ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাগিং পদ্ধতি

চাঁপাই থেকে এবার ৩ হাজার টন আম রফতানি হবে

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ২৭ মে ২০১৭

চাঁপাই থেকে এবার ৩ হাজার টন আম রফতানি হবে

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ এবারও রফতানি তালিকায় শীর্ষে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (সাবেক আম গবেষণাগার) এক গবেষক কয়েক বছর আগে চীনে ব্যাগিং প্রশিক্ষণ ও ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরলে আম সংরক্ষণে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটে যায়। বেড়ে যায় রফতানিযোগ্য আমের পরিমাণ। বিশেষ করে তারই তত্ত্বাবধানে সমগ্র দেশে ব্যাগিং সিস্টেম ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি চীনের আদলে দেশের বৃহত্তর আম উৎপাদনকারী এলাকা চাঁপাইয়ের মহারাজপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘ব্যাগিং তৈরির’ কারখানা, যার মেশিনপত্র আমদানি করা হয় চীন থেকে। ফলে সমগ্র দেশে এ ‘ব্যাগিং পদ্ধতি’ ছড়িয়ে পড়েছে। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে গাছে ঝুলে থাকা আমে এ ব্যাগ পরিয়ে দিলে তা হয়ে ওঠে একদিকে বিষমুক্ত, অপরদিকে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা। এ কারণে কৃষককে ওই আম গাছে প্রয়োগ করতে হয় না কোন ধরনের কীটনাশক। এ ধরনের আম পরিপক্ব অবস্থায় পাড়ার পর বিদেশে রফতানির উপযোগী হয়ে ওঠে। গত কয়েক বছর ধরে এ পদ্ধতি গ্রহণ করায় বাংলাদেশের আম বিদেশে যাচ্ছে। বাড়ছে বড় ধরনের চাহিদা। সব মিলিয়ে এ বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় আট হাজার মেট্রিক টন বা তারও বেশি আম রফতানি তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেই এবার তিন হাজার মেট্রিক টন আম বিদেশে যাবে। এর পাশাপাশি সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, রাজশাহী, রংপুর অঞ্চল হতেও আম রফতানি হচ্ছে বলে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো নিশ্চিত করেছে। সম্প্রতি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারে এক সেমিনারে আশ্বাস দিয়ে বলেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের চাহিদা চীন, ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে অনেক বেশি রয়েছে। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশন ও শিবগঞ্জের একাধিক সংগঠন আম রফতানির প্রস্তুতি নিয়ে বসে রয়েছে। যদিও ২০১৫ সালে রফতানি শুরু করে মাত্র সাড়ে তিন টন দিয়ে পরের বছর (২০১৬) তা বেড়ে হয় ১০৫ টন। এবার অর্থাৎ ২০১৭ সালে শুধুমাত্র শিবগঞ্জ এলাকায় রফতানিযোগ্য আম সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন, যা সংখ্যায় দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি আম। একই ভাবে ভোলাহাট ও গোমস্তাপুরে তিন হাজারের অধিক মেট্রিক টন আম রফতানিযোগ্য হয়ে উঠেছে। সদর উপজেলায় এর পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন। বিদেশে চাঁপাইয়ের ল্যাংড়া, খিরশা ও একাধিক বারিজাতের প্রচ- চাহিদা রয়েছে। রফতানিযোগ্য আমের পরিমাণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ‘ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি’। এ পদ্ধতিতে আম চাষ করে বিগত বছরগুলোতে ভাল দাম পাওয়ার কারণে কৃষক আঁকড়ে ধরেছে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি। একদিকে উৎপাদিত আমের চাহিদা ও ভাল দাম পাওয়ার কারনে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পদ্ধতিটি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অভিমত, চার উপজেলা থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আম রফতানির জন্য যে আম তৈরি করা হয়েছে হয়তবা তার সিংহভাগ রফতানি সম্ভব হবে না। তবুও আমচাষীরা সরে আসছে না ‘ব্যাগিং’ পদ্ধতি থেকে। চাঁপাই হর্টিকালচার সেন্টারের অভিমত, গত বছর জেলায় ৩০ লাখ ব্যাগ ব্যবহার হলেও এ বছর ব্যবহার হবে প্রায় দুই কোটি ব্যাগ। সামনের বছর পাঁচ কোটি ছড়িয়ে যাবে। শিবগঞ্জের এক আম ব্যবসায়ী জানান, গত বছর ‘ফ্রুট ব্যাগিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩৫ টন আম বিদেশে রফতানি করে ৩০ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এবারও তিনি দুই লাখ ব্যাগ ব্যবহার করে শতাধিক মেট্রিক টন আম তৈরি করেছেন। এ ধরনের চাষীর সংখ্যা শিবগঞ্জে রয়েছে শতাধিক। কারণ এ উপজেলায় ১২ হাজার হেক্টরে আম চাষ হয়ে থাকে। পাশাপাশি ভারতের মালদহ জেলা লাগোয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা। খুবই উৎকৃষ্টমানের আম উৎপাদন করে থাকেন এখানকার চাষীরা। ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশনের অভিমত, তারা এখন ইচ্ছা করলে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন আম রফতানি করতে পারে। কিন্তু তাদের এ সুযোগ নেই। এ ধরনের চাষীর সংখ্যা সহস্রাধিক ছাড়িয়ে যাবে। উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রফতানিযোগ্য উৎকৃষ্টমানের আম উৎপাদন হলেও এ জেলায় এখন পর্যন্ত কোন স্থানীয় রফতানিকারক নেই। আমের পুরোটাই রফতানি করে ঢাকাসহ অন্য জেলার বাসিন্দা বা লোক। ভবিষ্যতে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো স্থানীয়ভাবে রফতানিকারক সৃষ্টি করতে পারলে চাঁপাইয়ের রফতানিযোগ্য আমের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
×