ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারিক আদালতের সাজা বহাল

রাজীব হত্যা মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৯ মে ২০১৭

রাজীব হত্যা মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলা পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। রবিবার হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে ১৬৩ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে ২ এপ্রিল আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে রেদওয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাইম দীপের দেয়া মৃত্যুদ- এবং জঙ্গী নেতা মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানীসহ অন্য ছয় আসামির বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-ের সাজাই বহাল রেখে হাইকোর্ট রায় প্রদান করে। ঐ দিন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের সম্বয়য়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায়টি প্রদান করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও বিলকিস ফাতেমা। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন এ্যাডভোকেট রেজাক খান, কামাল হোসেন মিয়া, মোঃ আহসান উল্লাহ। রাজীব হত্যার মামলায় মূল পরিকল্পনাকারী রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দ্বীপের মৃত্যুদ- বহাল রেখে রায় প্রদান করে হাইকোর্ট। এ ছাড়া যাবজ্জীবন দ- পাওয়া মাকসুদুল হাসান অনিকের সাজাও বহাল রাখেন। বাকি পাঁচজনের মধ্যে এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে ১০ বছরের কারাদ-সহ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদ- বহাল রাখা হয়। আদালত তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারও নেই। কোন ব্যক্তির কার ধর্ম সম্পর্কে কটাক্ষ করা উচিত নয়। এ মামলার আসামি মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানী ছাড়া বাকি সবাই মেধাবী শিক্ষার্থী। তারা কেন এই পথে এসেছে তা বোধগম্য নয়। এ ধরনের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিপথে যাওয়ার জন্য অভিভাবকরাই দায়ী বলে অনেকে মনে করেন। আসামিদের অপরাধ এতই ভয়ঙ্কর ও নৃসংশ যে তাদের সাজা কমানোর কোন সুযোগ নেই। এছাড়া আসামিদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, অপরাপর সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে ৫ আসামিকে সাজা কম দেয়ার বিষয়ে বলা হয়, নি¤œ আদালত সকল সাক্ষ্য সঠিকভাবেই পর্যালোচনা করে সাজা দিয়েছে। তাই ওই রায়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। বিচারিক আদালতের রায় পরিবর্তনের কারণ খুঁজে পাইনি। একারণে বিচারিক আদালতের রায়ই বহাল রাখা হলো। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে রাজধানীর পল্লবীতে তার বাসার সামনে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় রাজীবের বাবা ডাঃ নাজিম উদ্দিনের করা মামলায় ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। এর পরের বছর ২০১৫ সালের ১৮ মার্চ বিচারিক আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু করে। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে একইবছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার একটি আদালত আটজনকে সাজা দেয়। রায়ে দুইজনকে মৃত্যুদ-, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- ও ৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- ও অর্থদ- দেয়া হয়। রায়ে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা (নিম্ন আদালতে সাজা দেয়ার সময় পলাতক ছিলেন) ও ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। এছাড়া মাকসুর হাসান অনিককে যাবজ্জীবন কারাদ- এবং এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে দশ বছর করে সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। একইসঙ্গে তাদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদ-ের আদেশ দেয়া হয়। এছাড়া আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানীকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদ- ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদ- দেয়া হয়। আসামি সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদ- ও দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদ- দেয়া হয়। এ রায়ের পর গতবছর ১৭ জানুয়ারি মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে কারাবন্দী আসামিরা আপীল করে। পরে প্রধান বিচারপতি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন। এ নির্দেশে মামলাটির পেপারবুক তৈরি হওয়ার পর শুনানির জন্য হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়। গতবছর ৩১ অক্টোবর মামলাটি সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসে। এরপর গতবছর ৭ নবেম্বর থেকে শুনানি শুরু হয়। নি¤œ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রানা ছাড়া অপর সাত আসামির আপীলের ওপর শুনানি সম্পন্ন হয় গত ৯ জানুয়ারি। পরে গত ফেব্রুয়ারিতে রানাকে গ্রেফতার করা হয়। এ অবস্থায় রানা মামলা বাতিল চেয়ে এবং ডেথ রেফারেন্সে শুনানিতে অংশ নেয়ার সুযোগ চেয়ে আবেদন করে। হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করে। আদালত সাজা বাতিলের রুল খারিজ করে এবং ডেথ রেফারেন্সের শুনানিতে অংশ নেয়ার সুযোগ দেন। এরপর তারপক্ষে ২৯ মার্চ শুনানি শেষে গোটা ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপীলের ওপর একসঙ্গে রায় দিলেন হাইকোর্ট। রায়ে নি¤œ আদালতের সকল আসামির সাজা বহাল রাখা হয়।
×