ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খাতা পুনঃনিরীক্ষণে ফল পরিবর্তন হয়েছে এক হাজার ৬৭৯ শিক্ষার্থীর

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩১ মে ২০১৭

খাতা পুনঃনিরীক্ষণে ফল পরিবর্তন হয়েছে এক হাজার ৬৭৯ শিক্ষার্থীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে সকল বোর্ডেই অসংখ্য ভুল ধরা পড়েছে। পুনঃনিরীক্ষণে পরিবর্তন হয়েছে অনেক পরীক্ষার্থীর ফল। আগের ফলে ফেল হলেও তাদের অনেকেই পাস করেছে। অনেকে আগে জিপিএ-৫ না পেলেও পুনঃনিরীক্ষণের ফলে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ফল পরিবর্তন হয়েছে ঢাকা বোর্ডে। এখানে এক হাজার ৬৭৯ শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। অন্যান্য বোর্ডেও পরিবর্তন হয়েছে অনেকের ফল। এদিকে বরিশাল বোর্ডে এবার এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অসদুপায় অবলম্বনকারী ৫৭ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের পর মঙ্গলবার বিভিন্নভাবে শিক্ষা বোর্ডগুলো নিজেদের ফল জানানো শুরু করেছেন। যেখানে ফলের ব্যাপক পরিবর্তনের চিত্রই ধরা পড়েছে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে আলাদা আলাদাভাবে টেলিফোনে যোগাযোগ করে ফল পরিবর্তনের তথ্য পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও স্ব স্ব বোর্ডে গিয়ে নিজেদের ফল জানতে পারছেন। কিন্তু কেন ফলে বিশাল এই সংখ্যা পরিবর্তন? এই প্রশ্নের উত্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সকলেই বলছেন, দ্রুত ফল প্রকাশের কারণে তাড়াহুড়াই এই অবস্থার কারণ। মূলত তিন ধরনের ভুল ধরা পড়ছে। এক, কিছু খাতায় নম্বরের যোগফল ঠিক ছিল না। দুই, কিছু উত্তরের নম্বর যোগ করা হয়নি। আর তিন, ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাটেও বেশবিছু ভুল পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এর আগে প্রক্রিয়া সহজ, হয়রানিমুক্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় এবার ব্যাপক সাড়া পড়েছিল খাতা পুনঃনিরীক্ষণে। খাতা পুনঃনিরীক্ষণে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ফলে সবচেয়ে বেশি ভুল ধরা পড়েছে। যদিও এ বোর্ডে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। আবেদনের পর খাতা পুনঃনিরীক্ষণে এ বোর্ডে এক হাজার ৬৭৯ জনের ফল পরিবর্তন ছাড়াও নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৭০ জন শিক্ষার্থীর। এদিকে ফলকে চ্যালেঞ্জ করে চট্টগ্রাম বোর্ডে আবেদনের প্রেক্ষিতে ফেল থেকে পাস করেছে ৫২ শিক্ষার্থী। পুনঃনিরীক্ষণের ফলে এ বোর্ডে ৬৮৭ শিক্ষার্থীর ফল বা গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৭ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ মাহবুব হাসান বলেন, এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ আবদনের প্রেক্ষিতে বেলা ১২টার দিকে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। যা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। ২১ হাজার ৯৩৯ শিক্ষার্থীর আবদনের প্রেক্ষিতে ৫৭ হাজার ৮১৪টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণ করা হয়। সিলেট শিক্ষা বোর্ডেও বেশকিছু শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। বোর্ডের সচিব মোঃ মোস্তফা কামাল আহমেদ জানিয়েছেন, এ বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছে ২৩৪ জনের। ফেল থেকে পাস করেছেন ৩৫ জন। এছাড়া নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ শিক্ষার্থী। এদিকে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র জানিয়েছেন, যশোর বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছে ১৯৯ জনের। ফেল থেকে পাস করেছে ৮৮ জন এবং নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭৮ জন। বরিশাল বোর্ডে পুনঃনিরীক্ষণে ২০৯ পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। ফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিল ৯ হাজার ৭৩১ পরীক্ষার্থী। মোট ২৩ হাজার ৪১২ আবেদন জমা পড়ে। পুনঃনিরীক্ষায় ফেল থেকে পাস করেছেন ২৩ পরীক্ষার্থী। এছাড়া ২১ জন নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ বোর্ডে মোট ২৪টি বিষয়ের মধ্যে গণিতে আবেদন পড়েছিল চার হাজার ৬৮৬টি। খ্রিস্টধর্ম খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করে দুইজন। এদিকে এ বোর্ডে এবার এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অসদুপায় অবলম্বনকারী ৫৭ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে থেকে ৫৪ শিক্ষার্থীকে ২০১৭ সালের জেএসসি এবং ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হলেও ‘খ’ শ্রেণীভুক্ত গুরুতর অপরাধী ২ শিক্ষার্থীকে ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায়ও বসতে দেয়া হচ্ছে না। বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ৩০তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গেল বছরের জেএসসি এবং চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মোঃ আনোয়ারুল আজিম জানান, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনকারী মোট ৩৯ পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের দুই ক্যাটাগরি অর্থাৎ ‘ক’ এবং ‘খ’ শ্রেণীভুক্ত অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত দোষী সাব্যস্ত হয়েছে ৩৬ জন এবং ‘খ’ শ্রেণীভুক্ত দোষী সাব্যস্ত হয়েছে ৩ পরীক্ষার্থী। যারা ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত দোষী সাব্যস্ত হয়েছে তাদের ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। তবে তাদের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ থাকলে ২০১৮ সালের এসএসসি পারীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু ‘খ’ শ্রেণীভুক্ত দোষী সাব্যস্ত হওয়া ৩ পরীক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষা বাতিলের পাশাপাশি ২০১৮ সালের পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
×