ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগলে রেখেছেন চিকিৎসক ও পুলিশ

নিহত মায়ের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুটির পরিচয় মেলেনি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৯ মে ২০১৭

নিহত মায়ের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুটির পরিচয় মেলেনি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হওয়া মায়ের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক বিশ দিন বয়সী হতভাগ্য শিশুটির পরিচয় মেলেনি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটিকে পরম মমতায় আগলে রেখেছেন দায়িত্বশীল চিকিৎসক আর পুলিশ। মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক শিশুটির চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় বহন করছেন। তাদের সহায়তায় সুচিকিৎসা পেয়ে শিশুটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। নিহত মায়ের পরিচয় জানতে তাঁর আঙ্গুলের ছাপ নিয়েছেন নির্বাচন কমিশন অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। হত্যাকারী স্বামী পরিচয়ে হোটেলে অবস্থানকারী সন্দেহভাজন ওই যুবককে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। এজন্য হোটেলটির কাছে থাকা একটি ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করে তার পর্যালোচনা করা হচ্ছে। রবিবার রাত বারোটার দিকে মতিঝিল থানাধীন পুরানা পল্টনের ১৮/১৯ নম্বর ছয়তলা আল শাহীন নামের একটি আবাসিক হোটেলের চতুর্থ তলার ১৬ নম্বর কক্ষ থেকে আনুমানিক ২৮ বছর বয়সী এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের পাশ থেকে একটি মেয়ে শিশু জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়। নিহত নারী শিশুটির মা বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয় পুলিশ। শিশুটির উদ্ধারকারী মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে পরিচয়হীন শিশুটি। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করা হচ্ছে। দায়িত্বশীল চিকিৎসকদের সুচিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে নবজাতকটি। নিহত নারী শিশুটির মা বলে দায়িত্বশীল চিকিৎসকরাও একপ্রকার নিশ্চিত করেছেন। নিহতের লাশ মর্গে রয়েছে। সুরতহাল শেষে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা ওই নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ ওই নারীর পরিচয় মেলেনি। ওই নারীর পরিচয় জানতে নির্বাচন কমিশন অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিহত নারীর আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে গেছেন। আঙ্গুলের ছাপ থেকে ওই নারীর পরিচয় জানা যাবে। নিহতের পরিচয় জানার পর হত্যাকারীকে শনাক্ত করা সহজ হবে। ওসি বলছেন, ধারণা করা হচ্ছে স্বামীর পরিচয়ে হোটেলে অবস্থান নেয়া ওই পুরুষই ওই নারীর হত্যাকারী। ঘটনার পর থেকেই ওই পুরুষ পলাতক। তাকে শনাক্ত করতে হোটেলটির কাছে থাকা একটি ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগ্রহ করা ফুটেজের পর্যালোচনা চলছে। দ্রুত হত্যাকারীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। নিহতের পরিচয় জানার পর তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। নিহতের পরিবার ও শিশুটির পিতা পরিবারের কেউ শিশুটির দায়িত্ব না নিলে, শিশুটিকে তারা আইনগতভাবে সমাজসেবা অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করবেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শনিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে এক পুরুষ, নিহত নারী ও শিশুটিকে নিয়ে হোটেলটিতে যায়। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে শিশুটি অসুস্থ বলে দ্রুত একটি রুমের বরাদ্দ চায়। শিশুটিকে শান্ত করার পর নাম ঠিকানা হোটেলের খাতায় লিপিবদ্ধ করবেন বলে জানান। এরপর তারা কক্ষটিতে অবস্থান করতে থাকেন। রবিবার রাত এগারোটা নাগাদ তাদের আর দেখা মেলে না। হোটেলের কর্মচারীরা সেখানে গিয়ে কক্ষটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ এবং উঁকি দিয়ে ভেতরে একজনকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুঁলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। রুমের ভেতরে শিশুটি কাঁদছিল। খবর পেয়ে দ্রুত তারা কক্ষের দরজা ভেঙ্গে লাশটি উদ্ধার করে। লাশটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল খায়ের মোঃ শফিউজ্জামান জানান, ওই নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ওসি জানান, ওই নারীর লাশের পাশ থেকে প্রায় মৃত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটি খাট আর দেয়ালের ফাঁক দিয়ে পড়ে আটকে ছিল। গায়ে পানি ছিটাতেই নড়ে ওঠে শিশুটি। মুখে পানি দিলে তা পান করে। রাতেই শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় হোটেলের দুই মালিক জেসমিন আক্তার (৩০) ও মোঃ শহীদ মোল্লা এবং ম্যানেজার তোফাজ্জল ও হোটেল বয় শাহপরানকে আটক করা হয়।
×