২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের সঙ্গে সরাসরি ক্রেমলিনের একটি নিরাপদ ও গোপন যোগাযোগের চ্যানেল চালু করা যায় কি-না তা নিয়ে ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনার ও ওয়াশিংটনে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। এ কাজে রুশ দূতাবাসের কূটনৈতিক সুবিধা ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিলেন তারা, যাতে শপথের আগে তাদের এই যোগাযোগের ওপর নজরদারি এড়ানো যায়। এ সম্পর্কিত গোয়েন্দা নথির বিষয়ে অবগত মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের ।
রুশ রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াক মস্কোয় তার উর্বতনদের জানান, গত বছর ডিসেম্বরের শুরুতে একদিন ট্রাম্প টাওয়ারে কুশনারের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। সেখানেই কুশনার গোপন যোগাযোগ চ্যানেল চালুর ওই প্রস্তাব দেন। কিসলিয়াকের ওই বার্তা দ্রুত ধরতে পেরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনও উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্প টাওয়ারের ওই বৈঠকে। হোয়াইট হাউস গত এপ্রিলে ওই বৈঠকের বিষয়টি এমনভাবে প্রকাশ করে যে সেটা ছিল মামুলি কোন সাক্ষাত। কিন্তু এফবিআই এখন ওই বৈঠকের পাশাপাশি রাশিয়ার এক ব্যাংকারের সঙ্গে কুশনারের বৈঠকের বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। আর কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গত বছর এপ্রিল থেকে নবেম্বরের মধ্যে অন্তত দুইবার ফোনেও রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা হয়েছিল কুশনারের। ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, গোপন চ্যানেল চালুর ক্ষেত্রে একজন আমেরিকানকে রুশ দূতাবাসের যোগাযোগের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে দেয়ার প্রস্তাব আসার পর কিসলিয়াক পিছু হটেন, কেননা তাতে ট্রাম্পের দল ও মস্কো- দুই পক্ষের জন্যই ঝুঁকি তৈরি হত। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, কুশনারের ওই বৈঠক বা যোগাযোগের বিষয়গুলো তাদের নজরদারিতে ছিল না। হোয়াইট হাউস, ফ্লিনের আইনজীবী বা রুশ দূতাবাসের কেউ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। এফবিআইয়ের পরিচালক পদ থেকে ১০ মে জেমস কোমিকে অপসারণের পর ট্রাম্প প্রশাসনের রুশ আঁতাত নিয়ে বিতর্ক নতুন করে উসকে ওঠে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অভিযোগ, রাশিয়া গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল, যাতে ফল ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির পক্ষে যায়। অবশ্য রাশিয়া শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কোন ধরনের প্রভাব রাখার কথা অস্বীকার করে আসছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকা মার্কিন বিশ্লেষকদের বিভ্রান্ত করতে রাশিয়া কখনও কখনও তাদের কূটনৈতিক যোগাযোগের চ্যানেলে ভুয়া খবর ছাড়ে। তবে কুশনার-কিসলিয়াকের বৈঠকের ভুয়া খবর ছেড়ে মস্কোর কোন লাভের সম্ভাবনা তারা দেখছেন না। এ কারণে মস্কোয় পাঠানো কিসলিয়াকের বার্তা তারা সঠিক বলেই মনে করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এড়িয়ে মস্কোর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় কুশনারের এই আগ্রহ রশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ আরও ঘনীভূত করছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এ ঘটনায় বিবেচনাবোধের বড় ধরনের ঘাটতিও দেখতে পাচ্ছেন। সাবেক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ‘কুশনার কীভাবে বিশ্বাস করলেন যে, রুশরা নিজেরাই গোপন কথা ফাঁস করে দেবে না? তাছাড়া ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের কেউ যদি রুশ দূতাবাসে যাওয়া আসা করে, তা অবশ্যই নজরে পড়বে এবং বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করবে। এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত অপরিপক্ক কাজ এবং এটা পাগলামি ছাড়া আর কিছু না।’
