ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পায়ের স্যান্ডেল আর ওঠে না হাতে

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ২৭ মে ২০১৭

পায়ের স্যান্ডেল আর ওঠে  না হাতে

দৃশ্যপট বদলে গেছে। গ্রাম-শহর হয়েছে এক। খানা-খন্দক কিংবা এবড়ো-থেবড়ো কাদামাটি ঘেঁটে হাঁটু সমান কাপড় উঁচিয়ে এখন আর বাজারে আসতে হয় না। পায়ের স্যান্ডেল এখন হাতে থাকে না, পায়ে গলেই চলে মানুষ। বাবলাতলা বাজারটির চারদিকের দশ গ্রামের এমন দৃশ্য। ধুলাসার এবং বালিয়াতলী ইউনিয়নের মাঝখানে বাজারটির চারদিকে অন্তত দশ কিলোমিটার এলাকায় এসব গ্রামের মানুষ এখন উৎফুল্লচিত্তে স্বস্তিদায়ক মানসিকতায় চলাচল করছে ১২ মাস। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা- সবকালই তাদের কাছে এখন সমান। দিন-রাত কখনই চলাচল করতে সমস্যা হয় না। অটোরিক্সা কিংবা ভ্যান চলাচল করছে সমানতালে। বিদ্যুতে যেন আরেক দিগন্তের ছোঁয়া লেগেছে। গভীর রাত অবধি বাজারে গিয়ে এখন তারা ডিস এন্টেনার বদৌলতে বেসরকারী চ্যানেলের তাজা খবর দেখে। জমায় আড্ডার আসর। যোগাযোগ ব্যবস্থায় এমন যুগান্তকারী উন্নয়নে সাগরপারের কলাপাড়ার দুর্গম জনপদের মানুষকে স্বস্তি এনে দিয়েছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা যানবাহনে চড়ে আসছে। শুধু বাবলাতলা বাজার নয়। চরচাপলী বাজার থেকে আশপাশের অবস্থাও এক। পাকা রাস্তায় গার্ডার ব্রিজ পেরিয়ে যানবাহন নিয়েই মানুষ যেতে পারছে পর্যটনপল্লী গঙ্গামতি সৈকতে। সেখানে অবলোকন করতে পারে লাল কাঁকড়াদের ভোঁ-দৌড়। দেখছে সৈকতের নৈসর্গিক দৃশ্য-সাগরের উত্তাল জলরাশি। যেখানে আট বছর আগে চরধুলাসার বেড়িবাঁধ থেকে বাবলাতলা বাজারে আসতেই এক ঘণ্টা সময় লেগেছে। এখন মাত্র দশ মিনিটেই তারা পৌঁছে যায়। ধুলাসার এবং বালিয়াতলীর ঢোঁস এলাকা হচ্ছে ইলিশের ভাল মোকাম। এখান থেকে ইলিশ কিনে কলাপাড়া আনতে লাগত বরফ। এখন তাজা ইলিশ সেখান থেকে কলাপাড়ার বাজারে অনায়াসে আসছে। কারণ সময় লাগছে মাত্র আধা ঘণ্টা। ২০০৯ সালে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর চার বছরে পাল্টে গেছে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর এখন তো প্রত্যন্ত পল্লীতেও সিলকোট রাস্তায় চলাচল। চলছে যোগাযোগের উন্নয়ন মহাযজ্ঞ। ধানখালীর ছইলাবুনিয়া গ্রাম থেকে কলাপাড়ায় আসতে লাগত নানা প্রস্তুতি। সময় লাগত অন্তত চার ঘন্টা। সাত বছর আগের অবস্থা ছিল এটি। বর্ষাকালে তো কাদামাটিতে নাস্তানাবুদ। জামা-কাপড়, হাত-পা সব কাদায় একাকার হয়ে যেত। বর্ষাকালে স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পর্যন্ত অর্ধেক কমে গেছে। ওই দুঃখও কেটে গেছে। আঁকাবাঁকা খালপাড়ের সড়কটি এখন পিচঢালা পথ। শুধু হাঁটা-চলার সুবিধা হয়নি। চাষী তাদের উৎপাদিত পণ্যশস্য বাজারজাত করছে স্বস্তিতে। কৃষক হানিফ আকন জানালেন, এ সড়কটি পাকা করায় তাদের মূল উন্নয়ন হয়ে গেছে। ভ্রমণ পিপাসুদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়েছে এ সড়কটি। ধানখালী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আশপাশের কোথাও ছিল না ইটের রাস্তা। সেখানকার ধানসহ তরমুজ চাষীদের ভাগ্য এখন প্রসন্ন। রাস্তা পাকা হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা সরাসরি মাঠে আসছে। ট্রাকে লোড করে সেখান থেকেই উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করছে। বাড়িতে বসেই গুনছে কড়কড়ে নোট। চম্পাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার জানান, তাঁর ইউনিয়নটি পটুয়াখালী জেলার সবচেয়ে দুর্গম এলাকা। সেখানে সাত বছর আগে ইটের নামগন্ধও ছিল না। এখন পর্যন্ত অন্তত আট কিলোমিটার সড়ক পাকা হয়েছে। ফলে চারটি গ্রামের স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ১২ মাস নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারছে। এছাড়া চাষীদের পণ্যসামগ্রী পরিবহনে খুব সুবিধা হয়েছে। বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবিএম হুমায়ুন কবির জানান, তাঁর ইউনিয়নে অন্তত কুড়ি কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক পাকা করা হয়েছে। আরও চলমান রয়েছে সাত-আট কিমি। চাকামইয়া ইউনিয়নের পাকা রাস্তা দিয়ে এখন সোজা তারিকাটা পর্যন্ত নির্বিঘেœ মানুষের চলাচল। প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার কারণে ১২ গ্রামের মানুষের কাছে জীবন-যাত্রায় অনাবিল স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। লতাচাপলীর ডংকুপাড়ার বাসিন্দারা জানায়, তাদের রাস্তাটি পাকা করায় মানুষ কুয়াকাটায় বিকল্প পথে যেতে পারছে স্বাচ্ছন্দে। এছাড়া রাখাইনদের বৃহৎ বৌদ্ধ মন্দির মিশ্রীপাড়ায় সহজে চলাচল করছে পর্যটক-দর্শনার্থী। গ্রামটির কমিউনিটি ক্লিনিকে এখন গর্ভবতী মা- শিশুরাও ভ্যানসহ বিভিন্ন বাহনে এসে আয়াশে নিতে পারছে চিকিৎসা সেবা। ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম সিকদার জানান, যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমার ইউনিয়নটি সবচেয়ে দুর্গম ছিল। দীর্ঘদিন মানুষকে যোগাযোগ করতে হয়েছে খেয়া নৌকা পার হয়ে। গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ হয়ে গেছে। অপরদিকে মহিপুরে যেতে ক্লোজার হয়েছে। আর অভ্যন্তরীণ মূল সড়কটি পাকা হয়েছে। ফলে রাস্তার দু’দিকের চারটি গ্রামে মানুষের চলাচলে স্বস্তি নেমে এসেছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের বর্ষাকালীন দুর্ভোগ কেটে গেছে। মেজবাহউদ্দিন মাননু কলাপাড়া থেকে
×