ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে পুলিশ কর্মকর্তার সাথে মাদক বিক্রেতার সখ্যতা

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ৩১ মে ২০১৭

বরিশালে পুলিশ কর্মকর্তার সাথে মাদক বিক্রেতার সখ্যতা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ চিহ্নিত এক মাদক সম্রাটের সাথে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) গভীর সখ্যতার ফোনালাপ ও এক পুলিশ অফিসারকে শ্বাসিয়ে মাদক বিক্রেতাকে ফোনে শোনানোর কতোপকথোনের ফোন রেকর্ড সর্বত্র ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ যেন শর্শের মধ্যে ভূত। বিষয়টি নিয়ে চরম বিপাকে পরেছেন সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার। সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে গত দুই মাসে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় চার শতাধিক মাদক বিক্রেতা ও সেবীদের গ্রেফতার করেছেন। পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে মাত্র দুইমাসেই মাদক ছেড়ে সুস্থ্য জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন অসংখ্য মাদক সেবীরা। ইতোমধ্যে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করেছে অন্যসব মাদক বিক্রেতা। ভাইরাল হয়ে যাওয়া ফোনালাপ ও বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত তিন মাস পূর্বেও জেলার উত্তর জনপদের একমাত্র মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলো গৌরনদী উপজেলা। এখানকার প্রতিটি এলাকায় হাত বাড়ালেই মুড়ি-মুড়কির মতো পাওয়া যেতো মরন নেশা ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। উপজেলার ৬০টি স্পটে একধরনের প্রকাশ্যেই বিক্রি হতো এসব মাদকদ্রব্য। এরইমধ্যে গত ২৯ মার্চ রাতে জেলা ডিবি পুলিশের বিশেষ অভিযানে দক্ষিণাঞ্চলের ইয়াবার বিক্রেতা হিরা মাঝিকে তার দুই সহযোগী ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ ওরফে মনু মোল্লা ও শহিদুল ইসলামকে থেকে আটক করা হয়। এরপর থেকেই বেরিয়ে আসতে থাকে মাদক বিক্রির সাথে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আসল পরিচয়। জিজ্ঞাসাবাদে হিরা মাঝি জানায়, দক্ষিণাঞ্চলে মাদকের মূল আমদানিকারক মানিক মাঝিসহ তাদের অন্যসব সহযোগীর নাম। এছাড়াও তারা কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় তৎকালীন গৌরনদী থানার ওসিকে এক লাখ টাকাসহ কতিপয় মিডিয়া কর্মীদের মাসোয়ারা দিয়ে মাদকের ব্যবসা করছে। হিরা মাঝির এ স্বীকারোক্তির পর সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাৎক্ষনিক থানার ওসিকে স্টান্ডরিলিজ করে অন্যদের বিরুদ্ধে অতিগোপনে তদন্ত শুরু করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলার ধানখালী গ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম ২০০৬ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেছেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করার পর ২০১৩ সালে সিআইডিতে কর্মরত ছিলেন। ওইসময় জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সাথে তার একাধিকবার গোপন বৈঠকেরও অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়েও নিয়মবর্হিভূত ভাবে বরিশাল নগরীতে রয়েছে তার জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা। নগরীর সদর গার্লস স্কুল সংলগ্ন এলাকায় জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে তার (রেজাউল করিম) বিরুদ্ধে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিমের পূর্বের কর্মস্থলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার সাথে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সাথে গভীর সখ্যতা রয়েছে। সে সুবাধেই তিনি পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের পূর্বে ২০০৬ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেছেন। প্রতিটি অভিযোগের সঠিক তদন্ত করলেই মুল ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলেও সূত্রগুলো দাবি করেছেন। মাদক সম্রাট রাসেল প্যাদার সাথে মোবাইল ফোনে কতোপকথনের ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, কেউ যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় তাকে সুযোগ দেওয়ার বিধান আছে। আমার সাথে যখন রাসেলের কথা হয়েছে তখন আমি প্রশিক্ষণে ছিলাম। জামায়াতের সাথে গভীর সখ্যতা ও ল্যান্ডের ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করলেও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থানার এক পুলিশ অফিসারকে শ্বাসিয়ে মাদক সম্রাট রাসেল প্যাদাকে ফোনে শোনানোর বিষয়ে কোন সদূত্তর দিতে পারেননি। তবে রিপোর্টটি প্রকাশ না করার জন্য তিনি বিভিন্ন দপ্তর থেকে তদবীর করিয়েছেন।
×