ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহরের তাপমাত্রা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৩১ মে ২০১৭

শহরের তাপমাত্রা বাড়ছে

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং নগর এলাকা উষ্ণ হয়ে ওঠা, এই দ্ইু ইস্যুর প্রভাবে ২১০০ সালের মধ্যে কোন কোন শহরের তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস (১৪.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট) পর্যন্ত বাড়তে পারে। সদ্য প্রকাশিত এক সমীক্ষায় গবেষকরা এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। গার্ডিয়ান। এ ধরনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি শহরে বসবাসকারীদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় শ্রমিক হারাতে পারে। পানির মতো প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ইতোমধ্যেই চাপ তৈরি হয়েছে তা আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। একুশ শতকজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা চলতে থাকলে সবচেয়ে খারাপ কি পরিণতি ঘটতে পারে তার ওপর অনুমান করে সমীক্ষাটি করা হয়েছে। নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালে সমীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। চলতি শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই সবচেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ শহরগুলোর এক-চতুর্থাংশের তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ হবে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাদ বাকি অংশের ওপর ‘আরবান হিট আইল্যান্ড’ (ইউএইচআই) প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাবে। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আশপাশের এলাকা থেকে শহর এলাকার তাপমাত্রা বেশি হবে। শহরের মধ্যে পার্ক, লেক ও নিচু জলাশয় যেগুলো পরিবেশ ঠা-া রাখা তা কংক্রিট ও অ্যাসফল্ট দিয়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহর এলাকা ঠা-া হওয়ার সুযোগ থাকছে না। এ জায়গাগুলো আশপাশের জায়গার থেকে বেশি গরম হয়ে উঠবে। সমীক্ষা প্রতিবেদনের সহ লেখক নেদারল্যান্ডসের ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের ফ্রান্সিসকো এস্ত্রাদা বলেন, শীর্ষ জনবহুল ৫ শতাংশ শহরের তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ধারাটি কি রকম হতে পারে তার ধারণা পেতে এস্ত্রাদা ও তার দল নানা রকম প্রজেকশন ব্যবহার করেন। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে শহর এলাকার মানুষকে কত মাশুল গুনতে হবে সেটি যাচাই করে দেখাই তাদের এ গবেষণার মূল উপজীব্য ছিল। তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপর। এর ফলে শহর অঞ্চলের জিডিপি কমে যাবে। ২০৫০ সাল পর্যন্ত জিডিপি কমবে গড়পড়তা ১.৪ থেকে ১.৭ শতাংশ পর্যন্ত। ২০৫০ থেকে ২১০০ সালের মধ্যে এ হার বেড়ে হবে ২.৩ থেকে ৫.৬ এর মধ্যে। ২১০০ সালের মধ্যে কোন কোন শহরের জিডিপি ১০.৯ শতাংশ পড়ে যেতে পারে। বৈশ্বিক তাপমাত্রার ফলে সৃষ্ট ইউএইচআইর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ প্রভাবে শহরগুলোর তাপমাত্রা বাড়বে, হারাবে অর্থনৈতিক সক্ষমতা। ইউএইচআইরের প্রভাব কমাতে এখন থেকেই বেশি করে বৃক্ষরোপণ ও ছাগে বাগান তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমাতে এগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ভূ-পৃষ্ঠের মাত্র এক-শতাংশ জায়গা দখল করে রেখেছে শহরগুলো। কিন্তু মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের ৮০ শতাংশ আসে সেখান থেকে এবং মোট জ্বালানির ৭৮ শতাংশ খরচ হয়ে থাকে সেখানে। মোট কার্বন ডাই-অক্সাইডের ৬০ শতাংশ নির্গমন হয়ে থাকে শহর এলাকায়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা শিল্পায়ন পূর্ব যুগের তুলনায় দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসে ধরে রাখার জন্য ২০১৫ সালে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে মতৈক্য হয়েছিল। নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানীদের এ সমীক্ষায় ১৯৫০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১ হাজর ৬৯২টি শহরের উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
×