ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ চুক্তি সই

দীঘিপাড়া কয়লাখনি উন্নয়নে সমীক্ষা শুরু হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩০ মে ২০১৭

দীঘিপাড়া কয়লাখনি উন্নয়নে সমীক্ষা শুরু হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ দীঘিপাড়া কয়লা খনি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষকে দিয়েই খনিটি উন্নয়ন করা হবে। ইতোমধ্যে তাদের খনি উন্নয়ের অনুমোদন দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। মোট ২৪ বর্গকিলোমিটারের খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের সম্ভাব্যতা জরিপ পরিচালনার জন্য আজ মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ার তিন কোম্পানি নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামটি ২৭ মাসের মধ্যে জরিপের কাজ শেষ করবে। এটি হচ্ছে দ্বিতীয় কয়লা খনি যেখান থেকে কয়লা তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর আগে কয়লা তোলা হয়েছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে। এখন কয়লা খনির পাশে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া আরও একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। বিদ্যুত জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, এখানে অন্তত বছরে প্রায় তিন মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা তোলা সম্ভব হবে। আসা করা যাচ্ছে এ কয়লা দিয়ে প্রায় এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব হবে। প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, এই এলাকায় বিভিন্ন স্তরে প্রায় ৮৬৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লার মজুদ রয়েছে। এই কয়লা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন করা সম্ভব হলে এই এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে খনিটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জার্মানির মিরবাগ কনসালটিং ইন্টারন্যাশনাল, দেশটিরই অন্য একটি কোম্পানি ফুগরো রয়েছে এই কাজের সঙ্গে। এদের সঙ্গে কাজ করবেন অস্ট্রেলিয়ার রাঞ্জ পিনকোক মিনারকো লিমিটেড। জরিপে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি ৪৭ লাখ ৯১ হাজার ডলার বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৬৭ কোটি টাকার বেশি। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ ১ জুন ২০১৭ হতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত অর্থাৎ ২৭ মাস। জ্বালানি বিভাগ জানায় বাংলাদেশ সরকারের ভিশন ২০২১ অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। যার শতকরা ৫৩ ভাগেরও বেশি উৎপাদিত হবে কয়লা থেকে। বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোতে দেশী ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সংগৃহীত কয়লা ব্যবহার করা হবে। দেশীয় উৎস হতে কয়লা সরবরাহের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও বিরামপুর উপজেলার ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় উন্নতমানের কয়লা উত্তোলনের সম্ভাব্যতা জরিপের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। সমীক্ষায় মোট আয়তন ২৪ বর্গকিলোমিটারের এলাকা মূল্যায়ন করা হবে। আগে সংগ্রহ করা সকল তথ্য পরীক্ষা করা, টপোগ্রাফিক সমীক্ষা করা, এছাড়াও তৃতীয় মাত্রার ভূকম্পন (৩-ডি সাইসমিক) জরিপ, অনুসন্ধান কূপ খনন, খনির নক্সা এবং প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই (যার মধ্যে ইএইএ, ইএমপি, আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর প্রভাব মূল্যায়ন ইত্যাদি রয়েছে)। পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা নির্ণয় এবং একটি পুনর্বাসন পরিকল্পনা প্রণয়ন, ভূতাত্ত্বিক এবং ভূজ্বলীয় অবস্থা নিরূপণ, কয়লা উত্তোলন পদ্ধতি, প্রকৃত মজুদ, বাৎসরিক উৎপাদন হার এবং কয়লা খনির মেয়াদকাল নির্ণয়, বিস্তারিত অর্থনৈতিক মূল্যায়ন এবং প্রকল্প বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক কি না তা নির্ণয় করা। ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুর উপজেলায় দীঘিপাড়া কয়লা খনিটি আবিষ্কার করে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর (জিএসবি)। খনি উপত্যকার ২৪ বর্গকিলোমিটারজুড়ে কয়লার মজুদ নির্ণয় ও খনির কেন্দ্রীয় ৬ বর্গকিলোমিটার থেকে বছরে ৩০ লাখ টন খনি উত্তোলনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা খনির ৪ হাজার হেক্টর ভূমি বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করেছে। এখানে ১৯৯৫ সালে ১ম খনন করে ৩২৭ দশমিক ৯৬ মিটার গভীরতায় কয়লার সন্ধান পায় জিএসবি। পরবর্তীতে ১১ বছরে ৪টি কূপ খনন করা হয়। এর মধ্যে ২০০১ সালে ১ম কূপ থেকে দক্ষিণপূর্ব দিকে ১ বর্গমাইল দূরত্বে ৩৮৩ দশমিক ৫৪ মিটার কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর ২০০৩ সালে একই ব্যবধানে পূর্বে ৩য় কূপ খনন করে ৩৫৫ দশমিক ০৯ মিটার গভীরতায় গিয়ে কয়লার বড় ধরনের স্তরের সন্ধান পায় তারা। ২০০৪ সালে ওই ব্যবধানে খনির উত্তরে ৪র্থ কূপ খনন শেষে ৩২৩ দশমিক ০৮ মিটার গভীরতায় ভূগর্ভে আবারও কয়লার সন্ধান মেলে। ২০০৪ সালের মার্চ মাসে দীঘিপাড়া থেকে পূর্ব দক্ষিণে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরত্বে ৫ম কূপ খনন শেষে এখানে ৩৮৮ দশমিক ০১ মিটার কয়লা পাওয়া যায়। এখানে সর্বোচ্চ ৪৩৪ দশমিক ৪৯ মিটার এবং সর্বনিম্ন ৩২৩ মিটার গভীরতায় ৭২ দশমিক ৩৬ মিটার থেকে ৪৭ দশমিক ২৯ মিটার কয়লার স্তর রয়েছে। খনিটিতে আদ্রতার পরিমাণ ৩ দশমিক ২ ভাগ, উদ্বায়ী পদার্থ ৩৩ ভাগ, ছাই ০৯ ভাগ, স্থির কার্বন দশমিক ৫৭ ভাগ, সালফার দশমিক ৬৫ ভাগ। এই কয়লার তাপ উৎপাদন ক্ষমতা ১২ হাজর ৯০০ বিটিইউ। খনির কঠিন শিলাস্তরের গভীরতা সর্বোচ্চ ৫০২ মিটার এবং সর্বনিম্ন ৪৬৯ থেকে ৪৩৯ মিটার পর্যন্ত। দীঘিপাড়া কয়লা খনিতে কয়লা ব্যতীত ভূগর্ভে প্রায় ২০০ মেট্রিক টন সিলিকা বালু ও সাদামাটি রয়েছে। এই সিলিকা বালু ও সাদামাটি গ্যাস ফ্যাক্টরিতে এবং সাদামাটি সিরামিক কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। ২০০৭ সালের প্রথম দিকে অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে খনিটি বাস্তবায়নে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
×