ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ল্যান্ডফোন সমাচার

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৩১ মে ২০১৭

ল্যান্ডফোন সমাচার

ল্যান্ডফোনের গ্রাহক সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমছে এ সংবাদ এখন আর কারও অজানা নয়, গ্রাহক ভোগান্তিই যে এর মূল কারণ তাও অস্বীকার করা যাবে না। তথাপি যখন প্রশ্ন ওঠে কেন কমছে গ্রাহক সংখ্যা। একশ্রেণীর চরম দায়িত্ব-কর্তব্যহীন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি এবং উদাসীনতাই যে এ জন্য দায়ী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বোধোদয় ঘটছে কই! যেখানে এক সময় ল্যান্ডফোনের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১০ লাখ, সেখানে বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ। সেবার গুণগতমান ভাল এবং নিয়মিত হলে কি গ্রাহক সংখ্যা কমে? যেখানে আমাদের প্রতিবেশী দেশসহ সকল দেশের ল্যান্ডফোনের ব্যবহার উত্তোরত্তর বাড়ছে, সেখানে বাংলাদেশের গ্রাহক কমবে কেন? ভাল সেবা পাওয়া গ্রাহকদের অধিকার, কিন্তু সেই অধিকার যখন অনিশ্চিত হয়ে যায়, পক্ষান্তরে বিড়ম্বনা বাড়তে থাকে, তখন গ্রাহকরা এক সময় নিরাস হয়ে ল্যান্ডফোন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। অথচ হওয়া উচিত ছিল রাষ্ট্রের রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য অধিকতর উদ্যোগী ও মনোযোগী হওয়া। গ্রাহক তার গাঁটের পয়সা খচর করে প্রয়োজনীয় সেবা চান, কিন্তু সেবার পরিবর্তে যখন তার ভাগ্যে জোটে বিড়ম্বনা তখন মুখ ফিরিয়ে নেন। ভৌতিক বিল, ফোন ডেড থাকা, অভিযোগের পর অভিযোগ দিয়েও সময়মতো ফোন সচল না হওয়া ইত্যাদি কারণে ফোন ব্যবহার স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। যতক্ষণ পর্যন্ত গ্রাহকদের সেবা সার্বিকভাবে নিশ্চিত করা না হবে, ততক্ষণ এ ফোনের ব্যাপারে কেউ আশ্বস্ত হবেন তা মনে করার কোন কারণ নেই। এ কথা সত্য, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অপরিকল্পিতভাবে প্রতিনিয়ত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ল্যান্ডফোনের তার কাটা পড়ে, এতে ফোন দীর্ঘ সময়ের জন্য বিকলও হয়। কিন্তু কাজের সমন্বয়হীনতা এবং অসতর্কতার জন্য তো আর গ্রাহকরা দায়ী নন? তারা যথাযথ সেবা না পেলে তো ক্ষুব্ধ হবেনই। তাদের ক্ষোভ নিরসনের দায়িত্ব নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই। আসলে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, কোন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক তা খতিয়ে দেখা। গ্রাহকদের যে কোন অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত তার সমাধান করাই গ্রাহক বাড়ানোর উপায়। সেবা নিশ্চিত করা না গেলে গ্রাহক যে কমতেই থাকবে এটি জানা কথা। বর্তমানে ওয়াসার ড্রেন নির্মাণ কাজের ফলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যে কয়েক হাজার টেলিফোন বিকল্প হয়ে রয়েছে, কত দ্রুত তা সচল করা যাবে সে ব্যাপারে কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ বিটিসিএল কর্তৃপক্ষের আছে কি? দিনের পর দিন মাসের পর মাস গ্রাহক সেবা বঞ্চিত হন, তা হলে ল্যান্ডফোন ব্যবহারে তারা আগ্রহী থাকবেন কি? তা ছাড়া তার চুরির প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন কি? সবচেয়ে বড় কথা, ল্যান্ডফোন ব্যবহার সহজ ও সাধ্যের মধ্যে রাখতে হলে এককালীন জামানতের টাকা কেন আরও কমানো হচ্ছে না। জামানত কম রাখলে তো গ্রাহক সংখ্যা রাতারাতি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। যত গ্রাহক তত আয় এই নীতি বাস্তবসম্মত। মোবাইল ব্যবহারের ফলে ল্যান্ডফোনের উপযোগিতা কমছে, কিন্তু এর সঙ্গে তো নতুন প্রযুক্তি যোগ করার কথা ভাবতে হবে। কেবল লাইনে ইন্টারনেট যুক্ত করা কি দুরূহ, বিষয়টি বিবেচনার প্রয়োজন বৈকি!
×