ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইচ্ছাই শক্তি

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২৯ মে ২০১৭

ইচ্ছাই শক্তি

‘ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়’। আদিকাল থেকেই এ প্রবাদ বাক্যটা মানুষের মুখে মুখে চলে আসছে। কিন্তু সঠিকভাবে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করা এবং সে ইচ্ছাকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা সত্যিই কষ্টকর ব্যাপার। মানুষের ইচ্ছা শক্তি বাড়ানোর উপায় বের করতে গবেষকরা বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং এখনও করেন। পরিশেষে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ইচ্ছা শক্তি একটি পেশীর ন্যায়, যা বেশি কাজ করার দরুন ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং সে ক্লান্তিকে পূরণ করতে পরিমিত খাদ্য দরকার। গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে, সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে দেহের অন্য পেশীর মতো ইচ্ছা শক্তির ক্ষমতাও বাড়ানো সম্ভব। ইচ্ছা শক্তি প্রবল হলে মানুষ পারে না এমন কোন কাজ নেই। চলুন জেনে নেই কিভাবে এ শক্তিকে বাড়ানো যায়। লিখেছেন- টুটুল মাজফুজ মেডিটেশনের কাজ হচ্ছে নিজের মগজকে নিজে নির্দেশনা দেয়া। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রোজ ১০ মিনিট মেডিটেশন করলে ২/৩ দিন পর থেকে অনুভব করবেন , আপনি যে কোন কাজে ফোকাস করতে পারছেন, কাজে এনার্জি পাচ্ছেন এবং মানসিক চাপ কমছে। নিয়মিত মেডিটেশন করতে পারলে আপনার মনোযোগ, ইচ্ছা শক্তি, কিছু মনে রাখার ক্ষমতা অনেক গুণ রেড়ে যায়। শারীরিক অঙ্গভঙ্গির ওপর কাজ ইচ্ছা শক্তি বাড়াতে শারীরিক অঙ্গভঙ্গিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই গবেষণায় তারা একটি দলকে সাধারণভাবে চলাচল করতে বলেন এবং অপর একটি দলকে বলেন চলাচলে সামান্য একটু পরিবর্তন করেন। পরিবর্তনটা হচ্ছে যখনই তারা নিজেদের মধ্যে আড়ষ্টতা অনুভব করবে তখনই সোজা হয়ে বসবে। অবাক বিষয় হচ্ছে, এই সাধারণ অভ্যাস পরিবর্তন তাদের ইচ্ছা শক্তিকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো ঘুম ঠিক মতো না হলে এর প্রভাব পরে গিয়ে আমাদের মনে । মাথায় বা ব্রেনে একটা চাপ তৈরি হয়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম হয়না বলে শরীর গ্লুকোজ তৈরি করতে পারে না, ফলে ব্রেনের যতটুকু দরকার ততটুকু চালিকাশক্তি পায় না এতে করে আপনার মনের জোর বা ইচ্ছা শক্তি ঠিকভাবে কাজও করতে পারে না। শরীরচর্চা করা মানুষের শরীরে যা সহ্য করানো হয় তাই সহ্য হয়ে যায়। তাই প্রথম প্রথম আলসামী লাগলেও একটু একটু করে রোজ শরীরচর্চা করলে দেখবেন যে আর খারাপ লাগছে না বরং শরীর তা হালকা আর ঝর ঝরা লাগছে ,যে কোন কাজ উদ্যম নিয়ে করতে পারছেন। আর যে কোন কাজ করতে পারছেন এ বোধটাই আপনার আত্মবিশ্বাস এবং ইচ্ছা শক্তিকে হাজারও গুণ বাড়িয়ে দিবে। এক সময় একটি কাজেই মনোযোগী হওয়া এক সময় একটি কাজকে প্রাধান্য দিলে মনকে কেন্দ্রীভূত করা সহজ হয়। এক সঙ্গে অনেক কাজ নিয়ে না বসে একটা একটা করে সারুন এতে করে আপনার মনোযোগ বাড়বে। মনে করুন আপনে পাজেল খেলছেন মাথায় আর কোন চিন্তা না রেখে আপনার মনোযোগ সমাধান এর কাজে লাগান এ প্রক্রিয়াটি আপনার ব্রেন সেলকে (কোষ) সাহায্য করে মনকে কেন্দ্রীভূত হতে। এ প্রক্রিয়া রোজ একটু একটু করে চর্চা করার ফলে আপনার ইচ্ছা শক্তি বৃদ্ধি পাবে। মনোযোগী হওয়ার চর্চা করা আমরা সাধারণত প্রতিদিনকার কাজ করি নিয়ম বাঁধা ছকে ,কি পরব ,কি খাব। কি যাব সব কাজই আমাদের মনে আগে ঠিক করে রাখা এবং আমরা সেভাবে করে যাই আর কিছু ভাবি না। কিন্তু একটু ভেবে দেখেন তো এতে কি আপনে একঘেয়ে একটা জীবন যাপন করছেন না? আপনার কি মনে হয় যে আপনি নাস্তার টেবিলে কেন ভাত খাচ্ছেন কেন রুটি ডিম খাচ্ছেন না? আসলে আমি বলতে চাই আমাদের জীবনটা যদি একটু বৈচিত্র্যময় না হয় সবকিছু একটা পর্যায় বিরক্তিকর হয়ে যাবে তাই নিজের দিকে একটু মন দিন, এ মন দিয়ার চর্চাটা করুন দেখবেন জীবনটা এত সাদা মাটা নয় যতটা আপনি ভাবছেন। নিজের সঙ্গে কথা বলা বেশিভাগ মানুষ নিজেকে যখন আয়নায় দেখে তো কি দেখে ভাবুন তো? সে দেখে যে তার নাকটা আরও সরু“ হলে তাকে চমৎকার দেখাত , ইশ আর একটু যদি লম্বা হতাম ! আমার যদি লম্বা চুল হতো ! আমার যদি তার মতো মাসেল থাকত ! আরও কত কি। কিন্তু আমরা কি এ ভাবে ভাবি একবারো যে আর কারও থেকে আমি নিজে কতটা সুন্দর অথবা লম্বা অথবা ভাল আছি ! নাহ এগুলো কিন্তু আমরা সাধারণত ভাবি না , এ না ভাবাটাই আমাদের সমস্যা। এ না ভাবাটাই আমাদের আত্মতৃপ্তি দেয় না। তাহলে আজ থেকে আয়নার সামনে দাঁড়ান নিজের খুত বের করতে না বরং আপনার কি কি গুণ আছে সেটা ে বের করতে , নিজেকে বলুন আপনি আর দশজনের থেকে কত ভাল আছেন। এ বলাটা কিন্তু আপনার ইচ্ছা শক্তিকে আরও বাড়িয়ে দিবে, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আরও প্রল হবে , জীবনের প্রতি একটি স্পষ্ট ধারণা দিবে। অনুপ্রেরণা খোঁজা জীবনে চলার পথে কিছু বা কেউ আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায় থাকে এর মূল্য দিয়া কঠিন কিন্তু এ প্রেরণাটুকু না পেলে অনেক সময় আমাদের চলার পথে থমকে যেতে হয়। এ প্রেরণাটি যে কারও জন্য তার ইচ্ছা শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আপনার উচিত হবে এমন কিছু করা বা এমন কারও কথা শুনা বা এমন কারও সঙ্গে মেলামেশা করা যে আপনাকে প্রেরণা জোগায়। লক্ষ্য অর্জনের পথকে ভাগ করে নেয়া ছোটবেলায় অনেকেরই বিভিন্ন কিছু হবার শখ থাকে কিন্তু আমরা সবাই কি সেটাকে অর্জন করতে পারি? অনেকেই কিন্তু পারে। তার কারণ একটাই সে তার লক্ষ্যকে স্থির রাখে এবং তাকে অর্জন করার জন্য যা করতে হবে সেই কাজটিকে ভাগ করে নেয়। আপনি নিজে শুধু পারেন নিজেকে পরিবর্তন করতে। কেউ চলার পথে আপনার অনুপ্রেরণা হতে পারে কিন্তু আগবাড়িয়ে কাজটি করতে আপনাকে হবে। আর যখন দেখবেন কাজটি করতে পেরেছেন আপনার আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছা শক্তি অনেক গুণ বেড়ে যাবে। হতাশ হবেন না, যে কোন কাজ অনেক কঠিন হতেই পারে কিন্তু অসম্ভব নয়। মডেল : তমা ও আজিম ছবি : নাইম ইসলাম
×