ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কৃষক পাচ্ছেন পণ্যের ন্যায্যমূল্য

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ২৭ মে ২০১৭

কৃষক পাচ্ছেন পণ্যের ন্যায্যমূল্য

এখানে রাত্রি নিশিথে সবুজ গায়ে, এসে থেমে গেছে ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা; সবুজ মাঠেরা পথ দেয় পায়ে পায়ে, পথ নেই তবু এখানে যে পথ হাঁটা কিশোর কবি সুকান্তের এই কবিতাই বলে দেয় সেকালে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন ছিল। সেখানে চলার পথ ছিল না। কিন্তু প্রচুর পথ হাঁটতে হতো। তাই ভাল যোগাযোগের অভাবে ঘড়ির কাঁটা ধরে সেখানে কোন কাজই করা সম্ভব হতো না। গ্রামের রাস্তা বলতে আমরা জানতাম গ্রামের মাঝ দিয়ে আঁকা-বাঁকা সঙ্কীর্ণ মেঠো পথ। শুকনা মৌসুমে ধুলায় ধূসর, আর বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই কাদায় পরিপূর্ণ রাস্তা। পানি প্রবাহের জন্য রাস্তার মাঝে মাঝে কেটে দেয়ার কারণে বা পানির চাপে ভেঙ্গে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হতো। সে খাদে কখনো হাঁটু পানি, কখনো কোমর পানি। এমনই বন্ধুর পথে চলতে হতো গ্রামের মানুষকে। গ্রামের মাঝে ছোট-বড় নদী-নালা, খাল-বিল গ্রামটিকে বিভক্ত করে গ্রামবাসীর চলার পথকে আর কঠিন করে তুলতো। খেয়া নৌকা, কলাগাছের ভেলা বা বাঁশের সাঁকোই ছিল তখনকার পারাপারের অবলম্বন। যতই বিপদ হোক ঝড় বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অথবা গভীর রাতে খেয়াপারে নৌকা মিলত না। ফলে পরের দিনে নৌকার অপেক্ষায় বন্দী থাকতে হতো পথিককে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের কোথাও সাঁকো, কোথাও নৌকা, কোথাও বা কোমর জলে ভিজে ৫/৬ কি.মি. পথ হেঁটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হতো। এ ছিল তাদের প্রতিদিনের যুদ্ধ। আর কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসকই ছিল একমাত্র ভরসা। গ্রামে ভাল চিকিৎসা সুবিধা নেই। ভাল ডাক্তার গ্রামে থাকে না। ভাল চিকিৎসার জন্য রোগীকে শহরে নেয়ার প্রয়োজন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় এ্যাম্বুলেন্স তো দূরের কথা কোন যানবাহন পাওয়া ছিল অসম্ভব। ফলে সাইকেল, নৌকা বা গরুর গাড়িই তাদের শেষ অবলম্বন। সেই গরুর গাড়ি সংগ্রহ করতে যে সময় ব্যয় হতো ততক্ষণে রোগীর অবস্থা কাহিল। দীর্ঘ পথ গরুর গাড়ির ঝাঁকুনিতে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ত। কেউবা মারা যেত হাসপাতালে পৌঁছার আগেই। শুধু তাই নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকার কারণে গ্রামের মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো সবচেয়ে বেশি। ক্রেতার অভাবে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই পড়ে থাকত। নিজের শ্রমে ঘামে উৎপাদিত ফসল পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হতো কৃষক। অথচ শহর থেকে আমদানি করা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য চড়া মূল্যে কিনতে হতো। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। গত দেড় যুগে গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর অলিগলির রাস্তাও এখন পাকা। ফলে গ্রামের দরিদ্র বিধবার ঘরে রাতের বেলা তার মুরগি যে ডিম পাড়ে তা সকালেই চলে আসে রংপুর সিটি বাজারে। বিকেলেই সেই ডিমের কিছু পৌঁছে যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নগরীতে। আব্দুর রউফ সরকার, রংপুর থেকে
×