ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রমজান ও ঈদে বিশেষ প্রস্তুতি ॥ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৮ মে ২০১৭

রমজান ও ঈদে বিশেষ প্রস্তুতি ॥ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ

শংকর কুমার দে ॥ এবারের পবিত্র রমজান মাসে ও ঈদের সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লক্ষাধিক সদস্যকে নিয়োজিত করা হয়েছে। যাদের মোতায়েন করা হবে তারা টহল দেবে, তল্লাশি করবে ও সতর্ক অবস্থায় থাকবে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাতেই তিন স্তরের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ সহস্রাধিক সদস্য। এবারের রমজানে মাসব্যাপী জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ও ওয়ারেন্টের আসামি গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। রাজধানীর সবকটি বিপণিবিতান ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আনা, বড় মার্কেটগুলোর প্রবেশমুখে আর্চওয়ে লাগানো, মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করে ক্রেতাদের মার্কেটে ঢোকানোর নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষজন যাতে নিষ্কণ্টক ও নির্বিঘেœ পবিত্র রমজান মাসের কেনাকাটা করে আনন্দে ঈদ উৎসব পালন করতে পারে সেজন্য রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তিন ধাপে ভাগ করে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সারাদেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার, রেঞ্জ ডিআইজি ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারদের কাছে রমজান ও ঈদের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র রমজান মাস ও ঈদপরবর্তী সময়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকা মহানগরীর আট ডিভিশনের ৪৯ থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের। এবারের রমজান মাসকে সামনে রেখে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে; যাতে নাশকতা, নৈরাজ্য, খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, অপহরণ, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, প্রতারণা ও যানজটসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধে কঠোরভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ডিএমপি সূত্র জানায়, গত বুধবার ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সমন্বয় সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র মাহে রমজান মাস ও পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নৌযান ও রেল চলাচল এবং যাত্রীসেবা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয় ওই সভায়। ডিএমপি কমিশনার মার্কেটের নিরাপত্তার জন্য মার্কেট মালিক সমিতিকে সিসিটিভি, আর্চওয়ে, এক্সেস কন্ট্রোল মেশিনসহ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে নির্দেশ দেন। রমজানে ভেজালযুক্ত খাবার প্রতিরোধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই সভায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসাসহ অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থাকে নতুন করে কোন রাস্তা না খুঁড়তে ও পুরাতন খোঁড়া রাস্তা দ্রুত মেরামত করার অনুরোধ জানান ডিএমপি কমিশনার। রাজধানীর সবকটি বিপণিবিতান ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আনতে স্ব-স্ব বিপণিবিতান কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রত্যেক মার্কেট সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। বড় মার্কেটগুলোর প্রবেশমুখে আর্চওয়ে লাগাতে হবে। মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করে ক্রেতাদের মার্কেটে ঢোকাতে হবে। এক্ষেত্রে মার্কেটের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশও সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার। ডিএমপির সভা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করা হচ্ছে। রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় টহল দেবে টহল পুলিশ দল। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টির অপরাধী চক্র দমনে বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্যদের বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের টহল ও চেকপোস্ট বসানোর ফলে অপরাধীরা সহজে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলে যে ধরনের অপরাধী চক্রের তৎপরতা বেশি থাকে, সে পরিস্থিতি অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মোতায়েন করা হচ্ছে। কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, রাজধানী বিভিন্ন বিপণিবিতান, শপিংমল, মার্কেটে মহিলা চোর ধরার জন্য মহিলা পুলিশ নিয়োগ করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ মহিলা চোর দল দোকানপাটে ভিড় জমিয়ে দোকানির ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে অলক্ষ্যে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে যাতে কেটে না পড়তে পারে সেজন্য মহিলা পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হচ্ছে। মহিলা চোর ও পকেটমারের দল রমজান মাসে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করে। সাদা পোশাকে থাকবে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বোরকা পার্টি নামানো হবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। বোরকা পার্টির সদস্যরা ছিনতাই প্রতিরোধ করে ছিনতাইকারী দলের সদস্যদের পাকড়াও করবে। রমজান মাসে রাজধানীতে যে ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের উর্ধতন এক কর্মকর্তা দৈনিক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বিশেষ করে রমজান মাস শেষে ঈদের সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের অপরাধী চক্রের সদস্যদের তৎপরতা বেড়ে যায়। রাজধানীর মানুষজন যাতে নির্বিঘেœ, নিশ্চিন্তে নিষ্কণ্টক কেনাকাটা, চলাফেরা করতে পারে সে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে ভালভাবে। শেষ পর্যন্ত যাতে এ ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, পবিত্র রমজান মাস ও ঈদপরবর্তী রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তিন ধাপে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে রমজানের প্রথম বিশ দিন। তার পরের দশ দিনের মধ্যে সাত দিন ও তিন দিনকে গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, এক কোটি মানুষের মেগাসিটি রাজধানী ঢাকাতে অপরাধী চক্রের তৎপরতা থাকবে এবং বিচ্ছিন্ন কিছু অপরাধ সংঘটিত হবে তা ধরে নিয়েই বলা চলে পবিত্র রমজান মাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা হচ্ছে দেশের প্রাণ এবং এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাটা সহজ হবে। কেবলমাত্র রাজধানী ঢাকাতেই দশ সহস্রাধিক পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এক মাস ধরে সিয়াম সাধনার মাস রমজানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সব ধরনের উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়েছে।
×