ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৌলভিত্তির কোম্পানির অভাব

পুঁজিবাজারে বিদেশীদের বিনিয়োগ সাড়ে ৬ শতাংশ কোম্পানিতে

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ৩০ মে ২০১৭

পুঁজিবাজারে বিদেশীদের বিনিয়োগ সাড়ে ৬ শতাংশ কোম্পানিতে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিদেশীদের চোখে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে শক্ত মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির সংখ্যা তুলনামূলক কম। সে কারণে তাদের লেনদেন সীমাবদ্ধ হয়ে আছে গুটিকয়েক কোম্পানিতে। অন্য যে কোন সময়রে চেয়ে বর্তমানে বিদেশী বিনিয়োগ বেশি থাকলেও তাদের পছন্দের কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে না। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মাত্র সাড়ে ৬ শতাংশ বা ২২ কোম্পানিতে বিদেশীদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ রয়েছে। তাদের বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হলে পুঁজিবাজার ভালমানের কোম্পানির বাজারে আনতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তাদের মতে, গ্রামীণফোনের মতো আরও কিছু ভাল কোম্পানি বাজারে আসলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। ডিএসইর তথ্যমতে, বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৩৩৩ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র ২২টিতে বা সাড়ে ৬ শতাংশ কোম্পানিতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে। ২২৩টি বা ৬৭ শতাংশ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডে তাদের কোন বিনিয়োগই নেই। এক পরিসংখ্যনে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকে। এই কোম্পানিতে বিদেশীদের বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। পরের অবস্থানে থাকা অলিম্পিক ইন্ড্রাস্টিজে বিদেশীদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা। এই প্রতিষ্ঠানে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া ডিবিএইচে ৩১ দশমিক ২, বিএসআরএম স্টিলে ৩০ দশমিক ৬, নদার্ন জুটে ৩০, শেফার্ড ইন্ড্রাস্টিজে ২৭ দশমিক ৫, রেনেটায় ২১ দশমিক ৮, স্কয়ার ফার্মায় ১৫ দশমিক ৭, ইসলামী ব্যাংকে ১৫ দশমিক ২, বিট্রিশ আমেরিকায় ট্যোবাকোয় ১৪ দশমিক ৪ এবং বেক্সিমকোতে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিনো বাংলার ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, রিলায়েন্সের ৯ শতাংশ, সিটি ব্যাংকের ৮ দশমিক ৭ শতাংশ, গ্রীন ডেলটায় ৮ দশমিক ২৫, এনভয় টেক্সটাইলে ৭, স্কয়ার টেক্সটাইলে ৬ দশমিক ৭, সাউথইস্ট ব্যাংকে ৬ দশমিক ৬, লিগাসি ফুডে ৬ দশমিক ১, মেরিকোতে ৬ ও রহিমাফুডে ৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তবে এর বাইরে এপ্রিল মাসে ওয়ান ব্যাংকের বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে। এছাড়া আরও কিছু ব্যাংকের শেয়ার বিদেশী পোর্টফলিওতে যোগ হচ্ছে। উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর মোট শেয়ারের অন্তত ৫ শতাংশ শেয়ার বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কিনে রেখেছেন। ১৪ কোম্পানির মোট শেয়ারের অন্তত ৩ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। এর বাইরে অল্প কয়েকটি কোম্পানিতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কিছুটা বিনিয়োগ রয়েছে। আর ২২৩টি অর্থাৎ প্রায় ৬৭ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কোন বিনিয়োগই করেননি। এছাড়া তালিকাভুক্ত আরও ৭৮টি কোম্পানিতে বিদেশীদের বিনিয়োগ রয়েছে। তবে তা খুবই কম। বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সাধারণত কোম্পানির মৌলভিত্তি ও আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে শেয়ার কেনেন। তাদের বিশ্লেষণও আন্তর্জাতিক মানের। যে কারণে আমাদের দেশের বাজারে তাদের দৃষ্টকোন থেকে ভাল মানের কোম্পানির সংখ্যা কম। তারা বলেন, পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে পারলে তা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হবে। কিন্তু বিদেশী শেয়ার বিনিয়োগকারীরা এখানে আসার ক্ষেত্রে ভাল কোম্পানির অভাবের কথা বলেন। পাশাপাশি যেসব কোম্পানি বাজারে রয়েছে তাদের আর্থিক প্রতিবেদেনর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন করেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। তাই পুঁজিবাজারের গতিশীলতা বাড়াতে ভাল মৌলভিত্তির কোম্পানির সংখ্যা সংখ্যা বাড়াতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের কোম্পানিতে বিদেশীদের বিশ্বাস কম। যে কারণে তারা এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চান না। তাছাড়া আমাদের পুঁজিবাজারে ভালমানের কোম্পানির অভাব রয়েছে। বিদেশীদের বিনিয়োগ না করার এটা একটি বড় কারণ হতে পারে। এখানে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা মৌলভিত্তি সম্পন্ন এসব কোম্পানির বাইরে বিনিয়োগ করেন না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ভালমানের কোম্পানি তারিকাভুক্তির বিকল্প হতে পারে না। সেই জন্য পুঁজিবাজারে বহুজাতিক ভাল ভাল কোম্পানি পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে।
×