ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে তামাক

প্রকাশিত: ০২:৩৮, ২৯ মে ২০১৭

তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে তামাক

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ তামাক দেশের চলমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করছে এবং আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তামাক থেকে দেশে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ তার থেকে অনেক বেশি। তাই শুধুমাত্র আইন করে, ট্যাক্স বৃদ্ধি করে তামাকের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। এজন্য চাই জনসচেতনতা। সোমবার বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম এসব কথা বলেন। মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা মানস অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মানসের সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী ও মহাসচিব ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। এবারের তামাক মুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘তামাক উন্নয়নের অন্তরায়’। মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাদক এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির ওপর ভর করে ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মাদক নির্মূলে বিভিন্ন কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। এবারের পহেলা বৈশাখের সকল অনুষ্ঠানে আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ধূমপান বন্ধ করেছিলাম। সন্মানিত নগরবাসীকে ধন্যবাদ জানাই কারন তারা আমাদের বিজ্ঞপ্তিতে সাড়া দিয়ে ধূমপানমুক্ত হয়ে অনুষ্ঠান পালন করেছে। তিনি বলেন, মাদক নির্মূলে পুলিশের বিভিন্ন উদ্যেগের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে উত্তরা, লালবাগ, গুলশান ও ওয়ারীতে জনসচেতনামূলক সমাবেশের আয়োজন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। আমাদের এই আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে রমজানের ঈদের পরে আমরা সমগ্র ঢাকা শহরে ধূমপান, মাদক সন্ত্রাসবিরোধী জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম আরো এগিয়ে নিয়ে যাবো। শুধুমাত্র আইন করে, ট্যাক্স বৃদ্ধি করে মাদকের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, এজন্য চাই জনসচেতনতা, চাই কাউন্সেলিং, চাই মোটিভেশন। আমরা তরুণ প্রজন্মকে ধূমপানমুক্ত রাখতে একটি কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে পারি। মাদককে সামাজিক ব্যাধি হিসেবে উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, এটি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে, জাতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে, ফলে কর্মক্ষম জনশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসছে। পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, আমরা ঢাকা মহানগরের প্রত্যেকটি থানা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা তৈরী করেছি। আমরা সবাই মিলে তাদের বয়কট করব। তাদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র আইন করে নয়, সামাজিকভাবে তাদেরকে বয়কট করার আন্দোলন করব। আমরা সবাই যদি একসাথে সোচ্চার হয়ে কাজ করি তবে আমাদের এই জাতীয় সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হব। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের তরুণরা যেন মাদকের দিকে আসক্ত না হয় সেজন্য আমাদের সচেতন থাকতে হবে। দেশের উন্নয়নের জন্য, ভালোর জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। তাহলে আমরা মাদকের কড়াল গ্রাস থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে পারব। অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের হার স্লাইডে তুলে ধরেন। সেখানে দেখানো হয়, পৃথিবীতে বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে ৪ কোটি ৬০ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করে। এর মধ্যে ৫৮% পুরুষ এবং ২৯% নারী ধোঁয়াযুক্ত অথবা ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন। আরও দেখানো হয়, বাংলাদেশ প্রতি ঘন্টায় ১২ জন, প্রতি দিনে ২৭৭ জন, প্রতি মাসে ৮৩৩৩ জন ও প্রতি বছরে ১ লক্ষ মানুষ তামাক ব্যবহারে মারা যায়। আসন্ন বাজেটে সিগারেটের দাম কমানোর পদক্ষেপে জন্য এ সময় মানসের নেতারা হতাশা প্রকাশ করেন। এ সময় তারা কিছু সুপারিশ সরকারের কাছে তুলে ধরেন- সব ধরনের সিগারেটের উপর সমপরিমানে কর আরোপ করতে হবে, বিড়ি ও সিগারেটের উপর উচ্চ হারে সুনির্দিষ্ট হারে এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করতে হবে, ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের উপর সিগারেটের সমপরিমাণ কর আরোপ করতে হবে এবং তামাকের কর প্রশাসন শক্তিশালী করা।
×