ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রোজার বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৮ মে ২০১৭

গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রোজার বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ছে

এম শাহজাহান ॥ বেগুনের বাজারে গরম হাওয়া। এক লাফে ৬০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। একদিন আগেও ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই বেগুন। পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজারের সবজি ক্রেতা আসলাম আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানালেন, ‘মুসলিম বিশ্বে রোজা উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমিয়ে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টো! দাম বাড়িয়ে পণ্যের দাম দ্বিগুণ তিনগুণ করা হবে। তাহলে সংযমটা আর থাকলো কোথায়?’ আসলাম আলীর মতো দেশের কোটি কোটি ভোক্তাকে বাড়তি দাম দিয়ে ভোগ্যপণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করতে হচ্ছে। শুধু সবজি কেন-সব পণ্যের দাম এখন উর্ধমুখী। মূল্য বেড়ে ছোলার দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজি জাতীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেগুনের দাম। এছাড়া শসা, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, টমেটোর দাম বেড়ে গেছে। দাম বেড়ে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৮০, ধনেপাতা ১০০ এবং টমেটো ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কেন বাড়ছে জানতে চাইলে ফকিরাপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা বোরহান মিয়া জানালেন, ‘দাম জিগাইয়া কাম কি? কি লইবেন কন- রোজা আইছে বেশি দামেই খাইতে অইবো।’ কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, রোজা সামনে রেখে সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বেগুনের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, ইফতারিতে বেগুন একটি প্রিয় খাদ্য উপাদান। তাই বাসা-বাড়ি, হোটেল-রেস্তরাঁ এবং যারা সিজনাল ইফতারি ব্যবসা করেন তারাও বেগুন কিনছেন। এ কারণে দ্বিগুণ-আড়াইগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এই পণ্যটি। তিনি বলেন, বেগুনের পাশাপাশি, শসা, টমেটো, লেবু, ধনেপাতা এবং কাঁচামরিচের দাম বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজ রবিবার প্রথম রোজা হওয়ায় একদিন আগেই সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর সুযোগ নিচ্ছেন। সবজির পাশাপাশি ইফতারিতে ব্যবহার্য মুড়ি, চিড়া, আখের গুড়, খেজুর এবং নারকেলের দাম বেড়ে গেছে। প্রতিকেজি প্যাকেটজাত মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১২০ টাকায়। এছাড়া খোলা মুড়ি কিছুটা কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মালিবাগ বাজারের মুড়ি বিক্রেতা আমিনুল জানালেন, রোজা সামনে রেখে ইতোমধ্যে মুড়ির দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়ে গেছে। দাম আরও বাড়বে। তিনি বলেন, ইফতারিতে মুড়ি লাগবেই। এ কারণে বছরের অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এখন মুড়ির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়ে গেছে। মধুমাসের রোজায় ফলমূলই পছন্দ মধুমাস জৈষ্ঠ্যের রোজায় এবার ফলমূলেই আস্থা রাখতে চান রোজাদাররা। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, পেয়ারা, পানিফলসহ হরেক-রকমের দেশী ফল এখন বাজারে উঠেছে। আর ইফতারিতে রোজাদারদের পছন্দও ফলমূল। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নাহিদ জব্বার জনকণ্ঠকে বলেন, ইফারিতে ভাজা-পোড়া যতদূর সম্ভব পরিহার করা উচিত। বরং দেশী ফলমূল দিয়ে ইফতার করলে স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। তিনি বলেন, এবার মধুমাসে রোজা হচ্ছে। এই মাসে কিছুটা কম দামে দেশী ফলমূল পাওয়া যাবে। তাই ফলমূল বেশি করে খাওয়া উচিত। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ কবির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, সব ধরনের ভাজা জাতীয় খাবার পরিহার করে ইফতারিতে পানি জাতীয় খাবার বিশেষ করে শরবত বেশি খেতে হবে। এছাড়া দেশী ফলমূল খেতে হবে। তিনি বলেন, এবার এমন সময় রোজা হচ্ছে, যখন আবহাওয়ায় তাপমাত্রা অনেক বেশি। গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। এ কারণে এ সময়টাতে ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবার বর্জন করে ফলমূল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ভাল। ফলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগসহ বিভিন্ন জাতের আম উঠেছে বাজারে। এছাড়া পর্যাপ্ত লিচু পাওয়া যাচ্ছে। সব ধরনের দেশী ফলে এখন বাজার সয়লাব, তাই রোজাদাররা ইফতারির তালিকায় ফলমূল রাখছেন। পল্টন হাউস বিল্ডিংয়ের সামনে ফল বিক্রি করেন বেলায়েত হোসেন। তিনি জানালেন, রোজায় এবার ফলের দাম কমবে। বেশিরভাগ মানুষ রোজা থাকবেন, তাই ফলের চাহিদা কমবে। তিনি বলেন, বাজারে এখন ফলমূল সস্তায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি হিমসাগর আম জাত ও মানভেদে ৩০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ অন্য সময়ে এই আম ৬০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। চিনির দাম আরেক দফা বাড়ল কোনভাবেই কমানো যাচ্ছে না চিনির দাম। প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। মিলমালিকরা সংস্কারের নামে উৎপাদন বন্ধ রেখে ইতোমধ্যে বাজারে একটি কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। বিক্রি করা হচ্ছে মজুদকৃত চিনি। রমজান জুড়ে চিনি ও ভোজ্যতেলের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়ে থাকে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম এত পড়তির দিকে যে, ভোজ্যতেলের মূল্য বাড়ানোর কোন সুযোগ পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। কিন্তু চিনি উৎপাদন বন্ধ রেখে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হচ্ছে। হাতেগোনা চার-পাঁচ মিলমালিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে চিনির বাজার। এ অবস্থায় চিনির দামের পারদ কোথায় উঠে সেটিই এখন দেখার বিষয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী হাজী মোহাম্মদ আলী ভুট্টো জনকণ্ঠকে বলেন, মিলগেটে চিনির দাম না বাড়লে পাইকারি বাজারে বাড়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, চাহিদামতো মিল থেকে চিনির সরবরাহ ঠিক রাখতে মনিটরিং প্রয়োজন। এই স্তরে কারসাজি না হলে চিনির দাম বাড়বে না।
×