ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার বিবৃতি দীর্ঘ হতাশার বহিঃপ্রকাশ ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৮ মে ২০১৭

খালেদা জিয়ার বিবৃতি দীর্ঘ হতাশার বহিঃপ্রকাশ ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিবৃতি তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক হতাশার চরম বহিঃপ্রকাশ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র ও বন্দুকের নলের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী জঙ্গী ও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নেত্রী যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু বাংলার মানুষ তাঁর এই দিবাস্বপ্ন কখনই সফল হতে দেবে না। শনিবার এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের খালেদা জিয়ার বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে রায়ে ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি নেত্রীকে বলব, ধৈর্য ধরুন। ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসুন। নিজেদের অপকর্মের জন্য বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চান। নতুবা এই অপরাজনীতির কারণে আপনাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব আরও সঙ্কুচিত হবে। তিনি বলেন, এদেশের মানুষ এখনও সামরিক স্বৈরশাসক জিয়া ও বিএনপির দুঃশাসনের কথা ভুলে যায়নি। গণতন্ত্রের নামে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বেগম জিয়ার পুত্র তারেক জিয়ার প্রতিষ্ঠিত হাওয়া ভবনের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব শাহ এএমএস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মমতাজ উদ্দিন, মঞ্জুরুল ইমাম, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু, অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীসহ ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা, খুন ও ধর্ষণের ভয়াল স্মৃতি এখনও গণতন্ত্রকামী মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার চেষ্টায় সেদিন আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে পঙ্গু করে মানবতাকে যারা কলংকিত করেছিল, তাদের মুখে গণতন্ত্র, সুশাসন সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেত্রী তাঁর বিবৃতিতে দলীয় নেতাকর্মীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ‘উদুর পি-ি বুদোর ঘাড়ে’ চাপাতে চেয়েছেন। বিএনপির গত ৮ বছরে কর্মকা- পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিএনপি নেত্রী দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের জন্য কিছুই করেননি। রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে তিনি দেশব্যাপী যে ভয়াবহ খুন, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছেন তা মূলত নিজের ও পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি ধামাচাপা দিয়ে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তাই সাধারণ মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপি নেত্রী তাদের ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদের বীজ বপন করে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দেশের ৬৩টি জেলায় একই সময়ে ৫ শতাধিক সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জঙ্গীবাদের যে বিষফোঁড়া তৈরি করেছিল, জাতিকে এখনও তার খেসারত দিতে হচ্ছে। এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পৃষ্ঠপোষকরা এখনও পর্দার অন্তরালে থেকে বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার যখন সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে জঙ্গী নির্মূলের অভিযান চালায় তখন বেগম জিয়া এই সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী জঙ্গী সন্ত্রাসীদের জন্য মায়াকান্না করে তাদের রক্ষার চেষ্টা করেন। যার কারণে কানাডার আদালত ইতোমধ্যেই দু’বার বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে রায় দিয়েছে। বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়েও যিনি (খালেদা জিয়া) কালো টাকা সাদা করেন, দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে বার বার সময় চেয়ে কালক্ষেপণের কৌশল নেন, তাঁর মুখে সুশাসন ও নীতির কথা এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারক-বাহক ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক বিএনপি নেত্রীর বিবৃতি তাঁদের দীর্ঘ রাজনৈতিক হতাশার চরম বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না, আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। তাই জাতির পিতার হত্যার বিচার যেমন প্রচলিত আইনে হয়েছে, তেমনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও আন্তর্জাতিক মানদ-ে সম্পন্ন হচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, খুন হত্যা করে পার পাবার দিন শেষ। বিচারহীনতার সেই যুগ আর নেই। খালেদা জিয়া হত্যার মিশনে ॥ ড. হাছান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে হত্যার মিশনে ছিলেন, ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার পরও হত্যার মিশনে আছেন। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ’ আয়োজিত ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন-কানাডা কোর্ট- দেশ ও জাতির কল্যাণে আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চিত্তরঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে সভায় এ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা, বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদের সভাপতি জিন্নাত আলী খান জিন্নাহ, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন টয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ‘সরকার হত্যার মিশনে আছে’ খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনার স্বামী (জিয়াউর রহমান) যখন ক্ষমতায় থাকতে হত্যার মিশনে ছিলেন। আপনিও যখন ক্ষমতায় ছিলেন স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে হত্যার মিশনে ছিলেন। আর ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার পর গত কয়েক বছরে হত্যার মিশনে আছেন তা সমগ্র পৃথিবী জানে। অনুষ্ঠানে তিনি কানাডার আদালতের দেয়া রায়ের কপি সাংবাদিকদের শুনিয়ে বলেন, বিএনপি আর যাই হোক, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
×