ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুইসাইডাল ভেস্ট, গ্রেনেড, বোমার সরঞ্জাম উদ্ধার

সাভারে বহুতল ভবনে জঙ্গী আস্তানায় অভিযান

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৮ মে ২০১৭

সাভারে বহুতল ভবনে জঙ্গী আস্তানায় অভিযান

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাভার, ২৭ মে ॥ জঙ্গী আস্তানা সন্দেহে সাভারে দুটি বহুতল ভবনে শ^াসরুদ্ধকর ১৯ ঘণ্টার অভিযানে তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট, সাতটি হ্যান্ড গ্রেনেড, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও ল্যাপটপ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে হ্যান্ড গ্রেনেড ও সুইসাইডাল ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটানোর মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে কোন জঙ্গীর সন্ধান মিলেনি। শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটায় শুরু হওয়া এ অভিযানের পরিসমাপ্তি হয় পরদিন শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে। পৌর এলাকার নামা গেন্ডা মহল্লায় শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে জঙ্গী আস্তানা সন্দেহে কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অভিযানে প্রথমে ব্যবসায়ী আনোয়ার মোল্লার মালিকানাধীন পাঁচতলা বাড়ির নিচ তলা থেকে এক নারী ও দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। এরপর রাত দশটার দিকে ওই বাড়ি থেকে অনুমান ২শ’ গজ দূরে অবস্থিত সিরাজুল ইসলাম (সাকিব) এর ৬ তলা বাড়ির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু আনোয়ার মোল্লার বাড়িতে পুলিশের অভিযানের সংবাদ পেয়ে ওই বাড়িতে থাকা জঙ্গীরা চুলায় রান্না রেখে জানালার গ্রিল কেটে পালিয়ে যায়। নামা গেন্ডা মোল্লা মার্কেট এলাকায় দুটি বাড়িতে জঙ্গীবিরোধী অভিযানকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বাড়ি দুটির পাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলা হয়। শনিবার সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো বেলা এগারটার দিকে ঢাকা থেকে কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের ডেপুটি কমিশনার মহিবুল ইসলামের নেতৃত্বে বোমা নিষ্ক্রিয় দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বোমা নিষ্ক্রিয়ের কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকে। অভিযানকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বোমা ডিস্পোজাল দলের অভিযানে তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট ও সাতটি হ্যান্ড গ্রেনেড পাওয়া যায়। দুপুর বারোটার পর থেকে নিষ্ক্রিয়কারী দল বিস্ফোরণ ঘটনোর মাধ্যমে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করে। ২ ঘণ্টার মধ্যে ১০টি বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দের আওয়াজ পাওয়া যায়। এলাকাবাসীর মধ্যে এ সময় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম সাংবাদিকদের জানান, জঙ্গী আস্তানায় অভিযান শেষ হয়েছে। সেখানে যে দশটি বোমার বিস্ফোরণ হয়েছে, তার মধ্যে সাতটি গ্রেনেড ও তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট ছিল। এছাড়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাড়ির মালিককে আটক করা হয়। ছয়তলা বাড়িতে অভিযান চলাকালে পাশের টিনশেড বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘরের তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকে। ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া মিলি আক্তার সাংবাদিকদের জানান, কামাল নামের এক ব্যক্তি এ বাড়ির ছয়টি কক্ষ ভাড়া নেয়। সেখানে কামালসহ নিয়মিত থাকত পাঁচজন। অন্যরা হলো- ইব্রাহীম (১৬), নাসিম (১৭), নাসরিন (১৮) এবং বয়স্ক অপর একজন। তারা ভাই-বোন পরিচয়ে থাকত। কয়েকদিন আগে থেকে তারা এখানে নেই। অভিযানের পর ওই টিনশেড ঘরটির ভেতরে দেখা যায়, এখানে-সেখানে ক্রিম তৈরির যন্ত্রপাতি, জেল প্রভৃতি ছড়িয়ে আছে। একই সময় পাশের অপর একটি বাড়ি থেকে কবির হোসেন নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, কামাল ছয়তলা বাড়ির কাছেই আব্দুল হালিম নামের এক ব্যক্তির একটি টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে ক্রিম বানাত। কামাল তাকে বলেছিলেন যে, সে এখানে রং ফর্সাকারী ক্রিম ও হেয়ার জেল তৈরি করবে। তবে কি করত- তা ঠিক জানি না। এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বলেন, কামালের সঙ্গে কবিরকে কথা বলতে দেখা গেছে বলে খবর থাকায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানান, ছয়তলা বাড়িটি নির্মাণ করছেন এক সৌদি প্রবাসী এবং তার ভাই সাকিব। আর এ বাড়ির কেয়ারটেকার হচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম। তাকে পাওয়া যায়নি। বেলা ২টার দিকে সাকিবকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চলতি মাসের ৮ তারিখে মাসিক পাঁচ হাজার টাকায় এক দম্পতি পরিচয়ে নির্মাণাধীন ছয়তলা এ বাড়ির দ্বিতীয় তলার এ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। মুসলিম (২৮) নামের ওই ব্যক্তির বাড়ি নোয়খালী বলে জানিয়েছিল। তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ছিল। ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এ.এস.এম. সায়েদ বলেন, অভিযানের সময় তাদের ঘরের ভেতর চুলায় গরম ভাত দেখা গেছে। এতে মনে হচ্ছে অভিযান শুরুর ঠিক আগেই তারা পালিয়ে যায়।
×