ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৈন্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে

বিশ্ব শান্তিরক্ষী দিবস আজ, নানা আয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৯ মে ২০১৭

বিশ্ব শান্তিরক্ষী দিবস আজ, নানা আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্ব শান্তিরক্ষী দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হবে। ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০১৭’-উদ্যাপন এবং বিশ্ব শান্তিরক্ষায় শাহাদতবরণকারী ও আহত সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। উপস্থিত থাকবেন সামরিক বেসামরিক উচ্চপদের কর্মকর্তাবৃন্দ। জানা গেছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ১৩টি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার ৫০০ সেনা ও পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সাফল্যের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবদান এখন অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। এ পর্যন্ত ৬৩টি শান্তি মিশনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। ৮২ হাজার ৯৬৫ জনের বেশি শান্তি কর্মী বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন মিশনে। নিরাপত্তার কারণে বিভিন্ন মিশনে কাজ অসমাপ্ত রেখে জাতিসংঘ বাহিনী ফিরে এসেছে। কিন্তু একমাত্র বাংলাদেশীরাই হচ্ছে এর ব্যতিক্রম। সিয়েরা লিয়নে আজ বাংলাকে দ্বিতীয় রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। রাস্তাঘাটের নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশের নামে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস, সংঘাত ও দাঙ্গা দমন করে শান্তি স্থাপন, তথা সেসব দেশ পুনর্গঠনে এ দেশের শান্তিসেনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব কারণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনা ও পুলিশ বাহিনী সাফল্যের শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে বিশ্বে শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিত হয়েছে। ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা সর্বোচ্চমানের পেশাদারি মনোভাব, সাহসিকতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উপসাগরীয় এলাকা, বেনিন, নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা-রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, প্রাক্তন যুগোসøাভিয়া, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, পশ্চিম সাহারা, সিয়েরা লিওন, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, কঙ্গো, আইভরি কোস্ট ও ইথিওপিয়ায় শান্তি রক্ষা কাজে অংশগ্রহণ করে। দিবসটিকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শান্তিরক্ষা মিশনে শাহাদতবরণকারীদের স্মরণে আলোচনা সভা, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি, জ্যেষ্ঠতম শান্তিরক্ষীর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন। জাতিসংঘবিষয়ক ভিডিওচিত্র এবং বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হবে। শাহাদতবরণকারী ও আহত শান্তিরক্ষী এবং পরিবারবর্গকে সম্মাননা দেয়া হবে। সর্বশেষ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে কর্মরত সদস্যদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রিয়জনদের কথা বলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান বিশ্বে যে কয়টি ইতিবাচক কারণে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয় তার মধ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সাফল্য অন্যতম। তবে এ সাফল্য একদিনে আসেনি, এমনি এমনিও আসেনি। ১৯৮৮ সালে ইউনাইটেড নেশনস অবজারভার মিশন ইন ইরাক-ইরানের মাধ্যমে বাংলাদেশের শান্তির দূতরা যে কার্যক্রম শুরু করেছিল ২৯ বছর পর তা আজ পরিণত রূপ লাভ করেছে। আজ বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রতিশব্দ হচ্ছে বাংলাদেশ। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের উদাহরণ দিতে গিয়ে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করতে হয়। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের জটিল দায়িত্ব পালনের আগে অন্যান্য দেশের শান্তিরক্ষীরা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট) ঘুরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বিশ্বে ১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৮টি শান্তি মিশনের মধ্যে বাংলাদেশী শান্তি সেনাদের স্পর্শ পেয়েছে ৫৪টি মিশন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যে ১৩টি মিশনে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদ্যাপনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। সকালে ‘পিসকীপার্স রান’-এর মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচী শুরু হবে। বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা দেয়া হবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে। ‘পিসকীপার্স রান’ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা নিয়েছে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশেষ জার্নাল ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারী চ্যানেলে বিশেষ টকশো প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়াও শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারী চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশের মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
×