ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা ও ক্রয় কমে আসছে

৬ চ্যালেঞ্জের মুখে তৈরি পোশাক খাত

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৩১ মে ২০১৭

৬ চ্যালেঞ্জের মুখে তৈরি পোশাক খাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নে ৬টি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। চ্যালেঞ্জগুলো হলো- পোশাকের রফতানি প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী ধারা, পোশাকের দরপতন, ডলারের বিপরীতে টাকা ও প্রতিযোগী দেশগুলোর মুদ্রার তুলনামূলক অবস্থান, কারখানা সংস্কারে অতিরিক্ত চাপ, বন্দরের সক্ষমতার অভাব এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর শক্তিশালী অবস্থান। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সমিতি বিজিএমইএর তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিকূলতার কারণে বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা ও ক্রয় কমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে আমাদের সর্ববৃহৎ বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। তৃতীয় বৃহত্তম বাজার যুক্তরাজ্যে কমেছে ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। এছাড়া নতুন বাজারে রফতানির ক্ষেত্রে সুবিধা করতে পারছে না দেশের উদ্যোক্তারা। গত ১০ মাসে নতুন বাজারে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ২১ শতাংশ। যেখানে বিগত বছরগুলোতে এর হার ছিল ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। প্রতিনিয়তই বাংলাদেশী পোশাকের মূল্য কমছে। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার তথ্য দিয়ে বিজিএমইএ বলছে, বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের মূল্য ৪০ শতাংশ কমেছে। সংগঠনটি জানায়, প্রতিযোগী দেশগুলোর মুদ্রার তুলনায় আমাদের টাকা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে; যা মোটেই রফতানিবান্ধব নয়। বিগত ৫ বছরে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপীর অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩২ শতাংশ, তুরস্কের মুদ্রা অবমূল্যায়ন হয়েছে ১০২ শতাংশ এবং পাকিস্তানী রুপীর অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৫ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশের মুদ্রা শক্তিশালী হয়েছে ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রকৃত মান ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। ভারতীয় মুদ্রা রুপীর বিপরীতে ৬ বছরে টাকা শক্তিশালী হয়েছে ২৫ শতাংশ এবং ৮ বছরে ইউরোর বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৭ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কারখানা সংস্কার কাজে মালিকরা মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করছেন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর কারখানা সংস্কারে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে একটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাকে গড়ে ৫ কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে যা ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। বিজিএমইএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা তৈরি না হওয়ায় জরুরী চাহিদা পূরণের জন্য উদ্যোক্তাদের সময় বিশেষ আর্থিক মাশুল দিয়ে বিমানযোগে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে। বন্দরে পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত মালামাল খালাসীকরণেই দুই সপ্তাহ লেগে যায়। এরূপ পরিস্থিতিতে ক্রেতারা ভারত, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া ও মিয়ানমারে তাদের অর্ডার সরিয়ে নিচ্ছে। এদিকে প্রতিযোগী দেশগুলো বিভিন্ন প্রকার নীতি সহায়তা ও প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচীর মাধ্যমে অধিকতর শক্তিশালী অবস্থানে যাচ্ছে বলে জানান পোশাক মালিকরা। তারা জানান, ২০১০ সালে ভিয়েতনামের রফতানি ছিল ১০ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার; যা ২০১৬ সালে ছিল ২১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভিয়েতনামের বার্ষিক গড় রফতানি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভারত আগামী বছরের মধ্যে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এজন্য ৬ হাজার কোটি রুপী নগদ সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। এসব বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে আমাদের পোশাক শিল্প নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। যার কারণে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমরা ক্রমেই সক্ষমতা হারাচ্ছি। গ্যাস-বিদ্যুত সংকট ও ব্যাংক সুদের হার বেশি থাকায় শিল্পে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে অর্থনীতিতে যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি সক্ষমতা হারিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। পণ্যের অব্যাহত দরপতন, বছরে গড়ে ৮ শতাংশ হারে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং কারখানা সংস্কার ব্যয় বৃদ্ধিতে আমরা প্রতিনিয়ত সক্ষমতা হারাচ্ছি। এ সময় এ খাতে সরকারী সহয়তার দাবি জানান তিনি। আগামী ২ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রফতানির ওপর থেকে উৎসে কর সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
×