ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম রোজায় স্বস্তির বৃষ্টি যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৯ মে ২০১৭

প্রথম রোজায় স্বস্তির বৃষ্টি যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোজার প্রথম দিনেই একপশলা বৃষ্টি যেন শান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়েছে রোজাদারদের। বিগত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরেই প্রকৃতিতে জ্যৈষ্ঠের প্রচ- দাবদাহ চললেও রবিবার আবহাওয়া ছিল কিছুটা শান্ত প্রকৃতির। সকাল থেকেই আকাশে প্রখর রোদের ভাব দেখা গেলে ১১টার পর থেকেই মেঘ জমতে থাকে। ১২টার মধ্যেই একপশলা বৃষ্টি শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। ফলে প্রকৃতি শান্ত হয়ে যায় অনেকটাই। স্বস্তি নেমে আসে জনজীবনে। এরপর থেকে আকশে রোদ মেঘের খেলা চললেও প্রকৃতির দাবদাহ আর ফিরে আসেনি। এছাড়া গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত কয়েকদিন লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হলেও প্রথম রোজায় এ অবস্থার অনেক উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। তারাবি, সেহরিতে বিদ্যুত ও পানি সঙ্কটে পড়তে হয়নি নগরবাসীকে। সব মিলিয়ে এবারে প্রথম রোজা বেশ ভালভাবেই পার করেছেন নগরবাসী। তবে রোজাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রায় এক বছর পর হঠাৎ রোজাব্রত পালনের কারণে প্রথম দিনে স্বাভাবিকতা কিছু হলে ব্যাহত হয়েছে। তারা জানান প্রথম রোজার পর থেকে সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। রাজধানীর ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মাস্টার্স (ম্যাথমেটিক্স) শেষ বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জ্যামি বলছিলেন, ছোট বেলায় থেকে রোজা পালন করার অভ্যাস। তাই রোজায় তেমন কোন সমস্যা হয় না। তবে প্রায় এক বছর পর রোজার কারণে খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। সে কারণে প্রথম দিনে একটু সমস্যা হলেও পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। মিরপুরের গৃহিণী ফারজানা হক বলছিলেন প্রতি বছর রোজা আসলেই আগ থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। এবারের রোজা আসার আগ থেকেই সেহরি ইফতারের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। বিশেষ করে প্রথম রোজায় রাতে খাবার পর আবার সেহরির জন্য রান্না করতে হয়েছে। সেহরি খেয়ে রাতে ঘুমানোর সময় পাওয়া যায়নি। তাই সকালে একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে। তবে প্রচ- গরমের কারণে মনে হয়েছিল প্রথম রোজা বেশ কষ্টে যাবে। দুপুরের বৃষ্টির পর পরিবেশ ঠা-া থাকায় প্রথম রোজায় বেশি কষ্ট অনুভব হয়নি। দুপুরের পর থেকে আবার ইফতারি তৈরিতে ব্যস্ততা। সব মিলিয়ে ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে দিন পার হয়ে যাওয়ার কারণে প্রথম রোজায় কষ্টটা বোঝা যায়নি। সরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সোহেল রানা। তিনি বলেন, প্রথম রোজায় কষ্ট হলেও তা মেনে নিয়েই রোজা থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সেহরি খাওয়ার পর আর ঘুমানোর সময় পাইনি। নামাজ পড়েই আবার অফিসের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। আবার অফিস থেকে বাসায় ফেরার যন্ত্রণাও কম হয়নি। পথে যানজটের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। প্রথম দিনের যানজট এত বেশি ছিল যে বাসায় ফেরাই কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। তারপরও প্রিয়জনের সঙ্গে ইফতারিতে অংশ নেয়ায় সারা দিনের রোজা থাকার কষ্ট লাঘব হয়ে গেছে। তবে প্রথম রোজায় শহরের চেয়ে গ্রামে পরিবেশ পরিস্থিতি ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে। শহরে প্রথম রোজায় সেহরি, ইফতারি ও তারাবি নামাজে তেমন কষ্ট না হলেও গ্রামের মানুষদের পড়তে হয়েছে বেশ ভোগান্তিতেই। সেহরি, ইফতারিতে বিদ্যুতের দেখা নেই বললেই চলে। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মোটাতে জেনারেটরের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গ্রামের অধিকাংশ মসজিদের তারাবির নামাজে গরম থেকে স্বস্তি পেতে জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাসব্যাপী এই বিকল্প ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে হবে তাদের। তারপরও স্বস্তি যে রমজানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুত ব্যবহারের মাধ্যমে ভোগান্তি কিছুটা হলে লাঘব করতে পেরেছেন তারা। প্রায় বছর পেরিয়ে মুসলমানদের দ্বারে আবার এসেছে মাহে রমজান। সিয়াম সাধনার মাস। ইসলামে রমজান মাসকে অধিক পবিত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ মাসেই রয়েছে লাইলাতুল কদরের মতো রজনী। যাকে কোরানে হাজার বছর অপেক্ষা উত্তম ঘোষণা করা হয়েছে। কোরানে বলা হযেছে এই রাতে যারা ইবাদত বন্দেগী করবে তারা হাজার বছরের ইবাদতের চেয়ে বেশি ছোয়াবের ভাগীদার হবে। এছাড়ারও সারাবিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য সিয়াম সাধনা একটি অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত। এ কারণে রমজান আসার আগেই প্রতিটি ঘরে ঘরে রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রবিবার প্রথম রোজার জন্য শনিবার রাতে তারাবির নামাজ আদায় করতে প্রত্যেক সমজিদের মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সেহরি সময় পাড়া মহল্লার প্রতিটি মসজিদের মাইক ব্যবহার করে রোজাদারদের ঘুম থেকে জাগাতে দেখা গেছে। রোজার মাস সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসকে ঘিরে নগরবাসীর মনে থাকে বাড়তি আগ্রহ। তাই রোজা আসলেই বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে ইফতারির আয়োজন রমজানের অন্যতম বৈশিষ্ট। এবার এর ব্যতিক্রম নেই। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হাজার হাজার মানুষের এক সঙ্গে বসে ইফতারি করতে দেখা গেছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সম্মানে ইফতারির আয়োজন করতে দেখা গেছে। প্রথম রোজায় বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা স্কাটনের লেডিস ক্লাবে এতিম ও আলেম উলামাদের সঙ্গে ইফতারিতে অংশ গ্রহণ করেন। এদিকে রোজার প্রথম দিনে পরিবারের লোকজনদের নিয়ে এক সঙ্গে ইফতারির পাশাপাশি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে এক সঙ্গে ইফতারির আয়োজন করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি চত্বরে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ইফতারি উপলক্ষে বসেছিল মিলনমেলা। বিকেল হতেই পরিবার পরিজন নিয়ে ইফতারি সামগ্রী কিনতে দেখা গেছে। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা দুপুর থেকে ইফতারি পরশরা সাজিয়ে বসছেন। বিকেল হতে ইফতারির দোকানগুলোতে লোকজনের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ইফতারের আইটেমের মধ্যে হালিমের চাহিদাই বেশি ছিল। এছাড়া অন্যবারের ন্যায় এবার পুরান ঢাকায় বসেছে ইফতারির বাহারি আয়োজন নিয়ে। চকবাজারের ইফতারির রয়েছে দীর্ঘদিনে ঐতিহ্য। যার যার সাধ্যমতো ইফতারি কিনতে দেখা গেছে। রোজার প্রথম দিনে ঢাকা ওয়াসা ও অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে রোজাদের সম্মানে বিশুদ্ধ পানিসহ ইফতারি সরবরাহ করতেও দেখা গেছে। যানজটে ভোগান্তি এদিকে প্রথম রোজায় রবিবার ‘অফিসে ডে’ হওয়ার কারণে যানজটেও নাকাল হতে হয়েছে রোজাদারদের। বিশেষ করে দুপুরের পরে অফিস থেকে বাসায় ফেরা যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটেও আটতে থাকতে হয়েছে। ইফতারের আগ মুহূর্তে একসঙ্গে ঘরে ফেরার তাড়ার কারণে ভোগান্তির চরমে ওঠে। অনেককে রাস্তা ও গাড়িতে বসেই ইফতার করতে দেখা গেছে। তবে সন্ধ্যায় ইফতারের আগ মুহূর্তে ঢাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। রাস্তায় কিছু ভোগান্তি হলে প্রিয়জনদের সঙ্গে ইফতারির আনন্দ এ ভাগান্তিকেও ম্লান করে দিয়েছে। প্রথম রোজা থেকেই ঢাকার সব খাবার হোটেল দিনের বেলায় চাদর দিয়ে ঘেরা ছিল। এছাড়া চা-সিগারেট ও পানের দোকানগুলোতে পর্দা দেয়া ছিল। হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন রোজাদারদের সম্মান জানাতে এ ব্যবস্থা। রমজানের এক মাস ধরেই তা পর্দা দিয়ে ঘেরা থাকবে। প্রথম সেহরিতে ঢাকার সব মসজিদগুলো থেকে সেহরি খাওয়ার জন্য মাইকিং করা ছাড়াও পাড়া মহল্লায় দল বেঁধে কাসিদা গেয়েও লোকজনকে জাগাতে সাহায্য করতে দেখা গেছে।
×