ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ

সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান নেয়া মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৮ মে ২০১৭

সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান নেয়া মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন মা প্রসবজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করছে। মাতৃ স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়লেও এখনও মাত্র ৫৫ শতাংশ মায়ের নিরাপদ মাতৃত্ব সুবিধা নিশ্চিত করতে পেরেছে সরকার। গর্ভকালীন সময় শতকরা ১৪ জন মহিলাই নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতায় ভোগেন, যা মাতৃমৃত্যুর জন্য বহুলাংশে দায়ী। প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ, খিচুনী, গর্ভকালীন জটিলতা, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা ও পরিবারের অবহেলা মাতৃমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। তবে শতকরা ৫১ ভাগ মৃত্যুই রক্তক্ষরণ ও খিচুনীর কারণে হয়ে থাকে। মাত্র শতকরা ৬৮ ভাগ গর্ভবর্তী মহিলা ১টি প্রসবপূর্ব সেবা এবং ২৬ ভাগ মহিলা ৪টি প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণ করে থাকেন। পাশাপাশি বেড়েছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান নেয়ার প্রবণতা, যা অনেকাংশেই মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। ৫৮ শতাংশ গর্ভবতীর ডেলিভারি অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী বা আত্মীয়স্বজনের হাতে হয়ে থাকে। আর মাত্র ৩৭ শতাংশ গর্ভবতীর ক্লিনিক বা হাসপাতালে প্রসব হয়ে থাকে। মা ও শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ বাড়িতে অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী বা আত্মীয়স্বজনের দ্বারা প্রসব করানো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর ও পপুলেশন কাউন্সিল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ রবিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছেÑ ‘নিরাপদ প্রসব চাই, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চল যাই’। বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস পেয়ে প্রতি লাখে জীবিত জন্মে ১৯৪ এ কমে এসেছে বলে দাবি করে আসছে সরকার। কিন্তু সরকার ঘোষিত মাতৃহার হ্রাসের পরিসংখ্যান ও প্রচলিত মাতৃস্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস পেলেও মায়েদের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য দেশে এখনও স্থায়ী ব্যবস্থাপনা নেই। মায়ের গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী যতেœর অভাব প্রকট রয়েই গেছে। আর মায়েদের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাপনা না থাকায় তাদের বড় একটি অংশ সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। মাতৃস্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুধু সন্তান প্রসবকেন্দ্রিক সেবার মধ্যেই সবাই সীমাবদ্ধ থাকছে। সন্তান প্রসবের ৪২ দিনের মধ্যে যারা মারা যান, তাদের ধরেই এ হিসাব করা হয়। কিন্তু একই ধারাবাহিকতায় এর পরবর্তী সময়ে যারা মারা যান, তাদের হিসাব থাকে না, যা মোটেই সমীচীন নয়। তাই মাতৃমৃত্যুর হিসাব করলে সব মায়ের হিসাব করা দরকার। একইভাবে মাতৃস্বাস্থ্যসেবা বললে সব মায়ের স্বাস্থ্যসেবাকে বিবেচনায় নিতে হবে। মাত্র ৪২ শতাংশ প্রসব প্রশিক্ষিত সেবিকার হাতে হয়ে থাকে বাংলাদেশ ডেমোগ্রফিক এ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৪ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩১ লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ৫ হাজার ২৭০ জন মায়ের মৃত্যু হয়। অর্থাৎ ৬০০ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ১ জন মা মারা যান। মাত্র ৪২ শতাংশ প্রসব প্রশিক্ষিত সেবিকার হাতে হয়ে থাকে। বাকি ৫৮ শতাংশ গর্ভবতীর ডেলিভারি অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী বা আত্মীয়স্বজনের হাতে হয়ে থাকে। এর মধ্যে আবার ৬৩ শতাংশ গর্ভবতীর প্রসব বাড়িতে হয়ে থাকে। আর মাত্র ৩৭ শতাংশ গর্ভবতীর ক্লিনিক বা হাসপাতালে প্রসব হয়ে থাকে। মা ও শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ বাড়িতে অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী বা আত্মীয়স্বজনের দ্বারা প্রসব করানো। কিশোরী মায়ের সংখ্যা বৃদ্ধি ও স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণে অনীহা বাংলাদেশে জননীতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস)-২০১৪ তে বলা হয়েছে, বিশ্বের যে সকল দেশে কিশোরীদের মধ্যে গর্ভধারণের হার বেশি, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এ দেশের মহিলাদের প্রায় অর্ধেকের বয়স বিয়ের সময়ে ১৮ বছরের কম থাকে। আর শতকরা ৫৮ ভাগ ২০ বছর বয়সের আগেই প্রথম সন্তানের জন্ম দেয়। এ বয়সের জন্য যথাযথ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য তথ্য ও সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ অপর্যাপ্ত। দেশে প্রতি হাজার শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ২ দশমিক ৯ জন মা মারা যান। তাদের মধ্যে কিশোরী বয়সে হওয়া মায়ের সংখ্যাই বেশি। এদিকে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যাটারনাল হেলথ কর্মসূচী। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, লাইন ডিরেক্টর-ম্যাটারনাল, নিওন্যাটাল, চাইল্ড ও এডোলসেন্ট হেলথ এমএনসিএন্ডএএইচ) ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সরকার, প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এমএইচ) ডাঃ পবিত্র কুমার শিকদার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।
×