ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা- বঙ্গবন্ধু দ্বীপ

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৭ মে ২০১৭

পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা- বঙ্গবন্ধু দ্বীপ

সোহেল তানভীর ॥ ‘বঙ্গবন্ধু দ্বীপ’ নামে বাংলাদেশে নতুন একটি দ্বীপের সন্ধান মিলেছে। দ্বীপটির চারদিকে গড়ে উঠেছে প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫০০ মিটার প্রশস্ত এক বিস্তীর্ণ সী বিচ। দ্বীপটিতে নেই কোন চোরাবালির চিহ্ন। দ্বীপটিতে পর্যটনশিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। দ্বীপটিকে মাস্টারপ্লানের আওতায় এনে ইকোট্যুরিজমের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। গবেষকরা বলছেন, প্রচার করলে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড যে কোন দেশী-বিদেশী ইকোট্যুরিস্টের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু দ্বীপের গবেষক অধ্যাপক মোঃ শহীদুল ইসলাম দ্বীপটিতে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আরও উপস্থিত ছিলেনÑ ঢাবির প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়ামুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। বাংলাদেশে দক্ষিণের জেলা খুলনার মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০ নটিক্যাল মাইল ও বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন উপকূল দুবলারচর-হিরণ পয়েন্ট থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল দূরে সাগর গভীরে জেগে উঠেছে দ্বীপটি। দ্বীপটি প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৯২ সালে। এক যুগ আগে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা দ্বীপটিকে চিনত ‘পুতনিরচর’ বলে। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামের মালেক ফরাজী নামের এক জেলে ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা থেকে দ্বীপটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’ করে একটি সাইনবোর্ডে লিখে টাঙিয়ে দেন। এরপর থেকে দ্বীপটির নাম হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড। অনেকদিন দ্বীপটির আর কোন খবর ছিল না। সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখে দ্বীপটিতে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম। দুই সহকর্মীসহ ২৯ সদস্যের একটি দল নিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তিনি। দ্বীপটি মংলা বন্দর থেকে অনেকটাই দূরে হওয়ার কারণে সেখানে পৌঁছতে তিন দিন সময় লাগে। দ্বীপটি নিয়ে ১৬ দিন তারা গবেষণা করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বীপটির চারপাশে সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জল, নানা প্রজাতির পাখি, সবুজ-শ্যামল বনাঞ্চল, সাঁতারের উপযোগী স্থান, সী বিচ ও জীববৈচিত্র্য রয়েছে, যা প্রর্যটনশিল্পের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। দীর্ঘ এ সৈকতজুড়ে কচ্ছপ, চার প্রজাতির কাঁকড়া, ষোলো প্রজাতির মোলাঙ্কা (শামুক-ঝিনুক), আট প্রজাতির প্লাঙ্কটন, ছয় প্রজাতির বেন্থিক এনেলিডা, দুই প্রজাতির বার্নাকেল ও এক প্রজাতির এসিডিয়ানর, বিভিন্ন প্রজাতির ফড়িং, প্রজাপতি, মৌমাছির দেখা মিলেছে। গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে অধ্যাপক মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, গত ২৫ বছরে দ্বীপের পরিধি অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে দ্বীপের আয়তন ৭.৮৪ কিলোমিটার, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। অন্যান্য সাগর সৈকতের তুলনায় এ সৈকতের পানি এতটাই স্বচ্ছ যে, এখানে সহজেই ভয়হীনভাবে সাঁতার কাটা যায়। তিনি বলেন, দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ লাল কাঁকড়া। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন লাল রঙের সৈকত। এ সৈকতে আমরা বিশাল জঙ্গলের সন্ধান পেয়েছি। সেখানে আমরা গবেষণা করে কোন সরীসৃপ পাইনি। সরীসৃপ বাদে আমরা সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি জীববৈচিত্র্যের সন্ধান পেয়েছি। তবে আমাদের গবেষণা স্বল্প পরিসরে হওয়ায় পুরো জঙ্গলে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষণা করা যায়নি। আমরা যতটুকু অনুসন্ধান করেছি তাতে বাঘের কোন চিহ্ন না পেলেও হরিণের চিহ্ন পেয়েছি। শহীদুল ইসলাম আরও জানান, দ্বীপের গবেষণা বিষয়ে সব কাগজপত্র আমরা সরকারের কাছে দাখিল করব। কারণ আমরা মনে করি, অন্যান্য সাগর সৈকতের তুলনায় এ সৈকতের সৌন্দর্য কোন অংশে কম নয়। এছাড়াও এ দ্বীপের আশপাশে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত কোন মানব বসতি নেই, যার কারণে দ্বীপটি অনেকটাই সুনসান। এজন্য সরকারী পর্যায়ে এ দ্বীপের আন্তর্জাতিক প্রচার প্রয়োজন। এমনকি দেশের মানুষও জানে না যে, এ দেশে এত সুন্দর দ্বীপ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দেশের মধ্যে এত সুন্দর দ্বীপ আছে, তা আমার কাছেও অজানা ছিল। বেশ কয়েকদিন আগে গবেষকদের সঙ্গে বৈঠকে আমি এ দ্বীপের কথা জানতে পারি। এ দ্বীপে পর্যটক বাড়াতে হলে সরকারী পর্যায়ে প্রচার প্রয়োজন। তবেই সেখানে পর্যটক আসবে।
×