ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাবিতে ‘১৯ কুঁড়ি’ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৯ মে ২০১৭

রাবিতে ‘১৯ কুঁড়ি’ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

কায়কোবাদ খান, রাবি ॥ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে রোগী। তার পা থেকে গলা পর্যন্ত সাদা কাপড়ে ঢাকা। কাপড়ের ওপর দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ইনজেকশন। বিছানার দুই পাশে ছড়ানো অনেকগুলো টাকার বান্ডিল। পাশে রাখা সানগ্লাসের কাচেও টাকার প্রতিচ্ছবি। এই বিশাল চিকিৎসা ব্যয়ের বিপরীতে রোগীর সম্বল একটি মাত্র মাটির ব্যাংক। চারুকলা অনুষদের এক শিক্ষার্থীর গড়া এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে উঠে এসেছে এ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ চিত্র। ‘টাকা ছাড়া চিকিৎসা নেই’ এমন ভাবনা থেকে গড়া এই ভাস্কর্যটি শোভা পাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদ ভবনের গ্যালারি কক্ষের মেঝেতে। কক্ষের চার দেয়ালে শোভা পাচ্ছে অনুষদের ৫৮ তরুণ শিক্ষার্থীর শতাধিক শিল্পকর্ম। অনুষদের ১৯তম ব্যাচ আয়োজিত ‘১৯ কুঁড়ি’ শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া এসব শিল্পকর্ম মুগ্ধ করেছে দর্শনার্থীদের। শনিবার থেকে শুরু হয়ে তিনদিনব্যাপী এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শেষ হয় সোমবার বিকেল পাঁচটায়। শনিবার দুপুরে অনুষদ প্রাঙ্গণে শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সাদা মনের মানুষ খ্যাত পলান সরকার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ আনোয়ারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন গণিতবিদ ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সুব্রত মজুমদার। উদ্বোধনী পর্বের শুরুতে নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় কনসার্ট। প্রদর্শনীর চলাকালে প্রতিদিন ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চারুকলা অনুষদে ভিড় করেন হাজারো দর্শনার্থী। শিক্ষার্থীর গড়া এসব শিল্পকর্ম দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও রাজশাহী মহানগরী থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পায় চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা, ছাপচিত্র, ডিজাইন, কারুশিল্প, ভাস্কর্য, মৃৎশিল্প ও ইনস্ট্রলেসন আর্ট। প্রদর্শনী দেখতে আসা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম রিফাত বলেন, শিল্পকর্ম যেমন শিল্পমনা মানুষের জীবনের জিয়নকাঠি তেমনি একজন শিল্পীর কল্পনা এবং সমাজের বাস্তবতার সংমিশ্রণও। শিল্প মানুষের আত্মার খোরাক যোগায়। তরুণ শিক্ষার্থীর গড়া এসব শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। এর আগে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এত বড় পরিসরে শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন হয়নি জানিয়ে প্রদর্শনী আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক উল্লাস সাহা বলেন, আধুনিককালে এসেও কিছু মানুষ শিল্প সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে। প্রদর্শনী আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার দূর করা এবং বাস্তবতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রূপ কুমার রায় বলেন, শিল্পকর্মগুলোর মাধ্যমে আমরা শিল্পধারার মধ্যে থেকে নতুন কিছু সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। শিল্পের মাধ্যমে প্রকৃতি এবং সমাজের বহুরূপী দৃশ্য তুলে ধরতে চেয়েছি। তিনি বলেন, প্রদর্শনীর জন্য আমাদের কোন গ্যালারি নেই। শ্রেণীকক্ষকে গ্যালারি হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। একটি গ্যালারি নির্মাণ করা হলে আরও বেশি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা সম্ভব হবে।
×