ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চোখের জল, ভালবাসায় টট্টির বিদায়

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৩০ মে ২০১৭

চোখের জল, ভালবাসায় টট্টির বিদায়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইতালি জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ফ্রান্সেসকো টট্টি সিনিয়র ক্লাব ক্যারিয়ারে শুরু থেকেই খেলেছেন এএস রোমার হয়ে। সেই ১৯৯২ সাল থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা দিয়েছেন ইতালিয়ান ক্লাবটির। বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠিত ক্লাব টট্টিকে দলে ভেড়াতে চাইলেও রোমা ছেড়ে যাননি। ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে পড়া ক্লাবটি থেকেই নিতে চেয়েছিলেন অবসর। তার সেই ইচ্ছাটাই পূরণ হলো। অবশেষে রোমার হয়ে দীর্ঘ ২৫ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন টট্টি। বিদায় বেলায় নিজে কেঁদেছেন, সতীর্থ, সমর্থকদেরও কাঁদিয়েছেন। রবিবার রাতে ইতালিয়ান সিরি এ লীগে জেনোয়ার বিপক্ষে রোমার হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেন টট্টি। এই রাতে শেষ হয়েছে ২০১৬-১৭ মৌসুমের ইতালিয়ান সিরি এ লীগের খেলাও। ৪০ বছর বয়সী টট্টি ক্লাব ক্যারিয়ারে একমাত্র রোমার হয়ে খেলেছেন। ৭৮৬ ম্যাচে তার গোল ৩০৭। জেনোয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৫৪ মিনিটে সালাহর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন। ৩-২ গোলর জয়ে দীর্ঘদিনের যোদ্ধাকে বিদায় জানিয়েছে দলটি। ম্যাচ শেষে সমর্থকদের উদ্দেশে চিঠি পড়ে শোনান টট্টি। তিনি বলেন, আমি ভীত। দেখতে পাচ্ছি না, ভবিষ্যতটা কেমন হবে। কল্পনা করুন, আপনি একটা শিশু, যে ভাল একটা স্বপ্ন দেখছে। আপনার মা আপনাকে ডেকে তুলছে স্কুলে যাওয়ার জন্য। আমি স্বপ্ন দেখে যেতে চান। আপনি স্বপ্নের মধ্যে ফিরে যেতে চান কিন্তু আপনি কখনই তা পারেন না। এখন সেটা স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। আমি আর ফিরতে পারব না। টট্টিকে বিদায়ী উপহার হিসেবে দেয়া হয় তার জার্সি নম্বর ‘১০’ লেখা বাঁধাই করা একটি ফ্রেম। রোমার এই কিংবদন্তির বিদায়ের সময় মাঠে ছিলেন তার স্ত্রী-সন্তানরা। মাঠে ঢোকার সময় সতীর্থরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানান টট্টিকে। এত ভালবাসায় সিক্ত বিশ্বকাপজয়ী এই ফরোয়ার্ড বলেন, শেষ পর্যন্ত এটা শেষ হলো। যে মুহূর্তটা আমি কখনই আশা করিনি, উপস্থিত হয়েছে। ম্যাচ শেষে সতীর্থরা তাকে কাঁধে তুলে তাকে বিদায় জানান। ১৯৯৩ সালে ব্রেশশার বিপক্ষে ২-০ গোলে জেতা ম্যাচ রোমার হয়ে অভিষেক হয় টট্টির। সে সময় তার বয়স ছিল ১৬ বছর। গত ২৫ মৌসুমে রোমায় ১৬ কোচের অধীনে খেলেছেন তিনি। রোমে জন্ম নেয়া টট্টির সিরি এ লীগে গোল ২৫০, যা লীগের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ১৯২৯ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত সিরি এ লীগে খেলা সিলভিও পিওলা এ তালিকায় শীর্ষে। ২০০৬ সালে ইতালির বিশ্বকাপ জেতা পথে সব ম্যাচই (৭টি) খেলেছেন টট্টি। তবে রোমার হয়ে তার অর্জন খুব বেশি আহামরি নয়। ২০০১ সালে একবার সিরি এ শিরোপা জেতা এবং দুইবার কোপা ইতালিয়া জিতেছেন। অনেকেই মনে করেন রোমা ছেড়ে অন্য কোন ক্লাবে যোগ দিলে টট্টির ক্লাব ক্যারিয়ার সাফল্যে মোড়ানো হতো। এ বছরের শুরুর দিকে টট্টি নিজেও জানিয়েছিলেন, ব্র্রজিলিয়ান রোনাল্ডোর সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদে খেলার সুযোগ ছিল তার। কিন্তু যাননি। আশা করা হয়েছিল, ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর টট্টি রোমার পরিচালক হবেন। মৌসুমের শুরুতে রোমার ফুটবল ডিরেক্টর সে ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। কিন্তু এক বিবৃতিতে টট্টি নিজেই জানান, অন্য কোন ক্লাবে খেলতে পারেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সোমবার থেকে আমি আবার শুরু করার জন্য প্রস্তুত। আমি নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি। টট্টি ইতালি জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন ২০০৬ সালে। এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন ক্লাব ফুটবল। বয়সটা ৪০ বলেই মাঝে মধ্যে ওঠে অবসর প্রসঙ্গ। রোমা অধ্যায় শেষ করার পরও কথাটা উঠেছে। তবে টট্টি জানিয়ে দিয়েছেন, এখনই থামছেন না। নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি তিনি। রোমায় ২৫ মৌসুম কাটিয়ে দেয়ার পরও অবসরের ভাবনা নাকি কখনই টট্টিকে আচ্ছন্ন করে ফেলেনি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেও নাকি তার একেবারেই ভাল লাগে না। এর আগে একবার এ প্রসঙ্গে টট্টি বলেছিলেন, ফুটবল তার কাছে একটি খেলা। তিনি এখনও এ খেলাটি উপভোগ করেন এবং সব সময়ই সামনের কোন ম্যাচ তাকে রোমাঞ্চিত করে। সুতরাং তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, অবসর নেয়ার সময় তার এখনও আসেনি। টট্টি বলেছিলেন, অবসর নিয়ে কথা বলার সময় আসেনি বলেই আমি মনে করি। অবসর যখন নেব, তখন দেখা যাবে, কিন্তু অবসর নিয়ে কথা বলার জন্য এটি উপযুক্ত সময় নয় বলেই আমি মনে করি। জাতীয় দল ইতালির হয়ে ৫৮ ম্যাচ খেলা টট্টি গোল করেছেন ৯। ২০০৬ ইতালির বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন তারকা এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।
×