ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পোনা শিকার

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৩০ মে ২০১৭

পোনা শিকার

নদীমাতৃক বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ সারা বিশ্বে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান আজ চতুর্থ। এ দেশের নদ-নদীর সংখ্যা যেমন অনেক, একইভাবে হরেক রকম মাছ উৎপাদনেও তেমন কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। তারপরও বিভিন্ন ধরনের বৈরী পরিস্থিতি তৈরি করা হয় এই মাছ চাষ প্রক্রিয়ায়। আইনানুগ ব্যবস্থা প্রয়োগ করে মাছের পোনাকে সযতেœ সংরক্ষণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিশেষ উদ্যোগ নিতে হয়। তারপরও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না এই মাছের পোনা রক্ষা। কিছু অসাধু ব্যক্তি অন্যায়ভাবে পোনা মাছ ধরার যে নিয়ম ভাঙ্গার ব্যাপার, সেটা তারা বোঝে না। যারা আসলে জানেও না কিছু আইনী ব্যবস্থায় এই পোনা মাছ ধরার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকে। নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্যই থাকে সুস্বাদু এবং পরিণত মাছ চাষকে উৎসাহিত করে এর উৎপাদন বৃদ্ধি করা। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও রফতানি করা যায়। সরকার দেশের জাতীয় মাছ ইলিশের পোনার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাতে এই অতি উপাদেয় মাছটি পরিপুষ্টভাবে জনগণের হাতে পৌঁছে দেয়া যায়। আর এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানও রাখা যায়। সরকারের নজরদারি সত্ত্বেও নিয়ম ভাঙ্গার সংস্কৃতিতে ইলিশ পোনা ধরতে অনেক জেলে যেমন উদ্যোগী হয় পাশাপাশি মাছের আড়তদারও সাময়িক ব্যবসায়িক সাফল্যের নেশায় এই প্রক্রিয়াটিতে শুধু যে সমর্থন দেয় তা নয়, সরাসরি তারাও জড়িত থাকে। এবার অভিযোগ উঠেছে পাঙ্গাশ মাছের পোনা ধরতে আইনী কোন বাধা মানা হচ্ছে না। চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে জেলেরা অবাধে এবং নির্বিঘেœ সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই পাঙ্গাশ মাছের পোনা ধরে নামে মাত্র মূল্যে আড়তদারের হাতে তুলে দিচ্ছে। এখানেও মনে করা হচ্ছে জেলেদের চাইতেও মূল কলকাঠিটা নাড়ছে কিছু অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ী। মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ আবহমান বাংলার ‘মাছে-ভাতে-বাঙালী’ প্রবাদটি আজও দেশের ঘরে ঘরে। এমন বহুল প্রচলিত বাক্যটির যথার্থতা রাখা উচিত। এর জন্য সর্বজনীন সচেতনতা বাড়াতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সচেতন এবং সতর্ক থাকতে হবে যাতে অন্যায় করে কেউ পার পেয়ে না যায়। আইন ভাঙ্গার যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান করলে অপরিণত মাছের পোনা সর্বনাশের দোরগোড়ায় যেতে পারবে না। এই ব্যাপারে সরকারী নজরদারি আরও বাড়ানো উচিত বলে সবাই মনে করছেন। উপস্থিত এবং সাময়িক লাভ লোকসানের হিসাব মাথায় না রেখে এর সুদূরপ্রসারী এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনাকে আরও নিয়মমাফিক করা মৎস্য সম্পদের উৎকর্ষের জন্য অত্যন্ত জরুরী। নদীবিধৌত এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এ দেশে বিভিন্ন রকমের মাছের সমাহার প্রকৃতির এক উদার দান। প্রকৃতি নিয়মমাফিক মাছ উৎপাদনে তার যথাযথ ভূমিকা রাখে। কিন্তু কিছু অসৎ মানুষের অপকৌশলে মাছ ধরার সুনির্দিষ্ট বাধা-নিষেধকে নানাভাবে অবহেলা এবং উপেক্ষা করা হয়, যা মাছ উৎপাদনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এক্ষেত্রে বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় আসতে পারে। নিষিদ্ধ কোন পোনা যাতে ধরা না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের মাছ চাষকে আরও সমৃদ্ধ এবং নিরন্তর করতে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। দেশ ও মানুষের স্বার্থে পুষ্টিকর সুস্বাদু মাছের সুরক্ষা সবার আগে জরুরী।
×