ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাজী আরিফ স্মরণে ‘মৃত্যু পেরিয়ে তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী’

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৮ মে ২০১৭

কাজী আরিফ স্মরণে ‘মৃত্যু পেরিয়ে তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। আর স্বাধীন দেশে শিল্পের প্রসারে কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন কবিতা। এদেশের আবৃত্তিশিল্পের প্রাতিষ্ঠানিক চর্চায় রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। সেই মহান মুক্তিযোদ্ধা ও আবৃত্তিশিল্পী কাজী আরিফকে স্মরণ করা হলো শনিবার। স্মরণসভায় বলা হলো বরেণ্য এই বাচিকশিল্পী ও স্থপতির শিল্পিত জীবনের কথা। খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পীসহ বিশিষ্টজনদের বাচনে উঠে এলো সাংস্কৃতিক জাগরণে তার ভূমিকার কথা। সকালে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘মৃত্যু পেরিয়ে তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী’ প্রতিপাদ্যে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। কাজী আরিফকে নিবেদিত আলোচনা ও কবিতাপাঠে সাজানো হয় স্মরণের এ আয়োজন। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় বিষাদের সুরমাখা বেহালার বাদনে। বাজিয়ে জার্মান শিল্পী জিমনে। স্মরণানুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আলোচনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, স্বাধীন বাংলার বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, স্থপতি শফি আহমেদ ও আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য ইকবাল খোরশেদ। সভাপতিত্ব করেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য বেলায়েত হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, কাজী আরিফ একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলে, তার আবৃত্তিচর্চায় সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে অসাম্প্রদায়িক ও সমাজকল্যাণমূলক চেতনা সবসময় ছিল। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশ যখন উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে, তখন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন আরিফ। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় কবিতাপাঠের পাশাপাশি রাজপথের প্রতিটি আন্দোলনে সব সময় সক্রিয় ছিলেন কাজী আরিফ। সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, কাজী আরিফ সযতেœ নিজের ভেতরের যন্ত্রণার কথা এড়িয়ে গেছে। তার জীবনের অর্ধেক ছিল অত্যন্ত দুঃখের। কিন্তু সেই দুঃখ কেড়ে নিতে পারেনি তার মুখের হাসি। আরিফ এত কাজ করেছে, কিন্তু তার সেই কাজের প্রচার তেমন নেই। সেও প্রচারের অপেক্ষায় না কাজ করে গেছে নেপথ্যে। তিনি আরও বলেন, একজন আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে কাজী আরিফের কবিতাপাঠের ধরনটি ছিল ভিন্ন। নাটকীয় ভঙ্গিমার পরিবর্তে তাঁর আবৃত্তিতে ছিল সহজাত ও স্বতন্ত্র একটি ধরন। আশরাফুল আলম বলেন, কাজী আরিফের গানের গলা ছিল অসাধারণ। কিন্তু সে গান ছেড়ে ধাবিত হয়েছে কবিতার পথে। অথচ গান গেয়ে খুব সহজেই তারকা হওয়া যায়। কিন্তু সে তা না করে কবিতার ঘাটে নৌকা ভেড়াল। এটা আমাকে খুব অবাক করে। সে ভালবেসেছিল আবৃত্তিকে। তার হৃদয়ের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের একটি নদী প্রবাহিত হয়েছে। তার হৃদয় ছিল বাঙালী চেতনায় পরিপুষ্ট। হাসান আরিফ বলেন, কাজী আরিফ যৌবনে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিজেকে নিবেদন করেছেন। শিল্পধারার প্রতি তার কতটা গভীর নিবেদন ছিল, আবৃত্তিশিল্পের সঙ্গে নিজের জীবনকে তিনি বেঁধে নিয়েছিলেন। অর্থোপার্জনের দিকে মনোনিবেশ না করে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলনে মনোনিবেশ করেছিলেন। শফি আহমেদ বলেন, পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসব উদযাপনের পরিকল্পনা করছি আমরা, তখন আমরা আরিফকে যুক্ত করলাম। আরিফ আমাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছিল। আজকে রাজধানীতে বসন্ত উৎসবের ব্যাপকতার পেছনে কাজী আরিফের বড় অবদান রয়েছে। অনুষ্ঠানে ডালিয়া আহমেদ পঠিত কবিতার শিরোনাম ছিল ‘পারিবারিক চালচিত্র’, গোলাম সারোয়ার আবৃত্তি করেন ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছে অকীর্ণ রেখে’, রেজিনা ওয়ালী লীনা আবৃত্তি করেন জীবনানন্দ দাশের কবিতা ‘অন্ধকার’, মাহিদুল ইসলাম আবৃত্তি করেন কাজী নজরুল ইসলামের ‘যদি আর বাঁশি না বাজে’ ও মজুমদার বিপ্লব আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পরিচয়’ কবিতাটি। গত ২৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কাজী আরিফ।
×