ন ছিলেন না। কোহালিদের মনোভাব জানার পরে তাঁরা আরও তৎপর হয়ে উঠেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরে ভারতের বেশির ভাগ ম্যাচই বিদেশে। তার আগে নতুন কোচ ঠিক করার চেষ্টা চলছে। ভারতীয় ক্রিকেট মহল আপাতত আলোড়িত কুম্বলে বনাম কোহালি নতুন সংঘাত নিয়ে। কিন্তু এই সংঘাতের কারণ কী? শোনা যাচ্ছে ব্যক্তিত্বের সংঘাত কোচ ও অধিনায়কের সুখী সংসার গড়ে তোলার পিছনে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রিকেটারেরা অভিযোগ জানিয়েছেন, কড়া হেডমাস্টারের মতো কোচ তাঁদের শাসন করতে চাইছেন। কে টিমের বস্‌— কোচ না অধিনায়ক তা নিয়েও বিরোধের বারুদ জমেছে। বোর্ড কর্তাদেরও মনে হয়েছে, কুম্বলে-কোহালি ক্রমশ দুই মেরুতে পৌঁছে যাচ্ছেন। তাঁরা দ্রুত হস্তক্ষেপ করে তাই পরিস্থিতি সামলাতে চেয়েছেন। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, আইপিএল ফাইনালে বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে আর্থিক চুক্তি নিয়ে বসেছিলেন কুম্বলে। সেখানে কথা ছিল, কোহালি যোগ দেবেন টেলিকনফারেন্স মারফত। কুম্বলে চেয়েছিলেন, দু’জনে একসঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু কর্তাদের মদতে কোহালি আলাদা কথা বলেন। সেখানে তিনি কোচকে নিয়ে টিমের স্বপ্নভঙ্গের কথা জানিয়ে দিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। কোচ এবং অধিনায়কের এমন বিকর্ষণ ঘটার পিছনে দু’জনের মতাদর্শও রয়েছে। কোহালির মন্ত্র হচ্ছে, টিমে খোলামেলা আবহাওয়া তৈরি করা। যেখানে সিনিয়র-জুনিয়র নির্বিশেষে নিজেদের মনের ভাব খোলাখুলি ভাবে ব্যক্ত করতে পারবেন। কোহালি চান, মাঠ এবং মাঠের বাইরে তাঁর দলের ক্রিকেটারেরা ভয়ডরহীন থাকুন। কুম্বলের ‘হেডস্যার’-সুলভ মনোভাব সেই খোলামেলা আবহাওয়া গড়ে তোলার পক্ষে খুব অনুকূল হচ্ছে না বলে কথা উঠতে শুরু করেছে। রবি শাস্ত্রী ডিরেক্টর থাকাকালীন কোহালির মতকে বিকশিত হতে দিয়েছেন। কোহালিকে তিনি বলেই দিয়েছিলেন, দল গঠনের ব্যাপারে তাঁর কোনও পছন্দ-অপছন্দ নেই। এটা ক্যাপ্টেনের টিম, ক্যাপ্টেনকেই বেছে নিতে হবে— বারবার বলেছেন শাস্ত্রী। বলে দিয়েছিলেন, ক্যাপ্টেনই টিমের বস্‌, আমার কাজ নেপথ্যে থেকে সহায়তা করার। কুম্বলেকে কখনও এমন কথা বলতে শোনা যায়নি। ওয়াকিবহাল এক বোর্ড কর্তা বলছিলেন, ‘‘বিরাট নিজেই এত আক্রমণাত্মক। কোচ পিছন থেকে সহায়কের কাজ করাটাই ভাল। তা না হলেই সংঘাতের সম্ভাবনা।’’ আরও কারণ আছে। কোচ নিজে দল নির্বাচনী বৈঠকে ভোটাধিকারের দাবি জানিয়েছেন। যেটাকে টিমের কেউ কেউ ক্যাপ্টেনের ওপর নজরদারি করার প্রয়াস হিসেবে দেখছেন। ক্রিকেটারদের মনে কোচের টেকনিক্যাল প্রজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কোহালি বা রাহানে যখন রান পাচ্ছেন না, তখন তাঁদের যথেষ্ট সুপরামর্শ কি দিতে পারছেন কোচ? এই সংশয় থেকে গিয়েছে। রাহানেদের ভরসা এখন ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার-ই। বোলারদের ক্ষেত্রেও পরিকল্পনার অভাবে অনেক সময় দল ভুগছে বলে কথা উঠেছে। কুম্বলে নিজে থাকায় কোনও বোলিং কোচ এখনও নেওয়া হয়নি। দলের পেস বোলাররা বলতে শুরু করেছেন, সমস্যায় পড়লে তাঁরা কারও কাছে যাওয়ার লোক পাচ্ছেন না। বুঝতে পারছেন না, কে তাঁদের সঠিক দিশা দেখাবেন। কোহালি নিয়ম করেছিলেন, প্রত্যেকটি বড় সিরিজ বা টুর্নামেন্টের আগে বিশেষ ফিটনেস ক্যাম্প হবে। অথচ, এ বারে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বিশ্বমানের টুর্নামেন্টে নামার আগে কোনও রকম ক্যাম্প করে আসেনি ভারতীয় দল। কারও ফিটনেস যাচাইও হয়নি। তা নিয়েও বিরোধের গন্ধ রয়েছে। দেখেশুনে কারও কারও মনে হচ্ছে, গ্রেগ চ্যাপেল-সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পার্ট টু এসে পড়েছে। তফাত হচ্ছে, গুরু গ্রেগের মতো কোচের প্রাথমিক জয়ের পূর্বাভাস এখানে নেই। অধিনায়কের পদ বা দলে জায়গা হারানোর কোনও ভয় এখানে নেই। বরং ওভালের আকাশের মতোই মেঘলা দেখাচ্ছে কোচ কুম্বলের ভবিষ্যৎ! সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×