ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গরমে বিদ্যুত পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ২৮ মে ২০১৭

গরমে বিদ্যুত পরিস্থিতি

গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়, ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত উৎপাদন ও বিতরণে ঘাটতি থাকলে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হয়। বিগত বছরগুলোয় গ্রীষ্মকালের বিদ্যুত পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায় অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। বলা যায়, লোডশেডিংয়ের কষ্ট মানুষ অনেকটাই ভুলে গিয়েছিল। বর্তমান সরকার বিদ্যুত খাতে যথেষ্ট উন্নতি করেছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে দেশব্যাপী প্রচ- গরম পড়ার প্রেক্ষিতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অসহনীয় অবস্থায় চলে যাওয়ার পর এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যে বিগত আট বছরে দেশে বিদ্যুতের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। দেশের বহু জেলায় গ্রাম পর্যায়ে নতুন করে বিদ্যুত বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চোখে পড়ার মতোই বিদ্যুত সেক্টরের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ৭৭টি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি সই হয়েছে। এতে আগামীতে ১১ হাজার ৫০৯ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হবে। জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে জানা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় রয়েছে। সবার জন্য বিদ্যুত ব্যবস্থা নিশ্চিতে ২০২১ সালের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে। চলতি বছরেই জাতীয় গ্রিডে ১ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত যোগ করা হবে। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার মাত্র ৫ বছরে বিদ্যুত উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধি করে ২০১৩ সালে ১ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করে। দ্বিতীয় মেয়াদে মাত্র ৩ বছরে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে।’ বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা দৈনিক ৮ হাজার ৮০০ থেকে নয় হাজার মেগাওয়াট। এর সঙ্গে ২০ শতাংশ রিজার্ভ সক্ষমতা যোগ করলে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে মোট সক্ষমতার প্রয়োজন ১২ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু বাংলাদেশে এখন বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। বাড়তি এ সক্ষমতার পরও এত লোডশেডিং হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। লোডশেডিংয়ের জন্য বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন হ্রাস, গ্যাস সঙ্কট ও সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়াকে দায়ী করছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। পরিস্থিতি উন্নয়নে বিতরণ কোম্পানি ও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছে বিদ্যুত বিভাগ। তারপরও পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি কেন হলো না সেটি বড় প্রশ্ন। বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশের বিদ্যুত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, রমজানে সরবরাহ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। আমরা তার কথায় আস্থা রাখতে চাই। যে কোন মূল্যে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিদ্যুত সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর মাধ্যমে মানুষের দুঃসহ কষ্ট লাঘবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সেজন্য যা যা করা দরকার সেটি করতে হবে। তাপপ্রবাহকে আমরা কোনক্রমেই দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করতে পারি না। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠলে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক তাপমাত্রাও দুর্যোগের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে। মানুষের প্রত্যাশা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্মরণে রেখে বিদ্যুত পরিস্থিতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সমর্থ হবেন।
×