ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাঙ্গাবালীতে ৪শ’ পরিবার জিম্মি

প্রভাবশালীর দখলে খাল

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৮ মে ২০১৭

প্রভাবশালীর দখলে খাল

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের টুঙ্গিবাড়িয়া মৌজার মঙ্গলবাড়িয়া সরকারী খাল গত ১০ বছর ধরে দখল করে রেখেছে এলাকার প্রভাবশালী পরিবার। খালটিতে পাঁচটি বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ চাষ। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় শাখা খালগুলো মরে শুকিয়ে গেছে। এলাকার মানুষ যখন পানির জন্য হাহাকার করে, তখন পানি পাচ্ছে না। আবার যখন পানির প্রয়োজন হয় না, তখন গোটা এলাকা খালের পানি দিয়ে তলিয়ে দেয়া হচ্ছে। জলাবদ্ধতা প্রকট আকার নিচ্ছে। চাষাবাদ ও গবাদিপশু পালন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। খালটির জন্য চার শ’ পরিবার জিম্মি হয়ে আছে। বাঁধ কেটে খালটি উদ্ধারের জন্য ভুক্তভোগী কৃষকরা ছুটছে সরকারী এক দফতর থেকে আরেক দফতরে। গত চার মাস ধরে চলছে প্রশাসনের চিঠি চালাচালি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ঝুলে আছে খাল উদ্ধার। ভুক্তভোগীরা জানায়, বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের পাঁচ কিলোমিটার লম্বা মঙ্গলবাড়িয়া খালটির দুটো মুখ রামনাবাদ নদীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে খালের দুটো মুখই বন্ধ করে দেয়। এলাকার জনগণের দুর্ভোগ বিবেচনায় নিয়ে পরে একটি কালভার্টের মাধ্যমে তুলাতলি খালের সঙ্গে যুক্ত করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখা হয়। এ খালের ওপর টুঙ্গিবাড়িয়াসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালী বিএনপি নেতা হাসান তালুকদারসহ তিন ভাই ১০ বছর আগে হঠাৎ সরকারী এ খালটি দখল করে নেয়। তারা বাঁধ দিয়ে খালটিকে ঘের বানিয়ে মাছ চাষ শুরু করে। এ খালের পানি দিয়ে চার শ’ একর জমির ধান ও রবিশস্য চাষাবাদ হয়। কৃষকদের চাষাবাদে যখন পানির প্রয়োজন হয়, তখন পানি আটকে রাখা হয়। আবার যখন পানির প্রয়োজন হয় না, তখন খালের পানি ছেড়ে পুরো এলাকা তলিয়ে দেয়া হয়। বর্ষায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার নেয়। আবুল কাশেম, সেলিম তালুকদার, কাশেম মিয়া, বশার গাজী, রিগান হাওলাদারসহ কয়েক ভুক্তভোগী কৃষক জানায়, লবণ পানির জলাবদ্ধতায় গত কয়েক বছরে এলাকায় রোপা আমন ধানের ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। রবিশস্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কৃষক হাসনাইন জানান, চলতি রবিশস্য মৌসুমে ৬ হেক্টর জমিতে মুগডাল ও মরিচ চাষ করে এক টাকার ফসলও ঘরে তুলতে পারেননি। জাহাঙ্গীর তালুকদার ২ হেক্টর জমিতে মুগডাল চাষ করে এক লাখ টাকা লোকসান গুনেছেন। লুৎফর হাওলাদারও লোকসান দিয়েছেন দুই লাখ টাকা। রবিশস্য এবং ধান ছাড়াও গবাদিপশু-হাঁসমুরগি পালন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গাছপালা মরে যেতে শুরু করেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সবগুলো শাখা খাল শুকিয়ে মাটি ফেটে গেছে। মূল খালের পানি দিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মঙ্গলবাড়িয়া সরকারী খাল উদ্ধারের জন্য এলাকার ৩৮ কৃষক পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানালে শুরু হয় চিঠি চালাচালি। এর ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদনে বাঁধ কেটে দেয়ার সুপারিশ করেন। বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিঠিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বাঁধ অপসারণ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করেন এবং বাঁধ অপসারণে অপারগতা জানান। সর্বশেষ এলাকার সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান রাঙ্গাবালী থানার অফিসার ইনচার্জকে বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দেন। কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। খাল দখলকারী পরিবারের অন্যতম সদস্য হাসান তালুকদার মোবাইল ফোনে বাঁধ দিয়ে সরকারী খাল দখল এবং ঘের বানিয়ে মাছ চাষের সত্যতা স্বীকার করে জানান, তিনি ২০০৮ সালে যুব উন্নয়ন দফতর থেকে খালের একসনা লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। এভাবে তিন বছর লিজ নিয়েছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় লিজের জন্য আবেদন করেননি। তাদের পারিবারিক জমি সংলগ্ন হওয়ায় খালটি তাদের বলেও দাবি করেন তিনি।
×