ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

প্রাথমিক শিক্ষা সমকালীন অবস্থা

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২৭ মে ২০১৭

প্রাথমিক শিক্ষা সমকালীন অবস্থা

আমাদের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র কর্তৃক সর্বজনীন, অবৈতনিক ও একই পদ্ধতি বা মানের প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র তথা সরকারকে দেয়া হয়েছে। তেমনি ১৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মৌল নীতি হিসেবে সকলের জন্য বিকশিত হওয়ার ও উপরে ওঠার সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার বিধান দেয়া হয়েছে। সংবিধানে গৃহীত এই দায়িত্ব পালনক্রমে ১৯৭৩ এর ২৮ ডিসেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময়ে সারাদেশে বিদ্যমান সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় (৩৬১৬৫) এবং সেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদিগকে (১৫৫০২৩) যথাক্রম জাতীয়কৃত বিদ্যালয় ও সরকারী কর্মচারী হিসাবে ঘোষণা করেন। ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-ের পর প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা সরকারের এ দায়িত্ব পালনে পরবর্তী স্বৈরতান্ত্রিক ও অর্ধস্বৈরতান্ত্রিক শাসকসমূহ তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ১৯৮৯ সালে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে যথা ঈপ্সিত গুণগত উৎকর্ষ অর্জনের জন্য তখনকার সকল নিবন্ধিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সংশ্লিষ্ট করে আমি এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্যতম নেতা মোঃ মুনসুর আলী, গোলাম মোহাম্মদ ও গীরিজা প্রসাদকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ বেসরকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গঠন করি। এই সমিতির তরফ হতে তখন থেকে সকল নিবন্ধিত প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং এ পর্যায়ে শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষ বাড়ানোর জন্য দাবি উত্থাপিত করতে থাকি। ১৯৯০ সালে এরশাদের শাসন আমলে প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলককরণ) আইনের আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা কাগজে কলমে বাধ্যতামূলক করা হলেও এসব নিবন্ধিত বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহকে জাতীয়করণ করা হয়নি। এরশাদ প্রবর্তিত এই আইনের আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা তথা প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ না বাড়িয়ে প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণের আইনী ঘোষণা প্রহসনের নামান্তর হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের সমিতির মোড়কে বিভিন্ন সময়ে এই সব বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের এবং সেখানে কর্মরত সকল শিক্ষককে সরকারী কর্মচারীর বেতন ও মর্যাদা দেওয়ার জন্য দাবি জানাতে থাকি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দফায় এসব বেসরকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও পারিতোষিক বাড়ান এবং সরকারের তরফ থেকে বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ উন্নয়নের ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। পরে ২০১২ সালের ২৭ মে তার ২য় শাসন আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও সমাজের প্রতি অবিচল আনুগত্য নিয়ে সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের তৎকালীন সকল বেসরকারী নিবন্ধিত প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ জাতীয়করণ করার সিদ্ধান্ত দেন। ১৯৭৫ পরবর্তী স্বৈরতান্ত্রিক ও অর্ধস্বৈরতান্ত্রিক সরকারের আমলের স্থবিরতার তুলনায় জননেত্রী শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত ছিল যেমনি বলিষ্ঠ তেমনি যুগান্তকারী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। শেখ হাসিনার এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতে ২৫২৪০টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সে সব বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষকদের (১০০৮৮৩) সরকারী কর্মচারীদের বেতন ও মর্যাদা দেয়া হয়। তখন থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সারা বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার সবচেয়ে বিস্তৃত দায়িত্ব পালন শুরু করে। এই দায়িত্বের আওতায় সমকালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সরকারী কর্মচারী এই মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনাধীন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে শতকরা ৩৪ ভাগ ¯œাতক উত্তীর্ণ। এই দায়িত্ব পালনক্রমে বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১০ম সংসদের গত ১৫তম অধিবেশনে প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপিত করেছে। এই সমীক্ষাপত্রে ২০১৬ পর্যন্ত দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিদ্যমান অবস্থা এবং অর্জিত সফলতার বিবরণ দেয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে উপস্থাপিত প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক উপাত্তসমূহ এই ক্ষেত্রে অধিকতর সফলতা অর্জনের পথ নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিদিত এই প্রতিবেদনে ২০১৬-এর শুরু থেকে সারাদেশে সর্বমোট ২৫ শ্রেণীর ১২২১৭৬টি আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে বলে বলা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬৩৫৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী (৬৭%), ১৮৩১৮টি বেসরকারী কিন্ডার গার্টেন (১৫%), ১৩৫২২টি অসরকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় (৫.১%), ৬২৫৮টি (১.২৫%) আনন্দ বিদ্যালয় (বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের অন্তর্ভুক্তকরণ কার্যক্রমের আওতাধীন) এবং ৫৭১১টি (৪.৬%) এবতেদায়ী মাদ্রাসাভুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, ১৫৫৪ (১.২৭%) টি সরকারী ও সরকার স্বীকৃত মাধ্যমিক বা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসমূহের অন্তর্ভুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই হিসাব মতে শতকরা ৬৭ ভাগেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকার কর্তৃক পরিচালিত। মোটা দাগে এসব উপাত্তের আলোকে বলা চলে যে সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একই মানের অবৈতনিক ও সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়িত করতে হলে (ক) বেসরকারী পর্যায়ে পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের শিক্ষা বেতনবিহীন করতে হবে এবং (খ) বিদ্যালয়ের বিভিন্নতা সত্ত্বেও একই মানের পাঠ্যপুস্তক সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ কার্যক্রম অনুসৃত বা পরিচালিত করতে হবে। বেতনবিহীন শিক্ষার বাইরে ব্যক্তিগত বা বেসরকারী পর্যায়ে বেতনযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের অনুসরণে উৎকর্ষের নিরিখে বিত্তবান পরিবারের ছেলে মেয়েদের জন্য পরিচালিত হওয়ার অনুমতি দেয়ার অবকাশ থাকলেও পাঠ্যক্রম এক না হলে একই মানের শিক্ষা বিষয়ক সংবিধানের সূত্র লঙ্ঘিত হবে। উপরোক্ত লক্ষ্যে একটি মেয়াদী এবং বস্তুনিষ্ঠ কার্যক্রম এখনই প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ২০১৬-এর শুরুতে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে সর্বমোট ১৯০৬৭৭৬১ জন ছাত্রছাত্রী শিক্ষা পাচ্ছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে শতকরা ৪৯.১৩ ভাগ ছেলে এবং শতকরা ৫০.৮৭ ভাগ মেয়ে। প্রান্তিকভাবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের সংখ্যাল্পতা সম্ভবত গৃহস্থালি, কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও দরিদ্র পরিবারের ছেলে শিশুদের লাভজনক কর্মসংস্থানের বিদ্যমানতার প্রতি ইঙ্গিত করে। এই প্রতিবেদনে বিদিত হয়েছে যে সমকালে দেশের ৬-১০ বয়োবর্গের সকল শিশুর শতকরা ৯৭.৯ ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণ করছে। ২০১০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষারত শিশুদের সংখ্যা ছিল দেশের ৬-১০ বয়োবর্গের সকল শিশুর শতকরা ৯৪.৮ ভাগ। অবশ্য নিছক সংখ্যার হিসাবে ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে প্রাথমিক ছাত্র ছাত্রীদের সংখ্যা প্রান্তিকভাবে কমে এসেছে। এ ঘটেছে মূলত এই সময়ে জনসংখ্যা বাড়ার হার কমে আসার ফলশ্রুতিতে। সমকালে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষারত শিশুদের শতকরা হার বাড়ার পিছনে কাজ করেছে সকল শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার আবরণে আনার লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত যোগাযোগ ও সন্দিপনীয় পদক্ষেপ, উপবৃত্তির প্রচলন ও বিস্তারন এবং ক্ষেত্রবিশেষে এসব স্কুলে দুপুরে খাবার দেয়ার কার্যক্রম। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষারত সকল শিশুর মধ্যে শতকরা ৮১.৩% ভাগ পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা সমাপ্ত করে। সমকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠরত শিশুদের বিদ্যালয়ে খাবার দেয়ার কার্যক্রমের আওতায় ১.৪ মিলিয়ন এবং উপবৃত্তি কার্যক্রমের আওতায় ১৩ মিলিয়ন শিশুকে আনা হয়েছে। এ দুটি কার্যক্রমের সঙ্গে সীমিত সংখ্যায় প্রতিবন্ধী (৬৭৭১৬) শিশুদের বিশেষ বৃত্তি দেয়ার ফলশ্রুতিতে দরিদ্র পরিবারসমূহ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার হার বেড়েছে। সমকালে গ্রামাঞ্চলের সকল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীদিগকে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। এসব উপবৃত্তি প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মাদের অনুকূলে তাদের স্ব স্ব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পাঠানোর প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এসব দরিদ্র পরিবারের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার আবরণে আনার জন্যে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত সার্বজনীন উপবৃত্তি পূর্ণাঙ্গভাবে সফল করতে অধিকতর নিবিড় ও সমন্বিত তত্ত্বাবধান মূলক কার্যক্রম গ্রহণ বাঞ্ছনীয় হবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় নির্ভীক পথদ্রষ্টা হিসাবে ভূমিকা রেখেছেন। এই উপবৃত্তির একাংশ যাতে শিক্ষার্থীদের মায়েরা তাদের সন্তানদের পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে প্রযুক্ত করতে সন্দিপীত হোন তার জন্য উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার অনুশাসন দেয়া লক্ষ্যানুগ হবে। উন্নত দেশসমূহের সঙ্গে তুলনীয় বুদ্ধিমত্তার গুনাংক (বা আই কিউ) দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টি বর্ধনের মাধ্যমে যাতে ঈপ্সিত মাত্রায় বাড়ানো যায় তা আমাদের আশু করণীয় কার্যক্রম বলে গ্রহণ করা লক্ষ্যানুগ হবে। আলোচনাধীন প্রতিবেদনে বিদিত হয়েছে যে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরে খাবার দেয়া বাবদ সমকালে প্রতিবছর সরকার ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয় করছে। এই অঙ্কের ব্যয়ের যথার্থতা ও উৎকর্ষ পরিমাপন লক্ষ্যানুগ হবে বলে এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরে খাবার সরবরাহ করার কার্যক্রম বাড়িয়ে কৃষি শিল্প ও সেবা ক্ষেত্রে ৬-১৪ বয়োবর্গের সকল শিশুর কর্মসংস্থান বেআইনী বলে ঘোষণা ও বলবৎ করতে হবে। বাংলাদেশের নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এরা ৩০টি বিভিন্ন ভাষায় কথাবার্তা বলে থাকেন। এদের অধিকাংশ উপজাতীয় এলাকায় চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন। এদের শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিগম্যতা সবচাইতে কম। তাদের অভিগম্যতা বাড়ানো এবং তা স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে এদের ৫টি মাতৃভাষায় ৫ রকমের পাঠ্যপুস্তক প্রনয়নের কাজ চলছে। সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্র ভাষা বাংলার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান ও বিস্তারন জাতীয় জীবনের মধ্যস্রোতে সকলকে আনার জন্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলে বিবেচ্য। সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক পরিবারে শিশুদের জন্যে তাদেরকে বিভিন্ন ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের কার্যক্রম আবেগ মমতার বাইরে নিয়ে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার প্রচলন ও ব্যবহার অধিকতর জনস্বার্থক হবে কিনা তা বিশ্লেষণ করে এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিধি বিস্তৃত বলেই মনে হয়। এদের জন্য পরিচালিত এসব বিশেষায়িত বিদ্যালয় সর্বাংশে অবৈতনিক হয়ত নয়। অন্যকথায়, এখন পর্যন্ত সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের কতিপয় এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় সর্বজনীন, একই মান বিশিষ্ট ও অবৈতনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষা দেয়ার কাঠামোর বাইরে রয়ে গেছে। সংবিধানিক দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিপালিতকরণের লক্ষ্যে সরকারকে এই প্রেক্ষিতে সত্বর সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রয়োজনের নিরিখে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারী নিবন্ধিত প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ জাতীয়করণ করতে হবে এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ যাতে অবৈতনিক ও একই মানের ও ভাষায় শিক্ষাদানে সক্ষম হয় ও থাকে তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা সকল বিদ্যালয়ের শতকরা ৬০ ভাগ। এই শতকরা ৬০ ভাগ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের সকল ছাত্র সংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগ শিক্ষারত। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত সকলের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা শতকরা ৬৪ ভাগ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারী ও স্বীকৃত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনের দায়িত্ব বহন করে। এবতেদায়ী মাদ্রাসার আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এই সব প্রাথমিক বিদ্যালয় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতকরা ৮.২ ভাগ। এর বাইরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালনাধীনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ স্থানীয় প্রয়োজন মেটানোর জন্যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতকরা ১৫ ভাগ পরিচালিত হয় এবং অসরকারী প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) আওতায় অসরকারী সংস্থা সম্পর্কিত ব্যুরোর (এনজিও ব্যুরো) পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতকরা ১৩.৩ সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হয়ে আসছে। অসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের পরিচালনায় ৫৩২৩৩৫ সংখ্যক শিক্ষার্থী সংবলিত ১৭৮২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। এর বাইরে ব্র্যাকের পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অসরকারী প্রতিষ্ঠান ৪৯৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত করছে। বিভিন্ন তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের তত্ত্বাবধানভিত্তিক উৎকর্ষ সমীক্ষা করে সর্বোৎকৃষ্ট তত্ত্বাবধানের শৈলী নির্ণয় ও অনুসরণ করা এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যানুগ হবে বলে মনে হয়। আলোচনাধীন প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ভৌগোলিক অবস্থানের নিরিখে প্রাথমিক শিক্ষার হারে ব্যবধান বিদ্যমান। খুলনা বিভাগে সকল শিশুর শতকরা ১৯.৭ ভাগ এবং সিলেট বিভাগে শতকরা ২৬.৬ ভাগ প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বলে ২০১১ সালে কৃত জরিপে জানা গেছে। এরূপ এলাকাভিত্তিক অপূর্ণাঙ্গতা এখনও বেশ বিদ্যমান বলে ধরা যেতে পারে। সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে যে, শারীরিক ও মানসিক বিকলতাসহ প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষারত শিশুদের সংখ্যা ৬৭৮৪০। এর মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা ৩৭৫৬৪ এবং মেয়েদের সংখ্যা ৩০২৭৬। এদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ২৩১৭৭ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী। এসব বিকল শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মাধ্যম হিসেবে এদেরকে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়/ বিভাগ থেকে সহায়তা দেয়ার সীমিত কার্যক্রম বিদ্যমান। এই কার্যক্রম বাড়িয়ে সকল প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ করা না হলে এরা আগামীতে সমাজের সম্পদ না হয়ে দায় হয়ে দাঁড়াবে। সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগণের বসতিতে, উপকূলীয় উপজেলা ও হাওড় মধ্যস্থিত গ্রামগুলোতে এবং নগরাঞ্চলের বস্তি এলাকায় প্রয়োজনের নিরিখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠরত শিশুদের গড় সংখ্যা দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় কম। যে সব এলাকায় কম প্রাথমিক বিদ্যালয় বিদ্যমান এবং প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অভিগম্যতাও পিছনে পরে আছে, সে সব এলাকায় একটি সুনির্দষ্ট প্রকল্পের আওতায় জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সাম্প্রতিককালে নতুন ১৫০০ প্রাথমিক বিদ্যমান নির্মাণ করেছে। এসব এলাকার বিশেষ প্রয়োজনের আলোকে অবস্থান বিন্যাসিত বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় সীমিত সংখ্যায় আরও প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষিতে ও লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম প্রণয়ন ও গ্রহণের অবকাশ বিদ্যমান। আলোচনাধীন প্রতিবেদনে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের শতকরা ৯০.৬ ভাগ এবং বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের শতকরা ৮২.৭৫ ভাগে ন্যূনপক্ষে ১টি করে শৌচাগার বিদ্যমান বলে জানা গেছে। মেয়েদের জন্যে পৃথক শৌচাগার প্রায় ৬০ ভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যমান। প্রাথমিক পর্যায়ে মেয়েদের অভিগম্যতা বাড়ানোর সঙ্গে সাযুয্য করে তাদের জন্য সকল বিদ্যালয়ে পৃথক শৌচাগার স্থাপন এবং একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যে শৌচাগার সুবিধা যোগকরণের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তীয় প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান কার্যক্রমকে জোড়ালো করবে বলে আমাদের ধারণা। এই প্রতিবেদনে শতকরা ৮৪ ভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিদ্যমান বলে বিদিত হয়েছে। বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা সংবলিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা শতকরা ৬৯.৫ ভাগ। এ অবস্থার উন্নয়ন হওয়া সত্বর প্রয়োজন। এই প্রতিবেদনে বিদিত হয়েছে যে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের জন্যে বরাদ্দকৃত ব্যয়াংক ২০১৪-১৫ তে ৫০ কোটি থেকে ২০১৫-১৬ তে ২০০ কোটি টাকার উপরে উঠেছে। তথাপিও বলা দরকার যে সাংবিধানিকভাবে একইমানের সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে এই ব্যয়াংক বাড়াতে হবে। এই প্রতিবেদনে এক বেলা কার্যরত প্রাথমিক বিদ্যালয় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতকরা ২৮.৭ ভাগ বলে বিদিত হয়েছে। শিক্ষকদের ২ বেলা কাজ করে শিক্ষাদানের রীতি যদি হিসাবে নেয়া হয় তাহলে দেখা যায় যে শতকরা ৯৪ ভাগ বিদ্যালয়ে প্রতি শ্রেণী কক্ষে গড়ে ৪৬ সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী এই সময়ে শিক্ষা পেয়ে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের দু’বেলা কাজ করা শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রতিকূল রীতি বা বিধান কিনা তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সর্বমোট ৫৫৪১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয় বলে বিদিত হয়েছে। একই বছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বাজেট বরাদ্দ ছিল ১৪৫০৪ কোটি টাকা বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদের (জিডিপি) শতকরা ০.৮৮ ভাগ। ২০১৫ এর মার্চ পর্যন্ত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে সর্বমোট ২২৪৪৪ অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ যোগ করা হয়েছে। এ সংখ্যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে গেছে। শ্রেণীকক্ষে অনধিক ৪০ শিক্ষার্থীকে ১ বেলা ৬ ঘণ্টা শিক্ষাদানের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে বিদ্যালয় বিশেষে অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন হবে। শেখ হাসিনার সরকারের বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শতকরা ৯৯.৯ ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বছরের ১ম মাসে বিনা মূল্যে সকল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য পাঠ্যপুস্তক দেয়া হয়। ২০১৫ সালে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে সর্বমোট ১১৩৫৫৯৯৭৪টি পুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয়াংক গত বছরে হিসাব করা হয়েছে ৮০ কোটি টাকার উপরে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে শতকরা প্রায় ১০০% ছাত্রছাত্রীকে পাঠ্য পুস্তক সরকার থেকে দেয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সকল দেশের জন্য এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী শতকরা ৮৮.৭ ভাগ প্রাথমিক শিক্ষকদের নির্ধারিত পেশাগত যোগ্যতা বিদ্যমান বলে জানা গেছে। এর মধ্যে শিক্ষিকাদের অনুপাত কম (শতকরা ৭৬ ভাগ)। একই সালে শতকরা ৭৩.৪ ভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরিকালীন ট্রেনিংপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১৩ সালের জরিপ অনুযায়ী অঙ্ক ও বাংলায় গ্রহণযোগ্য পারদর্শিতা অর্জন করেছিল শতকরা ২৫% ছাত্রছাত্রী। এ ক্ষেত্রে লক্ষণযোগ্য উন্নয়ন সম্ভবত এখনও অর্জিত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপে পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ না বিশ্লেষণ করে এদেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, পাঠ্যপুস্তকের মান এবং পাঠরত শিশুদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক সমাজের উৎপাদনশীল উপকরণ হিসেবে বিকশিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধির পন্থাগুলো শনাক্ত করে এ ক্ষেত্রে আমাদের আরও দ্রুত বেগে এগিয়ে যেতে হবে। দু’বছর আগে এই সরকার প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিস্তৃত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সৃষ্টির জন্য সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা সময়মতো গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত যথার্থ শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষকদের গুণগত উৎকর্ষ বাড়ানোর কোন কার্যক্রমও শনাক্ত হয়নি (দ্রষ্টব্য : দৈনিক সংবাদ, মে ১৪, ২০১৭) এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞজনদের ধারণা যে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাকে লৌকিকভাবে এখন বিস্তৃত না করে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার মান উন্নয়ন করা প্রয়োজন ও আর্থিক মিতব্যয়ী বিনিয়োগের সূত্রের অনুকূল হবে। সম্প্রতি জানা গেছে যে সরকার অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার প্রক্ষেপিত বিস্তারণ স্থগিত করেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয় যে, (১) জ্ঞান ও প্রয়োজনীয় সৃজনশীল দক্ষতার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষারত শিশুদের এগিয়ে যাওয়ার পরিধি বিদ্যমান; (২) ঝরে পরার হার বিশেষত: চতুর্থ শ্রেণী থেকে ঝরে পড়ার হার বেশি যা প্রাথমিক পর্যায়ে সৃষ্ট অবকাঠামোর ও প্রদত্ত সুবিধাদির সর্বাত্মক ব্যবহার নির্দেশ করে না; (৩) প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে উপজেলাভিত্তিক সম্পদ প্রযুক্তকরণে বৈষম্য বিদ্যমান; এসব বৈষম্য দূরীকরণের জন্যে এখন পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম শনাক্ত বা গ্রহণ করা হয়নি; (৪) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা অভিগম্যতা কেন্দ্রিক এবং স্থানীয় তত্ত্বাবধান প্রক্রিয়া বা সূত্রের অনুকূল বা সংবেদনশীল নয়; এবং (৫) প্রাথমিক স্কুলসমূহের পরিদর্শন প্রক্রিয়া ও বিষয়বস্তু অধিকতর ফলপ্রসূ হওয়ার দাবিদার। আলোচনাধীন প্রতিবেদনে এই ৫টি তথ্য ও উপাত্তের আলোকে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিবৃত সার্বিকভাবে শিক্ষায় বিনিয়োগ প্রয়োগ করণের কাঠামোয় যথা প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা সকলের বিবেচনার বৃত্তে চলে এসেছে। স্থানীয় পর্যায় থেকে অভিযোগ ও অনুযোগ এসেছে যে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ জাতীয়করণের পরে এসব বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিদর্শন ও তত্ত্বাবধানের মাত্রা ও উৎকর্ষ দু-ই কমে গেছে। এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে গড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ এক বছরে নির্ধারিত ২৪২ দিনের বিপরীতে ২২৮ দিন খোলা থাকে। ২০১৪ সালে বিদ্যালয় পরিদর্শনে গড়ে প্রায় শতকরা ১২% প্রাথমিক শিক্ষকের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ২০১২-১৩ এ সম্পাদিত জরিপে দেখা গেছে যে প্রায় শতকরা ৪৪ ভাগ শিক্ষক দেরিতে বিদ্যালয়ে আসেন। এই প্রেক্ষিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের পরিদর্শন ও কার্যক্ষম তত্ত্বাবধানের শৈলী উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ সুসংহতকরণের প্রক্রিয়ায় এদিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে হয়। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীন ও ফলপ্রসূ করার পথিকৃৎ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। তার আদর্শ অনুসরণ করে এ ক্ষেত্রে পরবর্তী পর্যায়ে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিয়েছেন তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। নিঃসন্দেহে সাম্প্রতিককালে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অবদান সকল কিছু বিবেচনা করে নিখাঁদ প্রশংসার দাবিদার। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্য সিঙ্গাপুর ছাড়া পূর্ব এশিয়ার সকল দেশের জন্যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার সকল দেশের জন্য ঈর্ষার কারণ। দেশের জনসম্পদকে দায় হিসেবে বিবেচনা না করে সম্পদ হিসেবে বাড়ানো ও যোগ্যকরণের পদক্ষেপ এ ক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনার লক্ষিত টেকসই উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। সকল কার্যক্রমকে উজ্জ্বল করেছে। আলোচনাধীন প্রতিবেদনের আলোকে তার বলিষ্ঠ ও সাহসিক পদক্ষেপসমূহকে অধিকতর কার্যক্ষম করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। এই প্রেক্ষিতে আমাদের সকলের ওপর দায়িত্ব বর্তিয়েছে তার নেতৃত্বে এই দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে আলোকিত বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রজ্বল বাতিঘরসম বিবেচনা করে সকল উন্নয়নের ক্ষেত্রে তার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া। লেখক : সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদ
×