ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ॥ ৩ জুন সমাবেশ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৮ মে ২০১৭

ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ॥ ৩ জুন সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে অপসারণ করা ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, দেশে এখন সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন শুরু হয়েছে। ভোটের রাজনীতির কারণে এই আস্ফালনের কাছে মাথানত করেছে সরকার। যার মধ্য দিয়ে মৌলবাদী শক্তিকে সরাসরি উসকে দেয়া হয়েছে। দাবি অনুযায়ী সুপ্রীমকোর্টের ভাস্কর্য অপসারণ করায় এখন সকল ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে মৌলবাদীরা। শনিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। এদিকে ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ডাকে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। উগ্র-সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির আস্ফালনের প্রতিবাদে দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত কর্মসূচীতে। শহীদ মিনারে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ছাড়া হেফাজতে ইসলাম ও মৌলবাদী গোষ্ঠীদের নির্মূল করা সম্ভব হবে না। তারা বলেন, কোন অবস্থাতেই অপশক্তির কাছে মাথানত করা যাবে না। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেই হবে। আমাদের পাল্টা জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে, এর বিকল্প নেই। ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে আগামী ৩ জুন দেশব্যাপী প্রতিবাদ দিবস পালন করা হবে জোটের পক্ষ থেকে। এদিন জেলায় জেলায় প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার শহীদ মিনারে বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচী পালিত হবে। কর্মসূচীতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে হেফাজতের মতো অপশক্তির কাছে সরকার নতজানু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নাট্য ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছুই মানি না’ প্রতিপাদ্যে বাচ্চু আরও বলেন, অপশক্তির কাছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ও সরকার নতজানু হয়েছে। বিষয়টি কোনভাবেই কাম্য নয়। হেফাজত তথা মৌলবাদী গোষ্ঠীর চাপের মুখে ভাস্কর্য অপসারণ করেছে সরকার। বিষয়টি বেদনাদায়ক। প্রতিবাদ সমাবেশে কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, নান্দনিকতায় ত্রুটি থাকলে ভাস্কর্য পুনর্নির্মাণ হতে পারে, কিন্তু হেফাজতের কথায় ভাস্কর্য অপসারণ অযৌক্তিক। হেফাজত রাজাকারদের প্রতিনিধিত্ব করছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, জাতির আদর্শ বদলে যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতন বদলে যায় এমন কাজ অসমর্থনযোগ্য। সমাবেশে অভিনেতা শহীদুল ইসলাম সাচ্চু বলেন, তিনদিন আগেও জানতাম না জাতি এই লজ্জার ভেতরে পড়বে। এ সরকারের কাছে এটি প্রত্যাশা করিনি। শাহবাগে বিক্ষোভ ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদ মিছিলে হামলা, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শাহবাগে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। শনিবার প্রজন্ম চত্বরে এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ থেকে আটক ছাত্রনেতাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। সমাবেশের সভাপতি জামশেদ আনোয়ার কর্মসূচী ঘোষণা করে বলেন, রবিবার গ্রেফতারকৃতদের জামিন এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী সমাবেশ হবে। এছাড়া ১ জুন বেলা ১১টায় শাহবাগে সমবেত হয়ে সমাবেশ শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে যাত্রা করা হবে এবং সব শহীদ মিনারে সংহতি সমাবেশ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। ‘প্রতিবাদী ছাত্রজনতা’র ব্যানারে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ বামপন্থী কয়েকটি সংগঠনের আয়োজনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করছেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন। তিনি সমাবেশে বলেন, পুলিশ অন্যায়ভাবে ছাত্র-জনতার ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। উল্টো তারাই আবার মামলা করেছে। সমাবেশ শেষে শাহবাগ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলকারীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে নতুন আরও একটি কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এ সময় উদীচীর সাধারণ সম্পাদক কর্মসূচী ঘোষণা করে বলেন, রবিবার ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন তারা। ওয়ার্কার্স পার্টি সুপ্রীমকোর্টের ভাস্কর্য অপসারণের মধ্য দিয়ে দেশের অন্যান্য সকল ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার মৌলবাদী দাবি আরও জোরদার হবে বলে মনে করে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি। শনিবার পার্টির পলিটব্যুরোর স্টান্ডিং কমিটির এক জরুরী সভায় এমন মতামত তুলে ধরেন নেতারা। পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য অপসারণ প্রসঙ্গে বলা হয়- সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে ন্যায় বিচারের প্রতীক থেসিস ভাস্কর্য স্থাপন পরবর্তী যে বিতর্ক সৃষ্টি হলো এবং যেভাবে তা অপসারণ করা হলো, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সংবিধানের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সংঘর্ষিক। এটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য শুভ লক্ষণ নয়। আমরা পূর্বেই বলেছিলাম এই ভাস্কর্য অপসারণ করা হলে দেশের মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা ভাস্কর্য, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসমূহকে ভেঙ্গে ফেলার মৌলবাদী দাবি আরও জোরদার হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, আজকের পত্রিকায় হেফাজতসহ অন্যান্য ধর্মান্ধ দলগুলো সেই যৌথ আওয়াজ তুলেছে। ঢাকা শহরের সমস্ত ভাস্কর্য ভেঙ্গে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা প্রশ্ন তুলতে চাই ভাস্কর্য স্থাপনে সুপ্রীমকোর্ট যেভাবে সিদ্ধান্ত নিল, আবার অপসারণ যেভাবে করল এর দায় কার ঘাড়ে বর্তায়? এটি সুপ্রীমকোর্টের পক্ষ থেকে জাতির সামনে বিবৃতি প্রদান করে পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি আবারও আমরা দ্বার্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিধৃত সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবিচল থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, নুরুল হাসান, নুর আহমদ বকুল, কামরুল আহসান প্রমুখ। বগুড়া ॥ সুপ্রীমকোর্টের সামনে ভাস্কর্য অপসারণ ও পুলিশি হামলার প্রতিবাদ ও ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের দাবিতে বগুড়ায় মানববন্ধন হয়েছে। শহরের সাতমাথায় পৃথকভাবে বাসদ, নারীমুক্তি কেন্দ্র ও ছাত্রফ্রন্টের উদ্যোগে এ যৌথ কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। বাসদের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন- জেলার আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পল্টু, সদস্য সচিব সাইফুজ্জামান টুটুল, ছাত্র নেতা শহিদুল ইসলাম, দিলরুবা নূরী, রাধা রানী বর্মন প্রমুখ। অপরদিকে নারীমুক্তি কেন্দ্র ও ছাত্রফ্রন্টের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচী ছাত্রফ্রন্টের জেলার সভাপতি শীতল সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন- বাসদ নেতা প্রভাষক রঞ্জন কুমার দে, নারীমুক্তি কেন্দ্র জেলার সমন্বয়ক নূরজাহান রেখা। রবিশাল ॥ ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের দাবিতে বরিশালে মানববন্ধন হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বরিশাল জেলা শাখার উদ্যোগে নগরের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে এ কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। এ সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বরিশাল জেলা শাখার মোজাম্মেল হক সাগরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিশাত জাহান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক হাসিবুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক মামুন হোসেন ও মিথুন চক্রবর্তী প্রমুখ। বক্তারা বলেন, সরকার মৌলবাদীদের দাবি মেনে নিয়েছে। তারা যে দাবিই করছে সরকার সেটাই মেনে নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ভোটের আশায় তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। কিন্তু তারা কি জানে না, নারী নেতৃত্বকে হেফাজত সমর্থন করবে না? খাগড়াছড়ি ॥ ভাস্কর্য অপসারণ এবং আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। শহরের শাপলা চত্বর থেকে বিক্ষোভ-মিছিল শুরু করতে চাইলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। পরে পুলিশি বাধার মুখে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম কৃষ্ণ দে’র সঞ্চালনায় পথসভায় বক্তব্য রাখেন- শহর শাখার আহ্বায়ক কবির হোসেন, সদস্য নাজির হোসেন। বক্তারা বলেন, মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয়। কিন্তু সরকার মৌলবাদীদের সঙ্গে আপোষ করে, তাদের এ অযৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলেছে। ভাস্কর্য সংস্কৃতির অংশ। অবিলম্বে ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়ে বক্তরা, ঢাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানান। গাইবান্ধা ॥ ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদ ও পুনঃস্থাপন, সকল নেতাদের মুক্তির দাবিতে শনিবার স্থানীয় শহীদ মিনার চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। জেলার সকল প্রগতিশীল সংগঠনসমূহ এতে অংশ নেয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন মৌলবাদী গোষ্ঠীর দাবির কাছে সরকারের মাথানত করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। বক্তরা অবিলন্বে সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানান। বক্তারা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা লিটন নন্দী, উদীচী নেতা আরিফ নুরসহ সকল নেতার মুক্তি দাবি করেন। বক্তারা আরও বলেন, হেফাজতের দাবি কাছে মাথানত করে এর আগে পাঠ্যপুস্তককে অসাম্প্রদায়িক লেখকদের লেখা বাদ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা সাম্প্রদায়িকতাকরণ করা হয়েছে, এবার ভাস্কর্য সরানোর মধ্য দিয়ে সরকারের অপরাজনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উদীচী জেলা সংসদের সভাপতি জহুরুল কাইয়ুম, বাংলাদেশের কমিউনস্ট পার্টি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, গোলাম রব্বানী, মাহমুদুল গণি রিজন, রিক্তু প্রসাদ, প্রতিভা সরকার ববি, ইশরাত জাহান লিপি, আব্দুর রাজ্জাক রেজা, তপন কুমার বর্মন, সজীব রঞ্জন চাকী পলাশ, শিরিন আকতার, আসমানী আকতার আশা।
×