ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাবির শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নিয়ে বিতর্ক

প্রকাশিত: ০৯:০০, ২৭ মে ২০১৭

রাবির শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নিয়ে বিতর্ক

মামুন-অর-রশীদ, রাজশাহী/কায়কোবাদ খান, রাবি ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ এবং হাজারো শহীদ বুদ্ধিজীবীকে শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের দক্ষিণ পাশে নির্মিত এ স্মৃতিফলকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি নিচের দিকে স্থাপন করায় তীব্র সমালোচনা করে স্মৃতিফলকটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে রাবি ছাত্রলীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগ। স্মৃতিফলকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবমাননা হয়েছে বলে মনে করেন নবনিযুক্ত রাবি উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান। এ নিয়ে করণীয় ঠিক করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জানা যায়, গত বছরের আগস্টে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। রাবির চারুকলা অনুষদের পাঁচ শিক্ষকের নক্সায় প্রায় ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এ স্মৃতিফলক। স্মৃতিফলকের মূল বেদির আয়তন ১৭৪০ বর্গফুট। বেদির তিন দিকে ফেন্সি ব্রিক দিয়ে নির্মিত হয়েছে সিঁড়ি। মূল বেদির দক্ষিণ ধারে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে নির্মাণ করা হয়েছে ২৬ ফুট দৈর্ঘ্য এবং সাত ফুট প্রস্থের কালো মার্বেল পাথরের বেদি। তার উপরে ২৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং তিন ফুট প্রস্থের সবুজ বেদি। এর উপরে স্থাপন করা স্মৃতিফলকের প্রধান অংশ সাদা দেয়ালের উচ্চতা ১০ ফুট, দৈর্ঘ্যে ২০ ফুট। সাদা দেয়ালের পেছনের অংশের দেয়ালে খোদাই করা হয়েছে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ’৬২-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদের মৃত্যু, দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যু, এগারো দফা ও ’৭০-এর নির্বাচনের বিভিন্ন চিত্র। সামনের দেয়ালের বাম পাশের উপরের দিকে ফুটিয়ে তোলা হয় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক ড. সুখরঞ্জন সমাদ্দার, শহীদ ড. হবিবুর রহমান ও মীর আব্দুল কাইয়ূমের প্রতিকৃতি। আর ডান পাশের নিচের দিকে স্থাপন করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষণের প্রতিকৃতি। এ বছরের মার্চ মাসে শেষ হয় স্মৃতিফলকের নির্মাণকাজ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের প্রতিচিত্রটি স্মৃতিফলকের সামনের দেয়ালের নিচের দিকে ফুটিয়ে তোলায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়। গত ৬ এপ্রিল রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু তার ব্যক্তিগত ফেসবুক এ্যাকাউন্টে লেখেন, গোটা জাতি যেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বা ছবিকে সবার উপরে রাখে, এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা মহামন্য রাষ্ট্রপতির ছবিরও উপরে বঙ্গবন্ধুর ছবি রাখে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি নিচে লাগানো হয়েছে। এমন অবমাননা কি মেনে নেয়া যায়? এখন সময় প্রতিবাদের। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ রাবির তিন অধ্যাপক স্মরণে ২০১৫ সালের ১৫ জুন সিন্ডিকেটে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের নক্সার অনুমোদন দেয়া হয়। গত বছরের ১৪ আগস্ট স্মৃতিফলকটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। স্মৃতিফলকের মূল নক্সায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ছিল না। স্মৃতিফলকের নিচের দিকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক ফজলুল করিম বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই, প্রশাসন এর ব্যাখ্যা দেবে। এ বিষয়ে রাবির নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, নবনির্মিত স্মৃতিফলকে জাতির পিতার প্রতিকৃতি নিচের দিকে স্থাপন করে তাকে স্পষ্টতই অবমাননা করা হয়েছে। এ সঙ্কটের সমাধান কিভাবে করা যায় তা নিয়ে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই আমরা আলোচনা করছি। তিনি বলেন, রাবির শহীদ তিন শিক্ষকের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হল এবং টিএসসির নামকরণ করা হয়েছে। চাইলে সেগুলোর সামনে তাদের ভাস্কর্য নির্মাণ করা যেত। শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার আছে।
×