ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বামপন্থী পাত্র চাই

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৩১ মে ২০১৭

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

অভিনব বিজ্ঞাপন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক পত্রিকায় বিয়ের জন্য পাত্র চাইÑ এই মর্মে একটি বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। যেটা নিয়ে কোন কোন মহলে সৃষ্টি হয়েছে বেশ খানিকটা কৌতূহল। এক ভদ্রলোক বিজ্ঞাপনটি দিয়ে তাতে তার বোনের জন্য চেয়েছেন বামপন্থী পাত্র। বিয়ের জন্য যা যা প্রয়োজন সে সবের সঙ্গে তিনি চেয়েছেন পাত্রকে বামপন্থী ঘরানার বা মানসিকতার হতে হবে। এই বিষয়টি নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল। বিয়ের জন্য কনে খুঁজতে গেলে লাগে বয়স, গায়ের রং কালো না ফর্সা, কী পড়াশোনা করেছে, মেয়ে হলে দীর্ঘাঙ্গি, গৃহকর্মে নিপুণা বা কোথায় চাকরি করছে তার বিবরণ, ছেলে হলেও ডাক্তার না ইঞ্জিনিয়ারÑ এসবের খোঁজ দরকার হয়। কয়টা বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে, বিয়ে করে বউকে ইউরোপ-আমেরিকায় নিয়ে যাবে কিনাÑ মোটামুটি এ সবই জানতে চাওয়া বা জানানো হয় বর বা কনের কাছ থেকে। বিশেষ করে হিন্দু সমাজে বংশ-গোত্র ইত্যাদি দেখা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে অসবর্ণ বিয়েতে আপত্তি নেইÑ এমনও ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু পাত্র বা পাত্রী ‘বামপন্থী না ডানপন্থী’ এমন তথ্য জানতে চাওয়া হয় কিনা সন্দেহ! যে ভদ্রলোকটি উল্লিখিত ওই বিজ্ঞাপন দিয়েছেন তার বক্তব্য হচ্ছে, তিনি কোন দল করেন না। কিন্তু তার পরিবারের সবাই বাম ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। তাই তার বোনের বিয়ে যদি হয় অন্য কোন ‘পন্থী’র সঙ্গে, তাহলে সে পড়বে সমস্যায়। তাই তার জন্য হতে হবে বামপন্থী বর। খবরটি চমকপ্রদ বলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচারিত হয়েছে এবং একই সঙ্গে সেখানে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্রƒপও করেছে কেউ কেউ। যে পশ্চিমবঙ্গে কিছুদিন আগেও ছিল বামপন্থীদের সরকার। বাম ধারার তথা বাম মতবাদের ব্যাপক প্রভাব যে পশ্চিমবঙ্গে সেখানে ওই ধারাটি ক্ষয়িষ্ণু পর্যায়ে চলে গেছে অনেকখানি। তাই বাম পাত্র খোঁজা নিয়ে হাস্যরস, তামাশা। এর বিরুদ্ধ মতও রয়েছে। এই প্রসঙ্গটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন সিপিআইএমের এক নেতা। তিনি বলেছেন, তাঁদের রাজনীতির প্রতি মানুষের ব্যাপক সমর্থন এখনও যে রয়েছে এ বিজ্ঞাপনটি তারই প্রমাণ দেয়। সে যাই হোক, বিষয়টি নিয়ে যে যার মতো ব্যাখ্যা দেবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তবে শেষ পর্যন্ত যোগ্যমতো পাত্র জুটেছে কিনা প্রচারিত খবরে তা জানা যায়নি। শুধু জানা গেছে বেশ কয়েকজন ‘বামপাত্র’ নাকি বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে সাড়াও দিয়েছেন। মোটরসাইকেলের বদলে... ভারতের আরও একটি খবর। ঘটনাটি ঘটেছে রাচি অঞ্চলে। সেখানে এক বিয়ের অনুষ্ঠান। সব ঠিকঠাক। কনে পক্ষ বর পক্ষকে বরণ করার জন্য প্রস্তুত। বর চেয়েছে একটি মোটরসাইকেল। সেটাও কিনে রাখা হয়েছে। সব প্রস্তুতি শেষ। তারপর যথাসময়ে এলো বর পক্ষ। সঙ্গে বেশ কয়েকজন বরযাত্রী। সবাইকে অভ্যর্থনা জানানো হলো যথাযথ নিয়মে। এখন কথাবার্তা হবে। বিয়ের মন্ত্র পড়ানো হবে। ঠিক এমন সময় যৌতুকের মোটরসাইকেলটি চোখে পড়ল বরের। সঙ্গে সঙ্গে তার ঘোরতর আপত্তি। না, এটাতে চলবে না। এর দাম কম, যে মোটরসাইকেল সে চেয়েছে সেটা কেনা হয়নি। সেটা এর চেয়ে দামী। সেটাই দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো নানা বাহানা, ওজর আপত্তি। ওই মোটরসাইকেল দিতে হবে। পাত্র এবং তার সঙ্গে তার পক্ষের লোকজন শুরু করল গাইগুই। সঙ্গে সঙ্গে মহা গ-গোল। কী হলো, কী হলো! সেজেগুজে বসেছিল অষ্টাদশী কনে। কথাটা তার কানে গেল। সে দাঁড়াল ঘুরে। দরকার নেই এ বিয়েরÑ মহা হট্টগোল শুরু হয়ে গেল। কনে রুখে দাঁড়াতেই তার বাড়ির লোকজন ও পাড়া-প্রতিবেশী সবাই যোগ দিল তার সঙ্গে। লোকজন ঘিরে ধরল বরকে। এ বিয়ের দরকার নেই! বরযাত্রীরা বিয়ের আসর ছেড়ে যে যেদিকে পারল দে ছুট! বরের গলার ফুলের মালা খুলে নিয়ে পরানো হলো জুতার মালা। তারপর গ্রামের লোকজন ঘোষণা করল তাদের গ্রামের কোন মেয়ের বিয়েতে যদি কোন বর যৌতুক নিয়ে দরকষাকষি করে তাহলে তার ভাগ্যেও জুটবে পাদুকার ওই মালা! মেয়ের বিয়েতে পণ দেয়ার রীতি রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে বিয়ের কাজ আর সম্পন্ন হলো না। বরকে ফিরতে হলো অপদস্থ হয়ে। ‘পণের’ বিষয় নিয়ে কনে প্রায় জীবনপণ করে যেভাবে গ্রামে তার লোকজনকে নিয়ে রুখে দাঁড়াল, তাতেই ঘটনাটির এভাবে সমাধান হলো, সেটাও স্পষ্ট।
×