ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এসেছে সাতক্ষীরার আম, চাঁপাইয়েরটা আসবে কয়েক দিন পরে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩১ মে ২০১৭

এসেছে সাতক্ষীরার আম, চাঁপাইয়েরটা আসবে কয়েক দিন পরে

এমদাদুল হক তুহিন ॥ তীব্র দাবদাহে অধিকাংশ আম সবুজ রং ছাড়িয়ে হয়েছে লাল। পাকতে শুরু করেছে। স্থানীয় পাকা আমের স্বাদে মেতে উঠছে শিশু-কিশোর। স্বাদ নিচ্ছে সব বয়সী মানুষ। রাজধানীর বাজারেও উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন অঞ্চলের আম। তবে সাতক্ষীরার হিমসাগরে সয়লাব পুরো রাজধানী। মিলছে বাজার-ফুটপাথ সর্বত্রই। বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। তবে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম এখনও বাজারে আসেনি। বিখ্যাত এই আম বাজারে আসতে আরও সময় লাগবে অন্তত ১০ দিন। ধারণা করা হচ্ছেÑ ১০ রোজা থেকে চাঁপাইয়ের আমের স্বাদ পাবেন রাজধানীবাসী। আমচাষী, কৃষি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আমের ফলন ভাল হয়েছে। অন্য যে কোন বারের চেয়ে গাছে গাছে ব্যাপকহারে মুকুল আসে। সবুজ আমের ভারে ন্যুয়ে পড়ে অধিকাংশ গাছের ডাল। তবে শেষ সময়ের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষীদের দাবি, অন্তত ৫০ শতাংশ আমই ঝরে গেছে। এতে বাগান মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও লিজ নেয়া ব্যক্তিরা ক্ষতির মুখে পড়বে। এদিকে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুমটিতে ১৯ লাখ টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক কুদরত-ই-গনি জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি মৌসুমে আমের ফলন ভাল হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে উৎপাদন ভাল হবে। বছরটিতে ১৯ লাখ টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারে এখন যে আম পাওয়া যাচ্ছে তা সাতক্ষীরার। অবস্থানগত কারণে দক্ষিণাঞ্চলের আম আগে পাকে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম এখনও বাজারে আসেনি। তিনি আরও বলেন, আগাম জাতের মধ্যে গোপালভোগ ও বোম্বাই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কোনক্রমেই অপরিপক্ব আম বাজারে আসার সুযোগ নেই। তথ্যমতে, আম উৎপাদনে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ মিলিয়ন টন আম উৎপাদিত হয়। আর দেশে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার আমের বাজার রয়েছে। প্রতিনিয়তই এ বাজার প্রসারিত হচ্ছে। বহির্বিশ্বে রফতানি হচ্ছে আম। চলতি বছরেও রফতানি হয়েছে। গতবছর আম রফতানি হয়েছে ৩০০ টন। সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে উৎপাদিত আম রফতানি করে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। তারা অন্য চাষীর তুলনায় অধিক দাম পাচ্ছে। অন্য এক তথ্য থেকে দেখা গেছে, মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে দেশে আমের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর আমের জন্য বিখ্যাত। মূলত রাজশাহী বিভাগের এই চার জেলা আমের সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকে। তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে রাজশাহীর এই চার জেলায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। তবে সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ৫ বছরে ওই অঞ্চলে আমের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। চলতি বছরেরও আমের ভাল ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তীব্র দাবদাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম পাকতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত তিন জাতের আম বাজারে আসতে শুরু করবে। বাগানীদের তথ্যমতে, ১০ রোজা থেকে রাজধানীর বাজারে পুরোদমে চাঁপাইয়ের আম পাওয়া যাবে। তাদের তথ্যমতে, কিছু কিছু জাতের আম বাগানে লাল রং ধারণ করেছে। আবার কিছু আম বাজারে পাঠানোও শুরু হয়েছে। তবে এখনও বেশিরভাগ আম সবুজ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আমচাষী মোহাম্মদ কামরান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আগাম আমের মধ্যে লকনা, রানী প্রসাদ ও গোপালভোগ পাকতে শুরু করেছে। মাঝে মধ্যে দুই একটা হিমসাগরও পাকছে। বয়স্ক গাছগুলোর আমও পেকেছে। আশা করছি, ১০ দিন পর থেকে রাজধানীবাসী পুরোদমে চাঁপাইয়ের আমের স্বাদ পাবেন। একই কথা বলেন শিবগঞ্জের আরেক বাগানী সিরাজুল ইসলাম। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, গোপালভোগ পাকতে শুরু করেছে। হিমসাগর পাকতে আরও ১০ দিন লাগবে। আর আম্রপালি পাকতে ১০ থেকে ১৫ দিন লাগতে পারে। তবে স্থানীয় জাতের অনেক আম আরও আগেই পাকতে শুরু করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি বছর ২ থেকে ৩ হাজার টাকা মনে আম বিক্রি হতে পারে। বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর গাছে প্রচুর মুকুল আসলেও শেষ সময়ের ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমের। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গাছগুলোর ৫০ শতাংশ আমই ঝরে গেছে। এতে বাগান মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও যারা বাগান লিজ নিয়েছিলেন তাদের ব্যাপক ক্ষতি গুনতে হবে। আর আম উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা রয়েছে। আমচাষী কামরান বলেন, শেষ সময়ে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমের উৎপাদন কিছু কমবে। অনেক বাগানের ৫০ শতাংশ আমই ঝরে গেছে। সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় কিছু কিছু আম পাকতে শুরু করে। তবে ২৫ মে থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম পাড়ায় তেমন কোন বাধা নেই। জানা গেছে, বাজারে যাতে অপরিপক্ব আম উঠতে না পারে সেজন্য আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় পৃথক পৃথক সময় নির্ধারণ করা হয়।
×