ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রমজানে পণ্যের দাম বাড়েনি আগেই বেড়েছে দফায় দফায়

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৯ মে ২০১৭

রমজানে পণ্যের দাম বাড়েনি আগেই বেড়েছে দফায় দফায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন পণ্যের দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। মুসলমানদের কাছে পবিত্র এই মাসে পণ্যের দাম না বাড়ালে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রীর সেই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন রাজধানীর পণ্য বাজারের ব্যবসায়ীরা। পাইকার, মধ্যস্বত্বভোগী ও খুচরা ব্যবসায়ী বলছেন, মন্ত্রীর কথা পুরোটাই সত্য। এ রমজান মাসে প্রয়োজনীয় কোন পণ্যের দাম বাড়বে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বা যোগানের বিষয়ে ভিন্নমত থাকলেও ‘রমজান মাসে পণ্যের দাম বাড়ে না’ বলে উল্লেখ করেছিলেন ভোক্তা এবং ভোক্তা অধিকার রক্ষার সংগঠনগুলো। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ভোক্তারা বলেছিলেন, রমজান মাসে কোন পণ্যের দাম বাড়ে না। এই পবিত্র মাসের আগমন উপলক্ষে আরও কয়েক মাস আগে থেকে নানা অজুহাতে ক্রমান্বয়ে সব পণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হয়। এবারও তাই হয়েছে। বাড়তি দামে প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, মুরগি, মাছ, সবজি বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তাদের এমন মতের সঙ্গেও একমত পোষণ করেছেন রাজধানীর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসায়ীরা। মুদি পণ্যের পাইকারি ব্যবসায়ী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, মন্ত্রীর কথা পুরোটাই সত্য। তার কথার সঙ্গে আমি একমত। রমজানে কোন পণ্যের দাম বাড়বে না। যা বাড়ার তা আগেই বেড়ে গেছে। ব্যবসা যা হওয়ার- তাও হয়ে গেছে। তিনি বলেন, রমজান শুরুর প্রায় দেড় মাস আগে থেকেই পাইকারি-খুচরা পর্যায়ে সব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। দাম বাড়ার এ ধারা রমজানের এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। আর রমজান মাসে কোন পণ্যের দাম বাড়ে না। এ পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ইতোমধ্যে রাজধানীর অর্ধেকের বেশি বাসিন্দা রমজানের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত যারা বাজার করেননি ৫-৬ রমজানের মধ্যে তারাও প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ফেলবেন। অর্থাৎ রোজার শুরুতেই আমাদের মূল ব্যবসা হয়ে যায়। এরপর রমজানজুড়ে বাজার মনিটরিং হলেও আমাদের কোন ক্ষতি নেই। রমজানে দাম বাড়া বা কমার ব্যাপারে আমাদের মাথা ব্যথাও থাকে না। একই ধরনের কথা শোনালেন কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেড় মাস আগে থেকে পণ্যের দাম বাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমদানিকারক ও পাইকাররা তাদের টার্গেট অনুযায়ী পণ্য গুদামজাতকরণের পরই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। আর কিছু অসাদু পাইকার ব্যবসায়ী রমজানের আগে প্রচুর পণ্য মজুদ করে রাখেন। ফলে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়। আর দাম বাড়তে থাকে। প্রতি দফা দাম বাড়ার পর অল্প অল্প মাল বাজারে ছাড়েন তারা। তিনি বলেন, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে সরকারকে। কিন্তু সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বার্থের কারণেই সমস্যার কথা জেনেও সঠিক সময়ে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয় না। রবিবার প্রথম রেজার দিন রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। গত শুক্রবারের বাজারে কিছু পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম ১০-৫০ টাকা এবং আদার দাম ১০ টাকা হারে বাড়ানো হয়েছে। গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশী রসুন বাজারে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় রসুনের দাম ২৩০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া চায়না আদা ১০ বেড়ে বাজারে ১২০ টাকা এবং ক্যারালা আদা ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মূল্য তালিকায় দেশী রসুনের দাম ১৩০ টাকা এবং ভারতীয় রসুনের দাম ২৭০ টাকা দেখানো হচ্ছে। এভাবেই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে চলেছে সব পণ্যের দাম। আর মনিটরিংবিহীন অনিয়ন্ত্রিত বাজার নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছে কনজিউমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়উন কবির ভুঁইয়া বলেন, সরকার শুধু রমজানের সময়কে উদ্দেশ্য করে কথা বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে দাম বাড়ানো নিয়ে ব্যবসায়ীদের পরিবর্তিত কৌশল দেখতে পাচ্ছি। রমজান মাস শুরুর কয়েক মাস আগেই সব পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন তারা। কিন্তু কৌশল পরিবর্তন করছে না সরকার। রমজান মাস শুরুর আগে দাম বাড়ানোর বিষয়ে তথ্য থাকলেও ঠিক সময়ে বাজার মনিটরিং করছেন না সংশ্লিষ্টরা। তিনি আরও বলেন, বাজার এখন সম্পূর্ণ ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। কিছু দিন পর পর দফায় দফায় দাম বাড়ায় তারা। বাড়ানোর সময় কেজিতে কমপক্ষে ১০ টাকা বাড়ানো হলেও কমানোর সময় ১-২ টাকা করে কমানো হয়। অর্থাৎ মনিটরিং হলেও প্রকৃতপক্ষে দাম কমে না। চাহিদা মতো পণ্যের যোগান রয়েছে- মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে বিষয়ে হুমায়উন কবির ভুঁইয়া বলেন, ভোজ্য তেল, ছোলা, খেজুরসহ রমজানে প্রয়োজনীয় সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে- তা সত্য। তবে পণ্যের দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সেগুলো মজুদ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে বার বার দাম বাড়ানো হয়। সেদিকে সরকারের নজর নেই। গুদামে অবৈধভাবে পণ্য সংরক্ষণ বিষয়ে তদারকিও করা হয় না।
×